Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

এক রাতেই বদলে গেল দিল্লি–ঢাকার সুর, বন্ধুত্বের অনুষ্ঠান শেষে রাষ্ট্রদূত তলব

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:১০ পিএম

এক রাতেই বদলে গেল দিল্লি–ঢাকার সুর, বন্ধুত্বের অনুষ্ঠান শেষে রাষ্ট্রদূত তলব

ভারতের রাজধানীতে যেন এক রাতের ব্যবধানে পাল্টে গেল দিল্লি ও ঢাকার কূটনৈতিক আবহ। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দিল্লিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের আমন্ত্রণে দুই দেশের ঐতিহাসিক মৈত্রীর উদযাপনে একত্র হয়েছিলেন ভারতের বর্তমান ও সাবেক কূটনীতিক, সেনা কর্মকর্তা এবং থিংকট্যাংকের প্রতিনিধিরা। অথচ পরদিন বুধবার সকালেই সেই রাষ্ট্রদূতকে সাউথ ব্লকে তলব করে একাধিক বিষয়ে প্রতিবাদ জানায় ভারত সরকার।

বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দাবি, ঢাকায় ‘কিছু চরমপন্থি গোষ্ঠী’ ভারতীয় দূতাবাসকে ঘিরে যে নিরাপত্তা হুমকি তৈরি করেছে, সেটিই রাষ্ট্রদূতকে তলবের প্রধান কারণ। পাশাপাশি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন, সম্প্রতি বাংলাদেশের কয়েকজন রাজনীতিবিদের প্রকাশ্য ভারতবিরোধী ও ‘উসকানিমূলক’ বক্তব্যের বিরুদ্ধেও আপত্তি জানানো হয়েছে।

এর আগে দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন প্রাঙ্গণে বিজয় দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেছিলেন, ভারত–বাংলাদেশ সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর ও বহুমাত্রিক। তিনি এই সম্পর্ককে ‘অর্গানিক রিলেশনশিপ’ হিসেবে বর্ণনা করেন এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের জন্য জীবন দেওয়া ১ হাজার ৬৬৮ জন ভারতীয় সৈন্যের আত্মত্যাগ গভীর কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন।

ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া একাধিক ভারতীয় সেনানী, ভারতীয় সেনাবাহিনীর উপপ্রধান জেনারেল রাকেশ কাপুর, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ–মায়ানমার বিভাগের প্রধান বি শ্যাম, সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মণিশংকর আইয়ার, ঢাকায় দায়িত্ব পালন করা অন্তত চারজন সাবেক ভারতীয় রাষ্ট্রদূত, বিভিন্ন থিংকট্যাংকের গবেষক ও দিল্লির শীর্ষস্থানীয় সাংবাদিকরা।

অনুষ্ঠানের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে রিয়াজ হামিদুল্লাহ লেখেন, পারস্পরিক আস্থা, মর্যাদা, প্রগতিশীলতা, সুফল ভাগাভাগি ও অভিন্ন মূল্যবোধের ভিত্তিতেই দুই দেশের শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করা সম্ভব। ওই পোস্টে তিনি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও ট্যাগ করেন। কিন্তু রাত পেরোতেই সেই মন্ত্রণালয়ই তাঁকে সাউথ ব্লকে তলব করে। সেখানে জানানো হয়, বাংলাদেশে নিরাপত্তা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি নিয়ে ভারত উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাসকে ঘিরে সম্ভাব্য হুমকির বিষয়টি রাষ্ট্রদূতের নজরে আনা হয়।

এর আগে গত রবিবার ঢাকায় ভারতের রাষ্ট্রদূত প্রণয় ভার্মাকে তলব করেছিল বাংলাদেশের পররাষ্ট্র দপ্তর। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করে বাংলাদেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে উসকানি ও আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচালের প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন—এমন অভিযোগের বিষয়ে উদ্বেগ জানানো হয়।

এদিকে ‘জুলাই ঐক্য’ নামের একটি সংগঠন বুধবার ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের দিকে ‘মার্চ টু ইন্ডিয়ান হাইকমিশন’ কর্মসূচির ডাক দেয়। তবে উত্তর বাড্ডায় ব্যারিকেড দিয়ে মাঝপথেই বিক্ষোভকারীদের আটকে দেওয়া হয়। একই দিনে বিজয় দিবস উপলক্ষে অন্তর্বর্তী সরকার ঢাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের নাম ‘ফেলানী অ্যাভিনিউ’ রাখার ঘোষণা দেয়, যা নিয়েও আলোচনার সৃষ্টি হয়।

এর পাশাপাশি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক অভিযোগের প্রেক্ষিতে এনসিপির শীর্ষ নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ মন্তব্য করেন, বাংলাদেশবিরোধী শক্তিকে আশ্রয় দিলে ভারতকেও তার পরিণতি ভোগ করতে হবে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল বা ‘সেভেন সিস্টার্স’ জাতীয় নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত সংবেদনশীল হওয়ায় এই বক্তব্যকে দিল্লি ‘প্ররোচনামূলক’ হিসেবে দেখছে।

সব মিলিয়ে, বন্ধুত্বের উদযাপন থেকে কূটনৈতিক টানাপোড়েন—মাত্র এক রাতেই দিল্লি ও ঢাকার সম্পর্কে তৈরি হয়েছে স্পষ্ট উত্তেজনার রেখা।

Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher

Major(Rtd)Humayan Kabir Ripon

Managing Editor

Email: [email protected]

অনুসরণ করুন