Logo
Logo
×

অর্থনীতি

খাদ্যে শতভাগ স্বয়ংসম্পূর্ণ একমাত্র দেশ গায়ানা

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ মে ২০২৫, ০১:৫২ পিএম

খাদ্যে শতভাগ স্বয়ংসম্পূর্ণ একমাত্র দেশ গায়ানা

উর্বর মাটি, প্রচুর বৃষ্টিপাত ও অনুকূল জলবায়ুর কারণে কৃষিকাজ এখানে সহজ। ছবি: ওয়েলনাও

বিশ্বের প্রায় সব দেশই কোনো না কোনো খাদ্যপণ্যের জন্য আমদানির ওপর নির্ভরশীল। তবে এই সাধারণ নিয়মের এক ব্যতিক্রম দক্ষিণ আমেরিকার ছোট দেশ গায়ানা। সম্প্রতি প্রকাশিত এক আন্তর্জাতিক গবেষণায় উঠে এসেছে, ১৮৬টি দেশের মধ্যে একমাত্র গায়ানাই এমন দেশ, যা জনগণের চাহিদা পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় সাতটি প্রধান খাদ্য উপাদান নিজেই উৎপাদন করে থাকে।

সাময়িকী নেচার ফুড-এ প্রকাশিত এই গবেষণায় বলা হয়েছে, ফল, সবজি, দুগ্ধজাত পণ্য, মাছ, মাংস, উদ্ভিজ্জ প্রোটিন ও শর্করার উৎস—এই সাতটি বিভাগেই গায়ানা স্বয়ংসম্পূর্ণ।

দক্ষিণ আমেরিকার উত্তর-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ গায়ানা তুলনামূলকভাবে কম জনবসতিপূর্ণ একটি দেশ। এর জনসংখ্যা ৮ লাখের কিছু বেশি। বিস্তীর্ণ ও উর্বর কৃষিজমি, পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত ও অনুকূল জলবায়ু কৃষিকে এখানে সহজ ও উৎপাদনক্ষম করে তুলেছে।

গায়ানার অর্থনীতি মূলত কৃষি, খনিজসম্পদ এবং সাম্প্রতিক সময়ের তেল ও গ্যাস উত্তোলনের ওপর নির্ভরশীল হলেও, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা দেশটিকে আন্তর্জাতিক আলোচনার কেন্দ্রে এনেছে। ধান, আখ, ফলমূল, সবজি ও মাছ গায়ানার প্রধান কৃষিপণ্য। স্থানীয় চাহিদা পূরণে কৃষিকেন্দ্রিক নীতির ফলে দেশটি সাতটি খাদ্য উপাদানেই আত্মনির্ভরশীল হতে পেরেছে বলে গবেষকদের মত।

জার্মানির গটিনজেন বিশ্ববিদ্যালয় ও যুক্তরাজ্যের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এই গবেষণা পরিচালনা করেন। গবেষণায় প্রতিটি দেশের খাদ্য উৎপাদনের পরিমাণ ও সেই দেশের নাগরিকদের পুষ্টির চাহিদা (বিশ্ব প্রকৃতি তহবিলের ‘লাইভওয়েল ডায়েট’ অনুযায়ী) তুলনা করে দেখা হয়।

গবেষণায় দেখা যায়, বিশ্বের ৬৫ শতাংশ দেশ মাংস ও দুগ্ধজাত পণ্য বেশি উৎপাদন করলেও অধিকাংশ দেশেই পুষ্টিকর উদ্ভিজ্জ খাবারের ঘাটতি রয়েছে। মাত্র ২৪ শতাংশ দেশ পর্যাপ্ত সবজি উৎপাদন করতে পারে, আর উদ্ভিজ্জ প্রোটিন ও শর্করার উৎসে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশের সংখ্যা অর্ধেকেরও কম।

গায়ানার পাশাপাশি চীন ও ভিয়েতনাম সাতটির মধ্যে ছয়টি খাদ্য উপাদানে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। বিশ্বব্যাপী প্রতি সাতটি দেশের মধ্যে মাত্র একটি দেশ পাঁচটি বা তার বেশি খাদ্য উপাদানে স্বয়ংসম্পূর্ণ।

অন্যদিকে ছোট দ্বীপরাষ্ট্র, আরব উপদ্বীপের দেশ এবং নিম্ন আয়ের বহু দেশ খাদ্য আমদানির ওপর মারাত্মকভাবে নির্ভরশীল। আফগানিস্তান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরাক, ম্যাকাও, কাতার ও ইয়েমেন—এই ছয়টি দেশ কোনো একটি খাদ্য উপাদানেও স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়।

গবেষণার প্রধান লেখক, গটিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. জোনাস স্টেহল বলেন, স্বয়ংসম্পূর্ণতা না থাকলেই তা খারাপ এমন নয়। অনেক দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ খাদ্য উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত নয়—যেমন পর্যাপ্ত বৃষ্টি, উর্বর মাটি বা অনুকূল তাপমাত্রার অভাব থাকতে পারে।

তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা না থাকলে বৈশ্বিক সংকট—যেমন যুদ্ধ, খরা বা রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা—মুহূর্তেই একটি দেশের খাদ্য নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। কোভিড-১৯ মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর এই উদ্বেগ আরও প্রকট হয়েছে।

ড. স্টেহল বলেন, এই নতুন আগ্রহের পেছনে জাতীয়তাবাদী রাজনীতির উত্থান এবং বিদেশি নির্ভরতা কমানোর প্রবণতা কাজ করছে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো— জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষায় টেকসই ও স্থিতিশীল খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলা।

তথ্যসূত্র: বিবিসি সায়েন্স ফোকাস

Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher

Major(Rtd)Humayan Kabir Ripon

Managing Editor

Email: [email protected]

অনুসরণ করুন