গাজায় যুদ্ধবিরতি চললেও ত্রাণে বাধা, ক্ষুধা-দুর্ভোগে কাতর ফিলিস্তিনিরা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ১১:৩৬ এএম
ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকলেও ত্রাণ প্রবেশে বাধা অব্যাহত রয়েছে। সীমিত সীমান্ত খোলা রাখায় খাদ্যসংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে, ফলে ক্ষুধা ও দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছেন গাজার বাসিন্দারা। জাতিসংঘ জানিয়েছে, তারা এখন সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছে।
আল জাজিরা বুধবার (৫ নভেম্বর) জানায়, গাজায় ত্রাণ কার্যক্রমে ইসরায়েলের বিধিনিষেধ বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) সতর্ক করে বলেছে, সহায়তা পাঠানো কঠিন হয়ে পড়েছে, বিশেষ করে উত্তর গাজায়।
ডব্লিউএফপির মুখপাত্র আবির ইতেফা মঙ্গলবার এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি শুরুর পর কিছুটা ত্রাণ প্রবেশ বেড়েছে, কিন্তু সীমিতভাবে সীমান্ত খোলা থাকায় তা এখনো অপর্যাপ্ত। আমাদের পূর্ণ প্রবেশাধিকার ও দ্রুত সরবরাহের সুযোগ দরকার। শীত চলে এসেছে, অথচ মানুষ এখনো ক্ষুধায় কাতর।
সংস্থাটি জানায়, তারা গাজাজুড়ে ৪৪টি কেন্দ্রে খাদ্য বিতরণ চালাচ্ছে এবং ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি শুরুর পর থেকে ১০ লাখের বেশি মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে। তবে যে পরিমাণ খাদ্য প্রবেশ করছে, তা জনসংখ্যার চাহিদার তুলনায় অনেক কম।
বিশেষ করে উত্তর গাজায় ত্রাণ পৌঁছানো এখনো কঠিন, যেখানে গত আগস্টে দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি আনুষ্ঠানিকভাবে শনাক্ত করা হয়েছিল। ইতেফা বলেন, উত্তর দিকের প্রবেশপথ এখনো বন্ধ। ফলে আমাদের ত্রাণ কাফেলাগুলোকে দক্ষিণের দীর্ঘ ও বিপজ্জনক পথ ধরে যেতে হচ্ছে। কার্যকর ত্রাণ বিতরণের জন্য সীমান্তের সব পয়েন্ট খোলা প্রয়োজন।
যুদ্ধবিরতির পর ইসরায়েলি সেনারা ইয়েলো লাইন-এ পিছু হটার পর হাজার হাজার ফিলিস্তিনি উত্তর গাজার ঘরে ফিরেছেন। কিন্তু বেশিরভাগই ফিরে দেখেছেন, তাদের ঘরবাড়ি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। অনেকে এখনো তাঁবু ও অস্থায়ী আশ্রয়ে বসবাস করছেন।
জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো ইসরায়েলকে আহ্বান জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুযায়ী আরও ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিতে, কারণ শীত ঘনিয়ে আসছে এবং মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে।
গাজার সরকারি তথ্য অফিসের হিসাব অনুযায়ী, ১০ থেকে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে ৩,২০৩টি ত্রাণ ও বাণিজ্যিক ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে— অর্থাৎ গড়ে দিনে ১৪৫টি ট্রাক। অথচ যুদ্ধবিরতির চুক্তি অনুযায়ী দৈনিক ৬০০টি ট্রাক প্রবেশ করার কথা।
এর মধ্যেই ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় বিক্ষিপ্ত হামলা অব্যাহত রেখেছে। মঙ্গলবার গাজা সিটির তুফাহ এলাকায় ইসরায়েলি কোয়াডকপ্টার হামলায় একজন নিহত ও একজন আহত হন। উত্তর গাজার জাবালিয়াতেও সেনাদের গুলিতে একজন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় হাসপাতাল।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ২৪০ জন নিহত ও ৬০৭ জন আহত হয়েছেন।



