যুদ্ধবিরতি ভেঙে নতুন হামলা
গাজায় প্রতিশ্রুত ত্রাণের ৭৫ শতাংশ আটকে রেখেছে ইসরায়েল
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২৫, ১১:১৮ এএম
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও ফিলিস্তিনের গাজায় প্রতিশ্রুত ত্রাণের মাত্র এক-চতুর্থাংশ ঢুকতে দিচ্ছে ইসরায়েল। অর্থাৎ মোট ত্রাণের ৭৫ শতাংশই আটকে রেখেছে দেশটি। এদিকে, যুদ্ধবিরতির শর্ত ভেঙে ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত হামলায় গাজায় বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা ও মানবিক সংকট। রোববার (২ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে আল জাজিরা।
গাজার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরও ইসরায়েল প্রতিশ্রুত ত্রাণসামগ্রীর খুব সামান্য অংশ প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছে। শনিবার এক বিবৃতিতে গাজার সরকারি গণমাধ্যম দপ্তর জানায়, ১০ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ৩ হাজার ২০৩টি বাণিজ্যিক ও ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে—যা প্রতিদিন গড়ে মাত্র ১৪৫টি ট্রাক। নির্ধারিত দৈনিক ৬০০ ট্রাকের তুলনায় এটি মাত্র ২৪ শতাংশ।
বিবৃতিতে বলা হয়, ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী ইচ্ছাকৃতভাবে ত্রাণ ও বাণিজ্যিক পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে বাধা দিচ্ছে। এর ফলে গাজার ২৪ লাখেরও বেশি মানুষের মানবিক সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এই পরিস্থিতির জন্য সম্পূর্ণভাবে ইসরায়েলকে দায়ী করা হয়েছে।
গাজার পক্ষ থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতাকারীদের আহ্বান জানানো হয়েছে যেন ইসরায়েলের ওপর চাপ প্রয়োগ করে কোনও শর্ত বা বিধিনিষেধ ছাড়াই ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি নিশ্চিত করা হয়।
যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও গাজার অধিকাংশ মানুষ এখনো খাদ্য, পানি, ওষুধসহ মৌলিক চাহিদার তীব্র সংকটে ভুগছেন। দুই বছরের অব্যাহত ইসরায়েলি হামলায় বহু পরিবার ঘরবাড়ি হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র ফারহান হক জানান, ইসরায়েলি নির্দেশে রুট পরিবর্তনের কারণে ত্রাণ কার্যক্রম মারাত্মকভাবে সীমিত হয়ে পড়েছে। এখন ত্রাণবাহী কনভয়গুলোকে মিসরের সীমান্তসংলগ্ন ফিলাডেলফি করিডর হয়ে সংকীর্ণ ও ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলীয় সড়ক দিয়ে যেতে হচ্ছে, যা প্রায়ই যানজটে পঙ্গু হয়ে পড়ে। তিনি বলেন, ত্রাণ কার্যক্রম জোরদারে অতিরিক্ত সীমান্তপথ ও অভ্যন্তরীণ রুট চালু করা জরুরি।
এদিকে, যুদ্ধবিরতির শর্ত ভঙ্গ করে ইসরায়েলি বাহিনী শনিবারও গাজার বিভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিস এলাকায় বিমান, কামান ও ট্যাংকের গোলায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়। উত্তর গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের পূর্বাঞ্চলেও কয়েকটি আবাসিক ভবন গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
আল জাজিরা’র প্রতিবেদক তারেক আবু আজজুম জানিয়েছেন, খান ইউনিসে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, ইসরায়েলি ড্রোন ও ভারী গোলাবর্ষণে ঘরবাড়ি ও কৃষিজমি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছে। আকাশে ড্রোনের অব্যাহত উপস্থিতি ও বোমাবর্ষণের কারণে উদ্ধারকর্মীরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পৌঁছাতে পারছেন না।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ২২২ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৫৯৪ জন আহত হয়েছেন।



