সোহরাওয়ার্দী-নজরুল কলেজ ভাঙচুর, হাসপাতাল প্রাঙ্গণ ছাড়লো শিক্ষার্থীরা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:২১ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
দুপুর থেকে চলা ঘেরাও ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শেষে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতাল প্রাঙ্গণ ছাড়ল ডা. মাহাবুর রহমান মোল্লা কলেজসহ অংশ নেয়া অন্তত ২০টি কলেজের শিক্ষার্থীরা। এদিকে সারাদিনে সংঘর্ষে কবি নজরুল সরকারী কলেজ ও সরকারী শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
রবিবার (২৪ নভেম্বর) বিকেল ৩টা ৪০-এর দিকে শিক্ষার্থীরা চলে যায়। তবে এরপরই কবি নজরুল সরকারি কলেজ ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা লাঠি সোটা হাতে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের দিকে আসতে থাকে। এই দুই কলেজের শিক্ষার্থীদের দাবি তাদের দুইটি কলেজে ভাঙচুর চালিয়েছে ডা. মাহবুবুর রহমান কলেজসহ তাদের সঙ্গে অংশ নেয়া অন্য কলেজের হাজার হাজার শিক্ষার্থীরা।
সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থী মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, আমাদের সোহরাওয়ার্দী ও কবি নজরুল কলেজের ভিতর ঢুকে কম্পিউটার, বই খাতা, চেয়ার টেবিল ভাঙচুর করেছে। পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে তচনচ করে ফেলেছে। আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। পরীক্ষার্থী- শিক্ষক সবাই ভয়ে রুমে তালা দিয়ে থাকে। আমাদের প্রতি বিভাগে ভাঙচুর করা হয়েছে।
হামলা চালানো হয়েছে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইনিস্টিউট হাসপাতালেও। জাওয়াদ মালিক হিমেল নামে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেলের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী বলেন, আমরা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের আবাসিক শিক্ষার্থী। আমরা তো এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত না। এখানে বাইরের দেশের শিক্ষার্থী আছে। তারা আবাসিক হোস্টেলে হামলা চালিয়েছে। বাইরের দেশের শিক্ষার্থীসহ আমাদের আতঙ্কিত। বিশেষ করে মেয়ে শিক্ষার্থীরা ভয়ে আছে। হাসপাতাল থেকে রোগী বের করে দিয়েছে। তাদের কিছু হলে দায়ভার কে নিবে। এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা কিভাবে নির্দয়ভাবে আরেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায়। আমরা এর প্রতিবাদে মানববন্ধনসহ প্রয়োজনের চিকিৎসা সেবা দেয়া থেকে বিরত থাকব।
এদিকে লালবাগ জোনের ডিসি জসিম উদ্দিন বলেন, গত ১৮ তারিখে মাহবুবুর রহমান কলেজের একজন মারা যান। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যান আমরা জানতে পারি। গত বুধবার কলেজের শিক্ষার্থীরা হাসপাতালের এখানে এসেছিল। এ ঘটনায় একটা তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু এরপরেও গত বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীরা অধিক সংখ্যায় এসেছে। শিক্ষার্থীদের দাবি অবহেলাজনিত মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বার বার বলেছে আমরা শিক্ষার্থী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সঙ্গে নিয়ে তদন্ত করব। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চাপের মুখে রাখা হয়।
তিনি আরো বলেন, আজ ছাত্র প্রতিনিধি, মৃতের বাবার হাসপাতালে আসার কথা ছিল। আজ মিটিং ছিল। কিন্তু তারা আসে নাই আমরা জানকে পারি। এদিকে আজ ফের সকালে শিক্ষার্থীরা হাসপাতালে এসেছে। তারা যাত্রবাড়ি থেকে অনেক সংখ্যায় এসেছে। আজ সকাল বেলা থেকে আমরা চেয়েছি তাদের বুঝাতে। অবশেষে আমরা সংখ্যা বাড়িয়ে বিকেলে তাদের বুঝাতে সক্ষম হই তারা চলে গেছে।
গত বৃহস্পতিবার পুলিশের উপস্থিতে শিক্ষার্থীরা আহত হয়েছে প্রশ্নে তিনি আরো বলেন, শিক্ষার্থীরা যা দাবি করেছিল সেটা সত্য নয়। আজকেও কোনো আহত হয়েছে কিনা আমরা খবর পাইনি। আগামীতে হামলার কোনো আশঙ্কা আছে কিনা প্রশ্নে ডিসি বলেন, আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত এমন কোনো তথ্য নেই। শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি ঘোষণা বাদেই চলে গেছে।
এদিকে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া-পালটা ধাওয়ায় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। হেনস্থার শিকার হন সাংবাদিকরাও। হেনস্থার শিকার হয়েছেন দৈনিক ইত্তেফাকের মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার জাকির হোসেনের আইফোন ১২ প্রো, মাইক্রোফোন ভেঙে ফেলা হয়। ফোন কেড়ে নেয়া হয় দৈনিক আমাদের বার্তার প্রতিনিধি আসাদুল ইসলাম ও বাংলাদেশের খবরের জবি প্রতিনিধি জান্নাতুন নাইমের। পরবর্তীতে ঘটনার ফুটেজ ডিলিট করে ফোন দেয়া হয়। এ ছাড়া হেনস্থার শিকার হন দৈনিক কালবেলার মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার আমান নবী।
জানা যায়, ডেঙ্গু শক সিনড্রমে আক্রান্ত হয়ে ডা. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী অভিজিৎ হালদার গত ১৬ নভেম্বর সকালে হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি হন। গত ১৮ নভেম্বর হাসপাতালে মৃত্যুরবণ করেন। অভিজিৎ এইচএসসি ২৪ এর ব্যাচ ছিল। কিন্তু তার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ২০ ও ২১ নভেম্বরে হাসপাতাল অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ এদিন কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা তাদের উপর আক্রমণ করেন। শিক্ষার্থীরা বলেন, অভিজিৎকে হাসপাতাল কতৃপক্ষ ভুল চিকিৎসা দিয়ে মেরেছে।