অলিম্পিকের দ্বৈতনীতি
যুদ্ধাপরাধে নিষিদ্ধ রাশিয়া-বেলারুশ, অথচ অংশ নিচ্ছে ইসরায়েল!
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ৩০ জুলাই ২০২৪, ১১:২৯ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানোর কারণে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির (আইওসি) যে নীতিমালা তার সঙ্গে রাশিয়ার অবস্থান সাংঘর্ষিক বিধায়, তাদের অলিম্পিক কমিটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে আইওসি। আবার ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধকে সমর্থন করার কারণে একইভাবে নিষিদ্ধ বেলারুশের অলিম্পিক কমিটিও।
এই নিষেধাজ্ঞার ফলে প্যারিস অলিম্পিকে অংশ নিতে পারছে না রাশিয়া এবং বেলারুশ। এবারের প্যারিস অলিম্পিকে মোট ২০৬টি দল অংশ নিচ্ছে। এরমধ্যে ২০৪টি হচ্ছে জাতীয় অলিম্পিক কমিটি (এনওসি)। ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিক কমিটি প্রতিটি দেশকে একটি করে এনওসি হিসেবে গণনা করে থাকে।
২০৬টির মধ্যে ২০৪টি এনওসি এবং দুটি অতিরিক্ত দল অংশ নিচ্ছে এবারের অলিম্পিকে। অতিরিক্ত দুটি দলের একটি হলো উদ্বাস্তুদের দল এবং অন্যটি হলো ইন্ডিভিডুয়াল নিউট্রাল অ্যাথলেট (ব্যক্তিগত নিরপেক্ষ অ্যাথলেট)। সংক্ষেপে আইওসি এদের নাম দিয়ে এআইএন। আইওসি থেকে তাদের একটি পতাকাও তৈরি করে দেয়া হয়েছে।
মূলত রাশিয়া এবং বেলারুশের অ্যাথলেটরাই নিজেদের দেশের নাম ও পতাকাছাড়া অংশ নিচ্ছে অলিম্পিকে। তাদেরকেই নামকরণ করা হয়েছে এআইএন হিসেবে। রাশিয়া এবং বেলারুশের যে সব অ্যাথলেট ইউক্রেনে নিজ দেশের আগ্রাসন বা যুদ্ধকে সমর্থন করে না, তারাই মূলত অলিম্পিক গেমসে অংশ নেয়ার সুযোগে পেয়েছে।
বেলারুশের ১৭জন এবং রাশিয়ার ১৫জন অ্যাথলেট মোট ১০টি ডিসিপ্লিনে অংশ নিচ্ছে। এদেরকে বাছাই করেছে সংশ্লিষ্ট ডিসিপ্লিনের আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং অনুমোদন দিয়েছে আইওসির নির্ধারিত কমিটি। অর্থাৎ, যে সব অ্যাথলেট নিজ দেশের যুদ্ধকে সমর্থন করে না, তারাই সুযোগ পেয়েছে এআইএনের ব্যানারে অলিম্পিকে অংশ নেয়ার।
তবে এদের জন্য শর্ত ছিল। অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্যারেডে অংশগ্রহণ কিংবা পদক তালিকায় দলীয়ভাবে তাদের নাম উঠবে না। শুধুমাত্র ব্যক্তিগত পদক তালিকায় হয়তো নাম থাকবে।
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়েছিলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। গত ফেব্রুয়ারিতে ইন্টারন্যাশনাল সেভ দ্য চিলড্রেন হিসেব দিয়েছিলো প্রায় সাড়ে ১০ হাজার সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছিলো।
অথচ ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় হামাস। এরপর ফিলিস্তিনের গাজা এবং রাফাহ’র ওপর নারকীয় হত্যাজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এখনও পর্যন্ত নিরপাধ ৪০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণে। যেখানে হত্যা করা হয়েছে প্রায় ১৫ হাজারের বেশি শিশুকে। এখনও প্রতিদিন কয়েকশ নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করছে ইসরায়েলি বাহিনী।
অথচ, এখানেই দ্বৈতনীতি দেখালো আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনকে তারা চিহ্নিত করেছে অলিম্পিকের নীতি বিরুদ্ধ হিসেবে। অথচ, ইসরায়েলকে তারা অলিম্পিকের নীতি বিরোধী হিসেবে মোটেও চিহ্নিত করেনি। প্যারিস অলিম্পিকে অন্যতম এনওসি (ন্যাশনাল অলিম্পিক কমিটি) হিসেবে অংশ নেয়ার সুযোগ দিয়েছে।
এবার প্যারিস অলিম্পিকে ১৬ ডিসিপ্লিনের ৬৬টি ইভেন্টে অংশ নিচ্ছে ইসরায়েলের ৮৮জন অ্যাথলেট। আইওসির মতে, এসব অ্যাথলেট বা ইসরায়েলের এনওসি কিংবা ইসরায়েল রাষ্ট্রটির যুদ্ধাপরাধ অলিম্পিক নীতিমালার বিরুদ্ধে যায়নি।
ইসরায়েল ফুটবল দল এবারের অলিম্পিক ফুটবলে খেলার সুযোগ পেয়েছে। আইওসির কাছে ইসরায়েল ফুটবল দলকে নিষিদ্ধ করার জন্য মরক্কোসহ অনেক দেশই আবেদন জানিয়েছিলো। কিন্তু আইওসি তাতে কোনো কর্ণপাত করেনি।