বাংলাদেশ–মিয়ানমার প্লেট সীমায় তীব্র চাপ, বড় ভূমিকম্পের শঙ্কা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ১১:১৫ এএম
বাংলাদেশের মাধবদীতে শুক্রবার (২২ নভেম্বর) ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে ১০ জন নিহত ও ছয় শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। মাত্রা তুলনামূলক কম হলেও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণে বিশেষজ্ঞরা আশ্চর্য নন। তাদের মতে, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশে সামান্য কম্পনও বড় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। পাশাপাশি আরও শক্তিশালী ভূমিকম্পের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না গবেষকেরা।
এরই মধ্যে রবিবার (২৩ নভেম্বর) সকালে মিয়ানমারের উপকূলে ৫.৩ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। কম্পন অনুভূত হয় প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ডেও।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানায়, শুক্রবারের ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পের পরবর্তী কম্পন বা আফটারশকই মিয়ানমারের এই কম্পনের সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে। স্থানীয় সময় সকাল ১০টা ৩৯ মিনিটে অনুভূত কম্পনের কেন্দ্র ছিল দাওই শহরের দক্ষিণ–পশ্চিমে ২৬৭ কিলোমিটার দূরে এবং মাটির ১০ কিলোমিটার গভীরে।
২০০৩ সাল থেকে বাংলাদেশে গবেষণা চালাচ্ছেন কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতাত্ত্বিক মাইকেল স্টেকলার ও তার দল। তারা জানান, বিশেষ জিপিএস যন্ত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী প্রতি বছর বাংলাদেশের ভূমি প্রায় দুই ইঞ্চি করে উত্তর–পূর্ব দিকে সরে যাচ্ছে। এই চলাচলের ফলে বাংলাদেশের ভূখণ্ড মিয়ানমারের নিচের প্লেটের সঙ্গে ধীরে ধীরে ধাক্কা খেয়ে মাটির গভীরে প্রচণ্ড চাপ তৈরি করছে। বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, দীর্ঘদিন ধরে জমতে থাকা এই চাপ একসময় হঠাৎ মুক্ত হলে ধ্বংসাত্মক ভূমিকম্প সংঘটিত হতে পারে।
স্টেকলার বলেন, গত ৪০০ বছরে বাংলাদেশে কোনো বড় ধরনের ভূমিকম্প হয়নি। ফলে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ভূগর্ভে চাপ জমে আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কতটা চাপ সঞ্চিত হয়েছে তা নির্দিষ্টভাবে জানা কঠিন হলেও তার ‘বিস্ফোরণ’ ভয়াবহ হতে পারে।
‘নেচার জিওসায়েন্স’–এ প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়েছে, প্লেট সীমানায় আকস্মিক ব্যাঘাত ঘটলে ৮.২ মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে—অনুকূল পরিস্থিতিতে তা ৯ মাত্রা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। বাংলাদেশের ইতিহাসে যা হবে নজিরবিহীন। ১৫০ মাইল দীর্ঘ বাংলাদেশ–মিয়ানমার প্লেট সীমার যেকোনো অংশে এমন ভূমিকম্পের কেন্দ্র হতে পারে, এবং সেই ঝুঁকির মধ্যে ঢাকা বিশেষভাবে রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা আরও সতর্ক করছেন—বাংলাদেশের ভূমির অধিকাংশই নরম ও নদীনির্ভর পলিতে গঠিত। এই পলি ভূমিকম্পের সময় কম্পনকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আবার বহুতল ভবন নির্মাণে নিয়ম না মানা ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। স্টেকলারের ভাষায়, ঢাকা যেন জেলির বাটির ওপর দাঁড়িয়ে থাকা একটি শহর।
গত শুক্রবারের কম্পনের কেন্দ্র ছিল নরসিংদীর মাধবদীর কাছে, মাটির মাত্র ১০ কিলোমিটার গভীরে। ঢাকায় একটি বহুতলের রেলিং ভেঙে তিন পথচারীর মৃত্যু হয়। বিভিন্ন এলাকায় দেয়াল ধসে বা চাপা পড়ে আরও প্রাণহানি ঘটে। কলকাতাসহ ভারতের বিভিন্ন এলাকাও তখন কেঁপে ওঠে।
বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন—ভবিষ্যতে বড় মাত্রার ভূমিকম্প হলে এর প্রভাব বাংলাদেশ ছাড়িয়ে ভারতের পূর্বাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে।



