পাকিস্তানে সামরিক হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০১:১৭ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
জম্মু ও কাশ্মিরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। দুই দেশের মধ্যে সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা দ্রুত বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ উভয়পক্ষকে সংযম দেখানোর এবং সংকট সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে।
তবে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারত এখন উত্তেজনা প্রশমনের বদলে পাকিস্তানে সামরিক পদক্ষেপের প্রস্তুতি নিচ্ছে। হামলার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিশ্বের এক ডজনেরও বেশি দেশের নেতাদের সঙ্গে ফোনালাপ করেছেন এবং দিল্লিতে অবস্থিত শতাধিক কূটনৈতিক মিশনের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনায় রয়েছেন। তবে এই প্রচেষ্টা আন্তর্জাতিক সহায়তা চাওয়ার জন্য নয়, বরং পাকিস্তানে সামরিক অভিযানের যৌক্তিকতা তুলে ধরার জন্য করা হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন কূটনীতিকরা।
কাশ্মিরে হামলার জেরে মোদি সরাসরি পাকিস্তানের নাম উল্লেখ না করলেও "সন্ত্রাসী আস্তানাগুলো ধ্বংস" এবং "কঠোর শাস্তি" দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ইতোমধ্যে দুই দেশের সীমান্ত এলাকায় কয়েক রাত ধরে গোলাগুলির খবর পাওয়া গেছে। একই সঙ্গে কাশ্মিরে নিরাপত্তা বাহিনী ব্যাপক ধরপাকড় চালিয়ে শত শত মানুষকে গ্রেপ্তার করেছে।
ভারত এ ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কোনও সুনির্দিষ্ট সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর নাম ঘোষণা করেনি, যদিও পাকিস্তানের জড়িত থাকার বিষয়ে কিছু প্রযুক্তিগত প্রমাণ পাওয়ার দাবি করছে। অন্যদিকে পাকিস্তান সরকার হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেছে।
ভারত নদীর পানিপ্রবাহ বন্ধ করা, পাকিস্তানি কূটনৈতিকদের বহিষ্কার এবং পাকিস্তানি নাগরিকদের দেশত্যাগের নির্দেশসহ একাধিক কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান সীমান্তে যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভারত ও পাকিস্তান পরমাণু শক্তিধর হওয়ায় সামরিক সংঘাত হলে তা ভয়াবহ বিপর্যয়ে রূপ নিতে পারে। তবে ভারতের বাড়তে থাকা কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তি আন্তর্জাতিক চাপের প্রভাব কমিয়ে দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্যে ভারতের সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ের প্রতি সমর্থন জানালেও, ট্রাম্প প্রশাসন দক্ষিণ এশিয়াকে কম অগ্রাধিকার দিচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে, কারণ এখনো ভারতে কোনো মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিয়োগ হয়নি।
ইরান ও সৌদি আরব শান্তির আহ্বান জানালেও বড় শক্তিগুলো বর্তমানে অন্য সংকট নিয়ে ব্যস্ত। ফলে ভারত এই পরিস্থিতিতে অপেক্ষাকৃত বেশি স্বাধীনভাবে পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ দেখছে।
বিশ্লেষক ড্যানিয়েল মার্কি সতর্ক করে বলেছেন, উভয় পক্ষ নিজেদের সংকট সামলানোর সক্ষমতা অতিরঞ্জিত করে দেখাচ্ছে, ফলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। ২০১৯ সালের কাশ্মির সংঘাতের সময়ের মতো এবারও পরিস্থিতি একই রকম রূপ নিতে পারে, তবে হামলাকারী গোষ্ঠী সম্পর্কে এখনও স্পষ্ট ধারণা মেলেনি।
ভারতের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিব শঙ্কর মেনন বলছেন, মোদি সরকারের এখন সামরিক পদক্ষেপ ছাড়া বিকল্প কম রয়েছে। তবে তিনি আশাবাদী, দুই পক্ষ সংঘাত নিয়ন্ত্রিত রাখবে।
তবে কূটনীতিকরা সতর্ক করে বলেছেন, কেবল অতীতের রেকর্ডের ওপর নির্ভর করে পরমাণু অস্ত্রধারী প্রতিবেশীর সঙ্গে যুদ্ধ শুরু করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত হতে পারে।



