বিশ্বের ৮৪ শতাংশ প্রবালপ্রাচীর রঙ হারাচ্ছে
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৫৩ এএম
গ্রেট ব্যারিয়ার রিফে তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রভাব: এই ছবিতে ২০২৪ সালে গ্রেট ব্যারিয়ার রিফে তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে প্রবাল ব্লিচিংয়ের চিত্র দেখা যায়।
বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবে পৃথিবীর প্রায় ৮৪ শতাংশ প্রবালপ্রাচীর ব্লিচিংয়ের শিকার হয়েছে, যা প্রবালগুলোর মৃত্যুঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক প্রবাল প্রাচীর উদ্যোগ জানিয়েছে, এটি বিশ্বের ইতিহাসে প্রবাল ব্লিচিংয়ের সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা।
২০২৩ সালের তাপমাত্রা বৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় শুরু হওয়া এই সংকট ২০২৪ সালে তীব্রতর হয়েছে। মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি জানায়, এবার চতুর্থবারের মতো বিশ্বব্যাপী প্রবাল ব্লিচিংয়ের ঘটনা ঘটেছে। আশির দশক থেকে ঝুঁকির ইঙ্গিত মিললেও নব্বইয়ের দশক থেকে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে শুরু করে।
১৯৯৮ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্বজুড়ে প্রবালপ্রাচীর ব্লিচ হয়। এরপর ২০১৪-১৭ সাল পর্যন্ত দুই-তৃতীয়াংশ প্রবাল রঙ হারায়। এবারও এমনই এক মারাত্মক অবস্থায় পৌঁছেছে এই প্রাকৃতিক রত্নগুলো।

যুক্তরাষ্ট্রের এনওএএ-এর প্রধান পর্যবেক্ষক ও আন্তর্জাতিক প্রবালপ্রাচার সোসাইটির নির্বাহী সম্পাদক মার্ক একিন বলেন, এই তাপদাহ বিশ্বের সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের ভবিষ্যৎ বদলে দিতে চলেছে। এর প্রভাব পড়বে পৃথিবীর সামগ্রিক চেহারাতেই।
২০২৪ সাল ছিল ইতিহাসের উষ্ণতম বছর। সমুদ্রের তলদেশে গড় তাপমাত্রা পৌঁছেছে ২০.৮৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। উল্লেখ্য, প্রবালপ্রাচীর হচ্ছে এক-চতুর্থাংশ সামুদ্রিক জীবের আবাসস্থল এবং একে 'সমুদ্রের রেইন ফরেস্ট' হিসেবেও বিবেচনা করা হয়।
তাপমাত্রা বাড়ার ফলে প্রবালের মধ্যে থাকা রঙিন শৈবাল বের হয়ে যায়, যা প্রবালকে জীবিত রাখে। ফলে প্রবালগুলো সাদা হয়ে যায় এবং ধীরে ধীরে মারা যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়ে।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রবালপ্রাচীর 'গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ'ও এই ব্লিচিং থেকে রক্ষা পায়নি। গত ৯ বছরে সেখানে সবচেয়ে বড় ব্লিচিংয়ের ঘটনা ঘটেছে।
অস্ট্রেলিয়ার সামুদ্রিক বিজ্ঞানী ড. ব্রিটা শ্যাফেল বলেন, যারা জীবনের অনেকটা সময় এসব প্রবাল রক্ষায় ব্যয় করেছেন, তাদের জন্য এটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক।
তবে আশার খবরও আছে। বিভিন্ন দেশে প্রবাল পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণের কাজ চলছে। সিচেলিস উপকূল থেকে সংগৃহীত প্রবাল জু-তে সংরক্ষণ করা হচ্ছে এবং ফ্লোরিডার একটি প্রকল্পে আক্রান্ত প্রবালগুলোকে সুস্থ করে সমুদ্রে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
তবুও, বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই সংকটের স্থায়ী সমাধান জলবায়ু পরিবর্তনের মূল কারণ—গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাস করা ছাড়া সম্ভব নয়। জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো বন্ধ না করলে কোনো প্রচেষ্টাই স্থায়ী ফল আনবে না।

জিসিআরএম-এর গবেষক মেলাইন ম্যাকফিল্ড বলেন, মানুষের কর্মকাণ্ডই এই বিপর্যয়ের মূল কারণ। এখনই সচেতন না হলে পরিণতি হবে ভয়াবহ।
এই তথ্য এমন এক সময় সামনে এলো, যখন যুক্তরাষ্ট্রে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বাড়িয়ে অর্থনীতি চাঙ্গা করার ইঙ্গিত দিচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, যা পরিবেশবাদীদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে।
এই সংকট এখন শুধু পরিবেশগত নয়, বরং মানব সভ্যতার ভবিষ্যৎ নিয়েই বড় প্রশ্ন তুলে ধরেছে।



