যুদ্ধবিরতির এক মাস পরও গাজায় ইসরায়েলি হামলা, নিহত ৬৯ হাজার ছাড়িয়েছে
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ১১:১৯ এএম
যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার এক মাস পেরিয়ে গেলেও ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি হামলা ও সহিংসতা থামেনি। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে নতুন করে লাশ উদ্ধার হওয়ায় বেড়েই চলেছে নিহতের সংখ্যা।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি আগ্রাসনে নিহতের সংখ্যা ৬৯ হাজার ১৬৯ জনে দাঁড়িয়েছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই যুদ্ধের পর শনিবার (৯ নভেম্বর) পর্যন্ত এই হতাহতের হিসাব প্রকাশ করেছে মন্ত্রণালয়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর গত এক মাসে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ২৪০ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন।
শনিবারও নতুন করে হত্যার খবর এসেছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, উত্তর গাজায় ‘ইয়েলো লাইন’ নামে পরিচিত সীমারেখা অতিক্রম করা এক ফিলিস্তিনিকে তারা গুলি করে হত্যা করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে ওই সীমারেখা পর্যন্ত পিছু হটার কথা ইসরায়েলের। সেনাবাহিনী আরও জানায়, দক্ষিণ গাজাতেও সীমারেখা অতিক্রমের অভিযোগে আরেক ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে, যিনি নাকি সৈন্যদের জন্য তাৎক্ষণিক হুমকি তৈরি করেছিলেন।
অভিযোগ উঠেছে, সীমারেখার কাছাকাছি পৌঁছানো সাধারণ পরিবারগুলোর ওপরও গুলি চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। এদিকে খান ইউনিসে ইসরায়েলি সেনাদের ফেলে যাওয়া একটি বিস্ফোরক থেকে প্রাণ হারিয়েছে এক ফিলিস্তিনি শিশু— জানিয়েছে নাসের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জরুরি চিকিৎসা সহায়তার প্রয়োজনীয় ব্যক্তিদের সরিয়ে নিতে গাজা-মিসর সীমান্তের রাফাহ ক্রসিং পুনরায় খোলার আহ্বান জানিয়েছে। সংস্থাটির তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত প্রায় ৪ হাজার ফিলিস্তিনি রোগী রাফাহ সীমান্ত পেরিয়ে বিদেশে চিকিৎসা নিয়েছেন, তবে আরও ১৬ হাজার ৫০০ জন বিদেশে চিকিৎসার অপেক্ষায় রয়েছেন।
অন্যদিকে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সেনা অভিযান ও বসতি স্থাপনকারীদের হামলা আরও তীব্র হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, এসব হামলা ফিলিস্তিনিদের নিজেদের জমি থেকে উচ্ছেদ করার পরিকল্পনার অংশ।
শনিবার দক্ষিণ নাবলুসের বেইতা শহরে জলপাই সংগ্রহে ব্যস্ত ফিলিস্তিনি গ্রামবাসী, কর্মী ও সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায় মুখোশধারী ডজনখানেক বসতি স্থাপনকারী। ইসরায়েলি মানবাধিকারকর্মী জোনাথন পোলাক আল জাজিরাকে বলেন, তারা পাহাড় থেকে নেমে লাঠি ও বড় পাথর নিয়ে আমাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে; বিশাল পাথর ছুড়তে থাকে, আমরা পালাতে বাধ্য হই।
এই হামলায় অন্তত ডজনখানেক মানুষ আহত হয়েছেন, যাদের অনেককে হাসপাতালে নিতে হয়েছে। আহতদের মধ্যে একজন সাংবাদিক ও এক ৭০ বছর বয়সী কর্মী রয়েছেন।
প্যালেস্টাইন জার্নালিস্টস সিন্ডিকেট জানিয়েছে, হামলায় তাদের পাঁচ সাংবাদিক- রানিন সাওয়াফতে, মোহাম্মদ আল-আত্রাশ, লুয়াই সাঈদ, নাসের ইশতাইয়েহ ও নাঈল বুয়াইতেল- আহত হয়েছেন। সংগঠনটি ঘটনাটিকে সাংবাদিক হত্যার উদ্দেশ্যে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ হিসেবে নিন্দা জানিয়েছে।
রয়টার্স ও নিশ্চিত করেছে, তাদের দুই কর্মী- একজন সাংবাদিক ও এক নিরাপত্তা পরামর্শক- ওই হামলায় আহত হয়েছেন।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর থেকে পশ্চিম তীরের অন্তত ৭০টি শহর ও গ্রামে ১২৬টি হামলা চালানো হয়েছে। এসব হামলায় ৪ হাজারেরও বেশি জলপাই গাছ ধ্বংস বা উপড়ে ফেলা হয়েছে।



