ফিলিস্তিনসহ আরও ছয় দেশের নাগরিকদের পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা দিল যুক্তরাষ্ট্র
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:২২ পিএম
যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ ও অভিবাসনে নিষিদ্ধ দেশের তালিকা আরও বাড়িয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। গতকাল মঙ্গলবার ফিলিস্তিন ও আরও পাঁচটি দেশের ওপর পূর্ণ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে আরও ১৫টি দেশের নাগরিকদের ক্ষেত্রে আংশিক ভ্রমণ সীমাবদ্ধতা কার্যকর করা হচ্ছে।
বার্তা সংস্থা এপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পূর্ণ নিষেধাজ্ঞার তালিকায় যুক্ত হয়েছে বুরকিনা ফাসো, মালি, নাইজার, দক্ষিণ সুদান ও সিরিয়া। পাশাপাশি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ইস্যু করা ভ্রমণ নথি বহনকারীরাও সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বেন। এর ফলে ফিলিস্তিনি নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ ও স্থায়ী অভিবাসনের পথ কার্যত বন্ধ হয়ে গেল।
প্রশাসনের ভাষ্য, যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের মানদণ্ড আরও কঠোর করার চলমান উদ্যোগের অংশ হিসেবেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে সমালোচকেরা বলছেন, এতে অন্যায্যভাবে বহু দেশের মানুষের ভ্রমণ ও অভিবাসনের সুযোগ সীমিত হবে।
নতুন ঘোষণায় আংশিক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার তালিকায় যুক্ত হয়েছে আরও ১৫টি দেশ। দেশগুলো হলো অ্যাঙ্গোলা, অ্যান্টিগুয়া ও বারবুডা, বেনিন, আইভরি কোস্ট, ডোমিনিকা, গ্যাবন, গাম্বিয়া, মালাউই, মৌরিতানিয়া, নাইজেরিয়া, সেনেগাল, তানজানিয়া, টোঙ্গা, জাম্বিয়া ও জিম্বাবুয়ে। এসব বিধিনিষেধ পর্যটক ও স্থায়ীভাবে বসবাসে আগ্রহী—উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে।
ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছে, যাদের আগে থেকেই বৈধ ভিসা রয়েছে, যারা যুক্তরাষ্ট্রের বৈধ স্থায়ী বাসিন্দা কিংবা কূটনীতিক ও ক্রীড়াবিদদের মতো বিশেষ শ্রেণির ভিসাধারী, তারা এই নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবেন। এ ছাড়া যেসব ব্যক্তির যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ দেশটির স্বার্থে প্রয়োজনীয় বলে বিবেচিত হবে, তাঁরাও ছাড় পাবেন। এসব পরিবর্তন আগামী ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে।
এর আগে গত জুনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ১২টি দেশের নাগরিকদের ওপর পূর্ণ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা এবং আরও সাতটি দেশের ক্ষেত্রে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের ঘোষণা দেন। সে সময় নিষেধাজ্ঞার তালিকায় ছিল আফগানিস্তান, মিয়ানমার, চাদ, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি, ইরিত্রিয়া, হাইতি, ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান ও ইয়েমেন। পাশাপাশি বুরুন্ডি, কিউবা, লাওস, সিয়েরা লিওন, টোগো, তুর্কমেনিস্তান ও ভেনেজুয়েলার নাগরিকদের ওপর বাড়তি বিধিনিষেধ দেওয়া হয়।
নতুন সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে প্রশাসন বলেছে, সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে ব্যাপক দুর্নীতি, জাল বা অনির্ভরযোগ্য নাগরিক নথি এবং অপরাধসংক্রান্ত রেকর্ড রয়েছে। কিছু দেশে ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও অবস্থান করার হার বেশি এবং যুক্তরাষ্ট্রের ফেরত পাঠানো নাগরিকদের নিজ দেশে নিতে অনীহার ঘটনাও রয়েছে। পাশাপাশি সামগ্রিক স্থিতিশীলতা ও সরকারি নিয়ন্ত্রণের ঘাটতির কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
ফিলিস্তিনিদের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা এমন এক সময়ে এলো, যখন কয়েক মাস আগেই ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের পাসপোর্টধারীদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসা, শিক্ষা বা বিনোদনের উদ্দেশ্যে ভ্রমণ কার্যত কঠিন হয়ে পড়েছিল। মঙ্গলবারের ঘোষণায় সেই সীমাবদ্ধতা আরও কঠোর হলো।
এদিকে এই ঘোষণার পর আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধপ্রচেষ্টায় সহায়তাকারী নাগরিকদের পক্ষে কাজ করা সংগঠনগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিশেষ অভিবাসী ভিসা কর্মসূচির পক্ষে কাজ করা সংস্থা ‘নো ওয়ান লেফট বিহাইন্ড’ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, নতুন নীতির ফলে এমন একটি গোষ্ঠী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যারা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে কঠোর যাচাই-বাছাইয়ের মধ্য দিয়ে গেছে।
নিষেধাজ্ঞা বা সীমাবদ্ধতার তালিকায় নতুন করে অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর কয়েকটি সরকার জানিয়েছে, তারা সিদ্ধান্তটি পর্যালোচনা করছে এবং এর প্রভাব ও করণীয় বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ করবে।



