যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পরও গাজায় ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১০:০৭ এএম
যুদ্ধবিরতি পুনরায় কার্যকর রাখার ঘোষণা দিয়েও গাজায় নতুন হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। বুধবার সন্ধ্যায় উত্তর গাজার বেইত লাহিয়ায় চালানো এই হামলায় অন্তত দুইজন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে আল-শিফা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা এমন একটি স্থানে আঘাত হেনেছে যেখানে অস্ত্র মজুত ছিল এবং তা তাদের সেনাদের জন্য ‘তাৎক্ষণিক হুমকি’ তৈরি করেছিল।
এই নতুন হামলা গাজার নাজুক অস্ত্রবিরতিকে আবারও অনিশ্চয়তার মুখে ফেলেছে। এর আগে মঙ্গলবার রাতে দক্ষিণ গাজার রাফাহ এলাকায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১০৪ জন নিহত হন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। ওই হামলার আগে এক ইসরায়েলি সেনা নিহত হওয়ার ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ‘প্রতিশোধমূলক জোরালো হামলার’ নির্দেশ দেন। ইসরায়েল দাবি করে, তারা হামাসের সিনিয়র যোদ্ধাদের লক্ষ্য করে অভিযান চালিয়েছে এবং ‘ডজনখানেক’ যোদ্ধা নিহত হয়েছে।
তবে বুধবার দুপুরে ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি কার্যকর রাখার ঘোষণা দিলেও, সন্ধ্যায় আবারও হামলা চালায় তারা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, সর্বশেষ হামলা সত্ত্বেও অস্ত্রবিরতি ঝুঁকির মুখে নেই। অন্যদিকে মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার এই হামলায় হতাশা প্রকাশ করলেও জানায়, তারা এখনো যুদ্ধবিরতির পরবর্তী ধাপে অগ্রসর হওয়ার বিষয়ে আশাবাদী।
এমন পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ শান্তি প্রচেষ্টাকে ‘হাতছাড়া না করতে’ সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। বুধবার এক বিবৃতিতে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফান ডুজারিক বলেন, গুতেরেস গাজার বেসামরিক মানুষের ওপর ইসরায়েলি বিমান হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। হামলায় বহু শিশুর প্রাণহানি ঘটেছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ফলকার তুর্ক বলেছেন, এত বিপুল সংখ্যক হতাহতের খবর ভয়াবহ। শান্তি প্রচেষ্টা যেন ভেস্তে না যায়, সে বিষয়ে তিনি সব পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানান। একই ধরনের আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নও।
অন্যদিকে হামাস দাবি করেছে, রাফাহে যে ঘটনায় এক ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছিলেন, সেটির সঙ্গে তাদের যোদ্ধাদের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা যুদ্ধবিরতি মানার অঙ্গীকারও পুনর্ব্যক্ত করেছে। তবে সাম্প্রতিক হামলার কারণে এক মৃত ইসরায়েলি বন্দির মরদেহ ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি।
হামাস সতর্ক করে বলেছে, ইসরায়েলের নতুন হামলা অব্যাহত থাকলে এটি বন্দিদের মরদেহ উদ্ধারের প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করবে।
অন্যদিকে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ রেডক্রসের প্রতিনিধিদের ফিলিস্তিনি বন্দিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ নিষিদ্ধ করেছে, দাবি করছে—এটি নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। হামাস এই পদক্ষেপকে বন্দিদের মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে আখ্যা দিয়েছে এবং বলেছে, যুদ্ধ চলাকালে এমন নিষেধাজ্ঞা কার্যত সব সময়ই বলবৎ থাকে, যা ইসরায়েলের ধারাবাহিক নির্যাতন, হত্যাযজ্ঞ ও অনাহারে রাখার নীতিরই অংশ।



