পদার্থে নোবেল পেলেন জন হোপফিল্ড ও জিওফ্রে হিন্টন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:১২ পিএম
জন জে হোপফিল্ড ও জিওফ্রে ই হিন্টন। ছবি : সংগৃহীত
চলতি বছর পদার্থবিদ্যায় যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার পেলেন মার্কিন বিজ্ঞানী জন জে হোপফিল্ড এবং কানাডার বিজ্ঞানী জিওফ্রে ই হিন্টন।
মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) এ দুই নোবেল বিজয়ীর নাম ঘোষণা করে রয়েল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে মেশিন লার্নিং বিষয়ে গবেষণার স্বীকৃতি হিসেবে তাদের এ অর্জন।
গত বছর পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার পান আমেরিকার পিয়ের অগস্টিনি, হাঙ্গেরির ফেরেঙ্ক ক্রাউৎজ এবং ফ্রান্সের অ্যানে এলহুইলার। পদার্থবিদ্যায় ২০২৩ সালের নোবেলজয়ী তিন বিজ্ঞানীরই গবেষণার বিষয় ছিল অভিন্ন- ইলেকট্রন গতিবিদ্যা।
রয়েল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্স, প্রতি বছর পদার্থবিজ্ঞানের মাধ্যমে মানবতার স্বার্থে অসামান্য অবদান রাখা বিজ্ঞানীদের পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করে থাকে।
এর আগে গতকাল সোমবার (০৭ অক্টোবর) চিকিৎসাশাস্ত্রে অনবদ্য অবদানের জন্য ২০২৪ সালে নোবেল পুরস্কার পান ভিক্টর অ্যামব্রোস ও গ্যারি রুভকুন। মাইক্রোআরএনএর কার্যক্রম আবিষ্কারের জন্য এই পুরস্কার পান তারা।
পোস্ট-ট্রান্সক্রিপশনাল জিন নিয়ন্ত্রণের প্রক্রিয়া আবিষ্কারেও এ দুজন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। সোমবার এ দুই নোবেল বিজয়ীর নাম ঘোষণা করে রয়েল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস।
চিকিৎসাশাস্ত্রের নোবেল বিজয়ীর নাম ঘোষণার মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ বছরের নোবেল পুরস্কারের মৌসুম। প্রতিবছরের মতো এবারও মোট ছয়টি বিভাগে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।
এ মাসের ছয় দিন মোট ৬টি বিভাগে নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। নোবেল শান্তি পুরস্কার ঘোষণা হয় নরওয়ে থেকে। সাহিত্য ও অর্থনীতির মতো অন্য পুরস্কারগুলো সুইডেন থেকে ঘোষণা করা হয়।
চিকিৎসা, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, সাহিত্য ও শান্তিতে পুরস্কারগুলো সুইডেনের বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেলের নামে ও তার রেখে যাওয়া অর্থ থেকে দেওয়া হয়। সুইডিশ শিল্পপতি নোবেল ডিনামাইটের উদ্ভাবক ছিলেন। তার মৃত্যুর পাঁচ বছর পর ১৯০১ সালে এ পুরস্কার দেওয়া শুরু হয়।
১৯০১ সালে জার্মান জীববিজ্ঞানী এমিল ফন বেরিংকে ডিপথেরিয়া রোগের বিরুদ্ধে কার্যকর সিরাম থেরাপি বিষয়ে গবেষণার জন্য প্রথম পুরস্কার প্রদান করা হয়।
এই পুরস্কারের প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করে নোবেল ফাউন্ডেশন। চিকিৎসাবিজ্ঞানের সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার হিসেবে এটি সর্বজনস্বীকৃত। প্রতি বছর ১০ ডিসেম্বর সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে বিজ্ঞানী নোবেলের মৃত্যুবার্ষিকীতে এই পুরস্কার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রদান করা হয়ে থাকে।
বিজয়ী বিজ্ঞানী সুইডেনের মহিমান্বিত রাজার কাছ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন। প্রত্যেক নোবেলবিজয়ী ২৪ ক্যারেট স্বর্ণের প্রলেপ দেওয়া একটি সবুজ স্বর্ণপদক, একটি ডিপ্লোমা ও একটি আর্থিক পুরস্কার পান। ২০২৪ সালের হিসেবে নোবেল পুরস্কারের আর্থিক পুরস্কার হলো এক কোটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রোনা, যা ১০ লাখ ৩৫ মার্কিন ডলারের সমান।
একটি নোবেল পুরস্কার তিনজনের বেশি ব্যক্তির মধ্যে ভাগ করা হয় না, যদিও নোবেল শান্তি পুরস্কার তিনজনের বেশি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া যেতে পারে। নোবেল পুরস্কার মরণোত্তর দেওয়া হয় না, তবে যদি কোনো ব্যক্তিকে পুরস্কার দেওয়া হয় এবং তিনি এটি পাওয়ার আগে মারা যান, তবে পুরস্কারটি প্রদান করা হয়।
আজ থেকে ১২২ বছর আগে ১৯০১ সালে এবং এর ৬৮ বছর পর ১৯৬৯ সালে অর্থনীতিতে পুরস্কার প্রদান শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ১০০০ জন বিজয়ী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ৬২৭টি নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৯৬৫ ব্যক্তি ও ২৭ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। পাঁচ ব্যক্তি ও দুটি সংস্থা একাধিকবার নোবেল পুরস্কার পেয়েছে।
একমাত্র আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি সর্বোচ্চ তিনবার নোবেল পুরস্কার পেয়েছে। প্রতিবারই শান্তিতে। সালগুলো হলো - ১৯১৭, ১৯৪৪ ও ১৯৬৩।
প্রদত্ত মেডেলের সম্মুখ দিকে থাকে আলফ্রেড নোবেলের খোদিত ছবি, যা পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন বা সাহিত্যের জন্য প্রদত্ত মেডেলের মতোই। তবে অন্য পাশটা আলাদা। সেই পাশে মেধাবী এক চিকিৎসকের প্রতিকৃতি দেখা যায়, যে নিজের কোলে রাখা একটি উন্মুক্ত বই ধরে আছে এবং একই সঙ্গে পাথরের বুক চিরে প্রবাহমান পানি দিয়ে একটি মেয়ের তৃষ্ণা মেটানোর চেষ্টা করছে।
১৯১৫-১৯১৮, ১৯২১, ১৯২৫, ১৯৪০-১৯৪২ মোট ৯ বছর চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়নি। অধিকাংশ বছরই দেওয়া হয়নি প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে।
১৯৩৯ সালে অস্ট্রীয় বংশোদ্ভূত জার্মান রাজনীতিবিদ এডলফ হিটলার গারহার্ড ডোমাগ নামের চিকিৎসাবিজ্ঞানীকে তার প্রাপ্য নোবেল পুরস্কার গ্রহণে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করেন। পরবর্তীকালে তিনি অবশ্য তার প্রাপ্য ডিপ্লোমা ও পদক গ্রহণ করেন, কিন্তু অর্থ ফিরে পাননি।