আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ এক আবাসন ব্যবসায়ী আবদুল মোতালিফের কাছ থেকে যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক লন্ডনে একটি ফ্ল্যাট উপহার পেয়েছিলেন। ফ্ল্যাটটির জন্য টিউলিপকে কোনো অর্থ পরিশোধ করতে হয়নি। 

ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যের ভূমি নিবন্ধনসংক্রান্ত নথিপত্র যাচাই করে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

২০০৪ সালে বিনামূল্যে পাওয়া লন্ডনের কিংস ক্রস এলাকার দুই বেডরুমের ওই ফ্ল্যাটটি এখনো টিউলিপের মালিকানায় রয়েছে। ২০০১ সালের জানুয়ারিতে ফ্ল্যাটটি কেনা হয় ১ লাখ ৯৫ হাজার পাউন্ডে। গত আগস্ট মাসে ওই ভবনেই একটি ফ্ল্যাট বিক্রি হয় ৬ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ডে।

টিউলিপ সিদ্দিক বর্তমানে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিবিষয়ক মিনিস্টার হিসেবে দেশটির আর্থিক খাতে দুর্নীতি বন্ধের দায়িত্বে আছেন। তিনি বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে।

সম্প্রতি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে টিউলিপকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে যুক্তরাজ্যের মন্ত্রিসভা কার্যালয়ের প্রোপ্রাইটি অ্যান্ড এথিকস টিম (পিইটি)। তবে তিনি দুর্নীতির সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থপাচার করে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সিঙ্গাপুরে সম্পত্তি কেনার অভিযোগ রয়েছে।

টিউলিপের মুখপাত্র দাবি করেছেন, লন্ডনে ফ্ল্যাট উপহার নিয়ে টিউলিপ কোনো অন্যায় করেননি। আবদুল মোতালিফ কিংস ক্রসের ওই ফ্ল্যাট কেনার কথা স্বীকার করেছেন, তবে পরে সেটি নিয়ে কী করেছেন, তা নিয়ে কিছু বলতে চাননি।

ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আবাসন ব্যবসায়ী আবদুল মোতালিফের দুর্দিনে টিউলিপের মা-বাবা তাকে আর্থিক সহায়তা করেছিলেন। কৃতজ্ঞতাস্বরূপ তিনি টিউলিপকে নিজের মালিকানায় থাকা একটি সম্পত্তি দিয়েছিলেন।

যুক্তরাজ্যের ভোটার তালিকার তথ্য অনুযায়ী, টিউলিপ কিংস ক্রস ফ্ল্যাট পাওয়ার পর কিছুদিন সেখানে ছিলেন। পরে তার ভাইবোনরা বেশ কয়েক বছর সেখানে বসবাস করতেন। এমপি হওয়ার জন্য টিউলিপ তার হলফনামায় দুটি ফ্ল্যাটের ভাড়া থেকে আসা আয়ের কথা ঘোষণা করেছেন।

বর্তমানে ৭০ বছর বয়সী আবদুল মোতালিফ দক্ষিণ-পূর্ব লন্ডনে বসবাস করেন। ভোটার নিবন্ধনসংশ্লিষ্ট নথি থেকে জানা গেছে, কিংস ক্রস এলাকার ওই ফ্ল্যাট টিউলিপকে দেওয়ার আগে মঈন গণি নামের এক আইনজীবীকে সেখানে থাকতে দিয়েছিলেন আবদুল মোতালিফ। মঈন গণির সঙ্গে শেখ হাসিনার ছবি রয়েছে, তবে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি

মোতালিফ এবং মজিবুল ইসলাম নামের আরেক ব্যক্তি একই ঠিকানায় বসবাস করেন। মজিবুলের বাবা ২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন।

যুক্তরাজ্যের ভূমি নিবন্ধনসংক্রান্ত নথিপত্র অনুযায়ী, টিউলিপ যুক্তরাজ্যে এমপি নির্বাচিত হওয়ার আগেই কিংস ক্রসের ওই ফ্ল্যাট পান। এর অর্থ হলো নির্বাচনে দাঁড়ানোর জন্য তাকে এই ফ্ল্যাটের ব্যাপারে কোনো তথ্য দিতে হয়নি।