বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থপ্রদানের বিরোধে আন্তর্জাতিক সালিশে যাচ্ছে আদানি পাওয়ার
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ১১:২৫ এএম
বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ সংক্রান্ত অর্থপ্রদানের বিরোধ নিষ্পত্তিতে আন্তর্জাতিক সালিশি প্রক্রিয়ায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আদানি পাওয়ার। ভারতীয় ব্যবসায়ী গৌতম আদানির মালিকানাধীন বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। সোমবার আদানি গ্রুপের এক বিবৃতির বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে এ তথ্য।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) সঙ্গে নির্দিষ্ট কিছু খাতের ব্যয় ও বিলের পদ্ধতি নিয়ে দীর্ঘদিনের মতবিরোধের পর উভয় পক্ষই আন্তর্জাতিক সালিশ প্রক্রিয়া শুরুতে সম্মত হয়েছে। আদানি পাওয়ার জানিয়েছে, তারা দ্রুত, স্বচ্ছ এবং পারস্পরিকভাবে লাভজনক সমাধান প্রত্যাশা করছে।
অন্যদিকে, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান রয়টার্সকে বলেন, আলোচনা এখনো চলছে। আলোচনা শেষ হলে প্রয়োজনে আমরা আন্তর্জাতিক সালিশ প্রক্রিয়ায় যাব।
২০১৭ সালে বাংলাদেশ ও আদানি পাওয়ারের মধ্যে ২৫ বছর মেয়াদি বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি (পিপিএ) স্বাক্ষর হয়। ওই চুক্তির আওতায় ভারতের ঝাড়খণ্ডের গড্ডায় অবস্থিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে বাংলাদেশের মোট বিদ্যুৎচাহিদার প্রায় ১০ শতাংশ পূরণ হয় এই কেন্দ্র থেকে।
রয়টার্সের ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ তোলে। অভিযোগে বলা হয়, কোম্পানিটি ভারতের সরকারের কাছ থেকে পাওয়া কর ছাড়ের সুবিধা বাংলাদেশকে দেয়নি।
চুক্তি অনুযায়ী, করহারে পরিবর্তন হলে আদানি পাওয়ারকে তা বাংলাদেশকে অবহিত করতে এবং সেই অনুযায়ী বিদ্যুৎমূল্য সমন্বয় করতে হতো। কিন্তু ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ও অক্টোবরে বিপিডিবির পক্ষ থেকে দুই দফা চিঠি পাঠানো হলেও আদানি কোনো সাড়া দেয়নি বলে রয়টার্স জানায়।
বিপিডিবির কর্মকর্তাদের মতে, কর ছাড়ের সুবিধা বিবেচনায় নিলে বাংলাদেশের জন্য প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে ০.৩৫ সেন্ট পর্যন্ত সাশ্রয় হতো। তাদের ধারণা, ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত গড্ডা প্ল্যান্ট থেকে ৮.১৬ বিলিয়ন ইউনিট বিদ্যুৎ আমদানি করা হয়েছে, যা কর ছাড় সমন্বয় করলে বাংলাদেশ প্রায় ২৮.৬ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করতে পারত।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ আদানিকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য ১৪.৮৭ টাকা (প্রায় ০.১২২ ডলার) পরিশোধ করেছে—যা ভারতের অন্যান্য সরবরাহকারীর গড় ৯.৫৭ টাকার তুলনায় অনেক বেশি।
তবে আদানি পাওয়ার জানিয়েছে, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বাংলাদেশের বকেয়া পাওনা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। চলতি বছরের শুরুতে যেখানে বকেয়া ছিল প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার, মে মাসে তা নেমে আসে ৯০০ মিলিয়ন ডলারে, যা এখন প্রায় ১৫ দিনের সরবরাহমূল্যের সমান।
সোমবারের বিবৃতিতে আদানি পাওয়ার পুনর্ব্যক্ত করেছে, তারা চুক্তির প্রতি পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং বাংলাদেশে নির্ভরযোগ্য, সাশ্রয়ী ও উচ্চমানের বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখবে। সূত্র: রয়টার্স।



