সুইস ব্যাংক থেকে বিপুল অর্থ তুলে নিচ্ছেন বাংলাদেশিরা
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২০ জুন ২০২৪, ১০:২৫ পিএম
গত বছর সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের আমানতের পরিমাণ সাড়ে ৫ কোটি সুইস ফ্রাঁ থেকে কমে ১ কোটি ৮০ লাখ ফ্রাঁ হয়েছে। ছবি : সংগৃহীত
গত এক বছরে নজিরবিহীন গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে বাংলাদেশিদের অর্থ তুলে নেয়ার পরিমাণ। গত বছরে দেশটির ব্যাংকগুলো থেকে বাংলাদেশিরা তাদের বিপুল পরিমাণ আমানত তুলে নিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (২০ জুন) সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের আমানতের পরিমাণ সাড়ে ৫ কোটি সুইস ফ্রাঁ থেকে কমে ১ কোটি ৮০ লাখ ফ্রাঁ হয়েছে। দেশটির ব্যাংকগুলো থেকে বাংলাদেশিদের অর্থ তুলে নেয়ার এই গতিকে তীব্র বলা হচ্ছে।
গত কয়েক বছর ধরেই বাড়ছে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংক থেকে বাংলাদেশিদের অর্থ তুলে নেয়ার হার। এর আগে, এসএনবির ২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২১ সালেও সুইস ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের আমানতের পরিমাণ ছিলো ৮৭ কোটি ১১ লাখ সুইস ফ্রাঁ। কিন্তু পরের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে তা কমে ৫ কোটি ৫০ লাখ ফ্রাঁতে দাঁড়ায়।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে এসএনবি বলেছে, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের আমানত ৫ কোটি ৫০ লাখ ফ্রাঁ থেকে কমে ১ কোটি ৮০ লাখ ফ্রাঁ হয়েছে। প্রতি ফ্রাঁ ১৩১ টাকা ধরলে এর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ২৩৮ কোটি টাকা।
প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০২১ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা রাখা অর্থের পরিমাণ ৮৭২ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঁতে পৌঁছায়। যা দেশটির ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ পরিমাণ অর্থ জমা।
তবে ২০২০ সালে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের জমা অর্থের পরিমাণ ২০১৯ সালের তুলনায় কম ছিলো। ওই বছর সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ ছিলো ৫৬ কোটি ৩০ লাখ সুইস ফ্রাঁ; যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫ হাজার ২০৩ কোটি টাকার বেশি।
তার আগের বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে দেশটির বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা করা অর্থের পরিমাণ ছিলো ৬০ কোটি ৩০ লাখ ফ্রাঁ। ২০১৮ সালে এই অর্থের পরিমাণ ছিলো ৬২ কোটি সুইস ফ্রাঁ। আর ২০১৭ সালে এর পরিমাণ ছিলো ৬৬ কোটি ১৯ লাখ সুইস ফ্রাঁ।
এদিকে, বাংলাদেশের প্রতিবেশী ভারতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও নাগরিকের সুইস ব্যাংকে অর্থ আমানতের হার ২০২৩ সালে প্রায় ৭০ শতাংশ কমেছে যা গত চার বছরের মধ্যে ভারতীয়দের আমানতের পরিমাণ সর্বনিম্ন।
আমানত হ্রাস পাওয়ার পরও সুইস ব্যাংকে ভারতীয়দের অর্থের পরিমাণ ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন সুইস ফ্রাঁতে দাঁড়িয়েছে; যা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৯ হাজার ৭৭১ কোটি রুপি। এ নিয়ে সুইস ব্যাংকে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ও নাগরিকদের আমানত টানা দ্বিতীয়বারের মতো কমেছে।
সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান মতে, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের মোট দায়ের মধ্যে ব্যক্তিগত, ব্যাংক এবং অন্যান্য উদ্যোগের আমানতসহ সব ধরনের তহবিল অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের হাজার হাজার মানুষ সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বৈধ-অবৈধ পথে উপার্জিত অর্থ গচ্ছিত রাখেন। দেশটির কঠোর গোপনীয় ব্যাংকিং নীতির কারণে সারা দুনিয়ার মানুষ সেখানে অর্থ জমা রাখেন।
সুইজারল্যান্ডের আইনে গ্রাহকদের গোপনীয়তা দৃঢ়ভাবে রক্ষার নিয়ম রয়েছে। এ আইনের ফলে দেশটির ব্যাংকগুলো কোনো পরিস্থিতিতেই গ্রাহকদের তথ্য কারো কাছে প্রকাশে বাধ্য নয়। ফলে কারা, কেনো এবং কীভাবে অর্থ ব্যাংকে রাখছেন, সে সম্পর্কে ব্যাংকগুলো কাউকে কোনো তথ্য দেয় না।
তবে সম্প্রতি গোপনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় ও সমালোচনা দেখা দেয়ায় অনেকে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংক থেকে বিশ্বের অন্যান্য দেশে তাদের অর্থ সরিয়ে নিচ্ছেন।