এশিয়াজুড়ে বন্যা-ভূমিধসে মৃতের ৯০০ ছাড়াল
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০৪ পিএম
দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল যেন পরিণত হয়েছে এক অস্থির জলরাশির মানচিত্রে—টানা বর্ষণ, দুর্যোগ আর ভাঙাচোরা ভূমির মাঝখানে চারটি দেশে মৃত্যু সংখ্যা পেরিয়ে গেছে ৯ শতাধিক। নিখোঁজ রয়েছেন আরও কয়েক শ মানুষ। মালাক্কা প্রণালীতে গঠিত বিরল ক্রান্তীয় ঝড়ের জোড়া আঘাতে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড আর শ্রীলঙ্কা টানা বৃষ্টির বন্যায় ডুবে গেছে। আলাদা একটি ঝড়ের প্রভাবে শ্রীলঙ্কার পর এবার ভারী বৃষ্টির ছায়া হাঁটছে ভারতের দক্ষিণ উপকূলের দিকে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও এএফপির হিসাবে—ইন্দোনেশিয়ায় অন্তত ৪৩৫, শ্রীলঙ্কায় ৩৩৪, থাইল্যান্ডে ১৬২ এবং মালয়েশিয়ায় ২ জন মারা গেছেন। ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপে সাইক্লোন সেনইয়ার ব্যাপক ভূমিধস ও বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। সরকারি হিসাব বলছে, মৃত্যুর সংখ্যা রোববার বেড়ে পৌঁছেছে ৪৩৫ জনে। শনিবার এই সংখ্যা ছিল ৩০৩। নিখোঁজ রয়েছেন আরও ৪০৬ জন।
ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপে সাইক্লোন সেনইয়ার ধাক্কায় ঘটে ব্যাপক ভূমিধস ও বন্যা। মাত্র এক দিনে মৃতের সংখ্যা লাফিয়ে বেড়েছে। উদ্ধার অভিযানের দলগুলো সেখানে প্রায় জলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কাজ করছে—হেলিকপ্টারে করে খাদ্য যাচ্ছে, কিন্তু বহু এলাকা এখনো বিচ্ছিন্ন। উত্তর আচেহ প্রদেশে খাদ্যাভাব এমনই যে, ত্রাণ পৌঁছানোর আগেই মানুষ খাবার-পানীয় লুটে নিতে বাধ্য হয়েছে।
থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলেও এক অদৃশ্য জলঢেউ দেশজুড়ে বিপর্যয় নামিয়ে এনেছে। ৩০০ বছরের রেকর্ড ভেঙে হ্যাত ইয়াই শহরে আকাশ যেন বৃষ্টির অবিরাম চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। পানির উচ্চতা আট ফুট ছাড়িয়ে গিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে একটি মাতৃসদন, যেখানে আটকা ছিলেন ৩০ নবজাতকসহ রোগীরা।
সাইক্লোন ডিটওয়ার প্রভাবে শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ বিপর্যয়: অন্তত ২৫ হাজার ঘরবাড়ি ধ্বংস, সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন ১ লক্ষ ৪৭ হাজার মানুষ। রাজধানী কলম্বোর নিম্নাঞ্চল পানির তলায়, ১৯১ জন এখনো নিখোঁজ। ঘরের ওপরতলায় আশ্রয় নেওয়া মানুষরা মালপত্র আর প্রাণ—দুটোই বাঁচানোর লড়াই চালাচ্ছেন।
মালয়েশিয়ায় ঝড় সেনইয়ার আঘাত হানার পর প্রাণ হারিয়েছেন ২ জন। ঝড়ের আগে হাজার হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হলেও কয়েক জন আটকা পড়ে যান পেলিস অঙ্গরাজ্যের গভীরে। উদ্ধার নৌকা পৌঁছালে ৭৩ বছরের গন কাসিম বলেন, পানিটা এমন ছিল যেন সব পথ গিলে নেওয়া এক বিশাল জলরাশি।
দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার এই দুর্যোগ এখনো এগোচ্ছে ধীরে ধীরে, ঠিক যেন বৃষ্টিভেজা আকাশের নিচে অনিশ্চয়তা টেনে নিয়ে যাওয়া এক দীর্ঘ ছায়া।



