Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

আবারও অশান্ত মণিপুর

‘মণিপুর’ নাম মুছে ফেলাকে কেন্দ্র করে দানা বাঁধছে উত্তেজনা

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ২৯ মে ২০২৫, ১২:৩৮ এএম

‘মণিপুর’ নাম মুছে ফেলাকে কেন্দ্র করে দানা বাঁধছে উত্তেজনা

ছবি : সংগৃহীত

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুর ফের চরম উত্তেজনার মুখে। সরকারি বাস থেকে 'মণিপুর' শব্দ মুছে ফেলার নির্দেশকে কেন্দ্র করে রাজ্যজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে বিক্ষোভ ও সংঘর্ষ।

সম্প্রতি উখরুল জেলায় বিরল প্রজাতির শিরুই লিলি ফুলকে ঘিরে আয়োজিত উৎসবে যোগ দিতে সাংবাদিকদের সরকারি বাসে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। কিন্তু পথে গোয়ালতাবি চেকপোস্টে নিরাপত্তা বাহিনী ওই বাসে লেখা “মণিপুর রাজ্য পরিবহন” থেকে ‘মণিপুর’ শব্দটি ঢেকে দিতে বলে বলে অভিযোগ উঠে। নিরাপত্তা বাহিনীর দাবি ছিল, তারা উচ্চপর্যায় থেকে আদেশ পেয়েছে। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই শুরু হয় তীব্র প্রতিক্রিয়া ও প্রতিবাদ।

এই ঘটনার জেরে বিভিন্ন শহরে শুরু হয় মিছিল, মানববন্ধন ও গণঅবস্থান। সাংবাদিকরা ইম্ফলে ফিরে এসে প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ দেখান এবং রাজ্যপালের কাছে একটি স্মারকলিপি জমা দেন। তারা প্রশ্ন তোলেন—একটি রাজ্যের নিজস্ব বাস থেকে সেই রাজ্যের নাম মুছে ফেলতে বলা কতটা যুক্তিযুক্ত? কেন মণিপুরকে ভারতের অন্যান্য রাজ্য থেকে আলাদা ভাবা হচ্ছে?

এ ঘটনার প্রতিবাদে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় যেমন বিষ্ণুপুর, থোবাল, খুরাই ও কোংবা জুড়ে চলছে ধারাবাহিক আন্দোলন। রাজভবনের সামনে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে, দিল্লি থেকে ফেরার পর রাজ্যপাল অজয় কুমার ভাল্লাকে মাত্র ৬-৭ কিলোমিটারের দূরত্বে বিমানবন্দর থেকে রাজভবনে ফিরতে হয় সামরিক হেলিকপ্টারে।

উল্লেখ্য, মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং পদত্যাগ করার পর থেকে রাজ্যটিতে রাষ্ট্রপতি শাসন চলছে এবং রাজ্যের প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করছেন রাজ্যপাল অজয় কুমার ভাল্লা।

মণিপুরের বিশিষ্ট সাংবাদিক মায়ুম শর্মা বলেন, “শিরুই লিলি উৎসব দুই বছর বন্ধ থাকার পর এবার ফের আয়োজন করা হলেও নিরাপত্তা বাহিনীর এমন আচরণে জনমনে চরম ক্ষোভ জন্মেছে।” তার মতে, এই ঘটনার প্রতীকী গুরুত্ব রয়েছে, যা রাজ্যের আত্মপরিচয় ও সংবেদনশীল পরিস্থিতিকে নাড়িয়ে দিয়েছে।

ঘটনার প্রতিবাদে মেইতে জনগোষ্ঠীর সংগঠন ‘কোঅর্ডিনেশন কমিটি অন মণিপুর ইন্টিগ্রিটি’ রাজ্যপালের প্রকাশ্য ক্ষমা প্রার্থনার দাবি জানিয়েছে। একই সঙ্গে প্রশাসনিক ব্যর্থতার দায়ে নিরাপত্তা উপদেষ্টা, মুখ্যসচিব ও পুলিশের মহাপরিচালকের পদত্যাগ দাবি করেছে।

রোববার সংগঠনটির পক্ষ থেকে ‘আইন অমান্য আন্দোলন’-এর ডাক দেওয়া হয়। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে চলা এই বিক্ষোভ আরও একবার রাজ্যকে উত্তপ্ত করে তুলেছে। ইম্ফলের কাংলা গেট এলাকায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয় এবং এতে বেশ কয়েকজন আহত হন।

পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে এবং বিশ্লেষকদের মতে, রাজ্য প্রশাসনের প্রতি জনগণের আস্থার সঙ্কট আরও ঘনীভূত হচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, কেন্দ্র ও রাজ্য প্রশাসন কীভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং জনমনে জন্ম নেওয়া এই বিভ্রান্তি ও অসন্তোষ দূর করে মণিপুরে স্থিতিশীলতা ফেরায়।

ওই সংগঠনের ডাকা ৪৮ ঘণ্টার বন্ধের প্রভাব পড়ে মেইতে অধ্যুষিত এলাকায়। কোঅর্ডিনেশন কমিটি অন মণিপুর ইন্টিগ্রিটি আহ্বায়ক খুরাইজাম আতৌবা বিবিসিকে বলেছেন, ‘‘একটি রাজ্যের নাম ঢেকে বা মুছে দিতে বলা সেই রাজ্যের মর্যাদার পরিপন্থি। রাজ্যের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে অপমান করা হয়েছে। প্রশাসন রাজ্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। তাই রাজ্যপাল ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত আমাদের প্রতিবাদ চলবে।’’

কোঅর্ডিনেশন কমিটি অন মণিপুর ইন্টিগ্রিটির পাশাপাশি অন্যান্য সংগঠনও বিক্ষোভ কর্মসূচিতে যোগ দেয়। পূর্ব ইম্ফলের খুরাইয়ে বিক্ষোভকারী নারীদের একটি দল জেলা প্রশাসকের অফিস পর্যন্ত মিছিল করে বিক্ষোভ দেখায়। রাজ্যপালকে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানায়। ইম্ফল পশ্চিমেও একই চিত্র দেখা গেছে।

এরই মাঝে, সোমবার দিল্লি থেকে ইম্ফলে ফেরার কথা ছিল রাজ্যপালের। বিমানবন্দর থেকে রাস্তার দু’পাশে মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। বিক্ষোভকারীরা তিদ্দিম রোডের কোকাইথেল এলাকায় জড়ো হয়ে তিন কিলোমিটার দূরে রাজভবনের দিকে মিছিল করার পরিকল্পনা করে। কিন্তু পুলিশ বাধা দেয়।

বিমান বন্দর থেকে বেরানোর রাস্তার দু'দিকে বিক্ষোভকারীদের জমায়েত দেখা দেয়। শেষ পর্যন্ত ইম্ফল বিমানবন্দর থেকে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে করে রাজ্যপালকে কাংলা ফোর্টে নিয়ে যাওয়া হয়। সাংবাদিক ডেভিড মায়ুম বলেন, বিমানবন্দর থেকে রাজভবনের দূরত্ব খুবই কম। কিন্তু পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর ছিল যে সেনাবাহিনী ঝুঁকি নিতে চায়নি।

Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher

Major(Rtd)Humayan Kabir Ripon

Managing Editor

Email: [email protected]

অনুসরণ করুন