ঘুম কম হলে কি শুক্রাণুর মান কমে যায়? যা বলছে গবেষণা
অনলাইন ডেস্ক :
প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:০০ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
কাজের চাপ, মানসিক দুশ্চিন্তা কিংবা অনিয়মিত জীবনযাপনের কারণে অনেকেরই এখন মাঝে মাঝে ঘুম কম হচ্ছে। তবে যদি দীর্ঘদিন রাতের পর রাত পর্যাপ্ত ঘুম না হয়, তাহলে তার প্রভাব পড়তে পারে শরীরের ভেতরে চলতে থাকা গুরুত্বপূর্ণ জৈবিক প্রক্রিয়াগুলোর ওপর।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘদিন ঘুমের অভাব হলে শুধু ক্লান্তি বা অবসাদই নয়, পুরুষদের ক্ষেত্রে শুক্রাণুর গুণগত মান কমে যাওয়ার ঝুঁকিও বাড়ে, যা ভবিষ্যতে বন্ধ্যত্বের কারণ হতে পারে।
ঘুম ও হরমোনের সম্পর্ক
মানুষের শরীরের একটি নিজস্ব সময়ব্যবস্থা আছে, যাকে বলা হয় জৈবিক ঘড়ি। এই ঘড়ি একটি নির্দিষ্ট ছন্দে চলে এবং ২৪ ঘণ্টা ধরে শরীরের নানা গুরুত্বপূর্ণ শারীরবৃত্তীয় কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। কখন ঘুম আসবে, কখন ঘুম ভাঙবে, কখন খিদে পাবে—সবকিছুই এই ছন্দের ওপর নির্ভরশীল। এই প্রাকৃতিক সময়ছন্দকে বলা হয় সার্কাডিয়ান রিদম বা বায়োলজিক্যাল ক্লক।
হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের গবেষকদের মতে, মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাসে থাকা হাজার হাজার নিউরনের সমন্বয়ে গঠিত সুপ্রাকিয়াসম্যাটিক নিউক্লিয়াস শরীরের কেন্দ্রীয় ঘড়ি হিসেবে কাজ করে। এই কেন্দ্রীয় ঘড়ির সঙ্গে তাল মিলিয়েই শরীরের হরমোন নিঃসরণ ও বিভিন্ন শারীরিক কার্যকলাপ পরিচালিত হয়। কিন্তু কোনো কারণে যদি এই ছন্দ বিঘ্নিত হয়, তাহলে শরীরের ভেতরে উৎপন্ন হরমোন ও প্রোটিনের ভারসাম্য নষ্ট হতে শুরু করে।
জৈবিক ঘড়ির নিয়ম অনুযায়ী, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা টানা ঘুম প্রয়োজন। এই সময়ের মধ্যেই শরীরে নানা গুরুত্বপূর্ণ হরমোন নিঃসৃত হয় এবং তাদের কার্যক্রম চলে। কিন্তু যদি এই ঘুম কমিয়ে ২ থেকে ৪ ঘণ্টায় নামিয়ে আনা হয়, তখনই সমস্যার শুরু হয়। এ সময় সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে টেস্টোস্টেরন হরমোনের ওপর।
কম ঘুমে শুক্রাণুর মান কেন কমে
হার্ভার্ডের গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত রাত জেগে কাজ করেন এবং ভোরের দিকে মাত্র চার ঘণ্টা ঘুমান, তাদের শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের স্বাভাবিক ভারসাম্য বজায় থাকে না। আর এই হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হলে শুক্রাণুর উৎপাদন কমে যায়, একই সঙ্গে শুক্রাণুর গুণগত মানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর ফল হিসেবে পুরুষদের মধ্যে বন্ধ্যত্বের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
এ ছাড়া দেহঘড়ি বিগড়ে গেলে শরীরে কর্টিসল নামের একটি হরমোনের নিঃসরণ বেড়ে যায়, যাকে সাধারণত ‘স্ট্রেস হরমোন’ বলা হয়। কর্টিসল বেড়ে গেলে টেস্টোস্টেরনের নিঃসরণ আরও কমে যায়। এর ফলে অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ার ঝুঁকিও বাড়ে, যেখানে ঘুমের মধ্যে বারবার শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়। এতে শরীরে প্রদাহ বাড়ে এবং অনিদ্রার প্রবণতাও বৃদ্ধি পায়।
দীর্ঘদিন দেহঘড়ির স্বাভাবিক ছন্দ নষ্ট থাকলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস, স্থূলতা, হৃদ্রোগ এমনকি ক্যানসারের ঝুঁকিও বাড়তে পারে। এসব সমস্যার প্রভাব পড়তে পারে শুক্রাণুর সংখ্যার ওপরও।
কী করণীয়
বিশেষজ্ঞদের মতে, সুস্থ জীবনযাপনের জন্য রাতে টানা ও পর্যাপ্ত ঘুম অত্যন্ত জরুরি। যদি ঘুম আসতে সমস্যা হয়, তাহলে নিয়মিত মেডিটেশন বা শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম উপকারী হতে পারে। এতে মানসিক চাপ কমে এবং ধীরে ধীরে ঘুমের স্বাভাবিক ছন্দ ফিরে আসতে পারে।
সূত্র : আনন্দবাজার ডটকম



