ছবি: সংগৃহীত
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে হামলা আরো জোরদার করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) উপত্যকার বিভিন্ন এলাকাজুড়ে ইসরায়েলের বর্বর হামলায় আরো ৪২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো অনেকে।
গাজার মেডিকেল সূত্রের বরাত দিয়ে আলজাজিরা আরবি জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার মধ্যরাতেও উপত্যকাটিতে মুহুর্মুহু বিমান হামলা চালায় দখলদাররা। এতে একদিনে প্রাণ হারান অনেকে।
আলজাজিরা বলেছে, ইসরায়েলি বাহিনী মধ্য গাজায় বোমাবর্ষণ জোরদার করেছে। এছাড়া উপত্যকার উত্তর ও দক্ষিণের গভীরে ইসরায়েলি বাহিনীর ট্যাঙ্কগুলো অগ্রসর হচ্ছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তর গাজা উপত্যকার বেইত লাহিয়ার একটি বাড়িতে এবং কামাল আদওয়ান হাসপাতালের কাছে দুটি বিমান হামলায় ছয়জন নিহত হয়েছে। দক্ষিণে খান ইউনিসে ইসরায়েলি হামলায় আরো চারজন নিহত হয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরাইলি হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ৪৪ হাজার ৩৩০ জনে ছাড়িয়েছে। আহত হয়েছে আরও ১ লাখ ৪ হাজার ৯৩৩ জন।
এদিকে গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য ইসরায়েল প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। তবে যুদ্ধ শেষ হয়নি বলে দেশটির সংবাদমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে মন্তব্য করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার লেবাননে ইসরায়েলিদের যুদ্ধবিরতির চুক্তির পর এই প্রথম টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, হামাস যতদিন ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দেবে না ততদিন পর্যন্ত গোষ্ঠীটির বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাবে তারা।
অন্যদিকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে ইসরায়েলি বাহিনী লেবাননে বেশ কয়েকবার হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। তবে হিজবুল্লাহ যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে বলে পাল্টা দাবি ইসরায়েলের। বৃহস্পতিবার সকালে সীমান্ত বরাবর ছয়টি এলাকায় ইসরায়েলি সেনারা হামলা চালায়। লেবাননের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম এবং দেশটির নিরাপত্তা সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পর ইসরায়েলের বিপক্ষে নিজেদের জয়ী দাবি করেছে হিজবুল্লাহ। এমনকি ইসরায়েল যদি নতুন করে হামলা চালায় তার জবাব দিতে প্রস্তুত বলেও জানিয়েছে গোষ্ঠীটি।
গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন হামলার পর থেকেই গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী বিমান ও স্থল হামলা অব্যাহত রেখেছে। এসব হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ ও গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে।
এদিকে, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ইসরায়েল থেকে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেও গাজায় হামলা অব্যাহত রেখেছে। গাজার প্রায় ২০ লাখ মানুষ নিজেদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। জাতিসংঘের তথ্যানুযায়ী, গাজায় ইসরায়েলি হামলার কারণে প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের সংকটের মধ্যে গাজার মানুষ এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থায় রয়েছেন।
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে ইসরায়েল।
তবে নেতানিয়াহু স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, হামাসকে পুরোপুরি দুর্বল ও অকার্যকর করা এবং জিম্মিদের মুক্ত করার আগ পর্যন্ত অভিযান চলবে গাজায়।