হারিকেন মেলিসার তাণ্ডবে বিপর্যস্ত জ্যামাইকা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৩৩ এএম
প্রবল শক্তি নিয়ে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে তাণ্ডব চালাচ্ছে হারিকেন মেলিসা। জ্যামাইকায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর পর ঝড়টি এখন কিউবার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। সেখানে ইতোমধ্যেই লাখো মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে আল জাজিরা। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ঝড়টির গতি কিছুটা কমে ক্যাটাগরি–৪ পর্যায়ে এলেও এর শক্তি এখনো বিধ্বংসী। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় হারিকেন কেন্দ্র (এনএইচসি) জানায়, মঙ্গলবার দুপুরে জ্যামাইকার নিউ হোপ এলাকায় ঝড়টি স্থলভাগে আঘাত হানে, তখন বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২৯৫ কিলোমিটার—যা ক্যাটাগরি–৫ মাত্রার সমান।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও) মেলিসাকে শতাব্দীর সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড় হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। জ্যামাইকা, হাইতি ও ডমিনিকান প্রজাতন্ত্রে প্রবল বৃষ্টি ও বন্যায় এখন পর্যন্ত সাতজনের মৃত্যু হয়েছে—এর মধ্যে জ্যামাইকা ও হাইতিতে তিনজন করে এবং ডমিনিকান প্রজাতন্ত্রে একজন মারা গেছেন। আরও একজন নিখোঁজ রয়েছেন।
এনএইচসি সতর্ক করে বলেছে, উত্তর–পশ্চিম জ্যামাইকায় এখনো প্রবল ঝড় বইছে, যা প্রাণঘাতী পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। পূর্বাভাস অনুযায়ী, মেলিসা আকস্মিক বন্যা, ভূমিধস ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ঘটাতে পারে। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার সাইক্লোন বিশেষজ্ঞ আন-ক্লেয়ার ফন্টানের মতে, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৭০০ মিলিমিটার ছাড়িয়ে যেতে পারে—যা পুরো মৌসুমি বৃষ্টির প্রায় দ্বিগুণ।
জ্যামাইকার স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ডেসমন্ড ম্যাকেঞ্জি বলেন, আমরা সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছি, কিন্তু ক্যাটাগরি–৫ মাত্রার ঝড়ের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত থাকা প্রায় অসম্ভব। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, গত বছরের হারিকেন বেরিল দেশটিতে ভয়াবহ ক্ষতি করেছিল।
রেডক্রস জানিয়েছে, ঝড়ের প্রভাবে দেশের পশ্চিমাঞ্চলে প্রবল বাতাস ও ভারী বৃষ্টিতে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। সংস্থাটির আন্তর্জাতিক ফেডারেশন সতর্ক করেছে, শুধুমাত্র জ্যামাইকাতেই প্রায় ১৫ লাখ মানুষ মেলিসার প্রভাবে ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন।
রাজধানী কিংস্টনের সাংবাদিক রোবিয়ান উইলিয়ামস জানিয়েছেন, প্রবল বাতাসে গাছপালা উপড়ে পড়েছে, বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে গেছে এবং অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। উদ্ধারকর্মীরা সড়ক পরিষ্কারে কাজ করছেন।
এদিকে, দ্বীপে অবস্থানরত প্রায় ২৫ হাজার পর্যটককে নিরাপদে রাখতে হোটেলগুলো কম মূল্যে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছে। প্রধানমন্ত্রী অ্যান্ড্রু হোলনেস জানিয়েছেন, জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সসহ বেশ কয়েকটি দেশ সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে।
আল জাজিরা জানিয়েছে, মেলিসা বর্তমানে ঘণ্টায় প্রায় ৩০০ কিলোমিটার বেগে কিউবার দিকে ধেয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, এটি চলতি বছরের সবচেয়ে শক্তিশালী ক্রান্তীয় ঝড়।
বুধবারের মধ্যেই এটি কিউবায় ক্যাটাগরি–৪ মাত্রার শক্তিতে আঘাত হানতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে দেশটিতে অন্তত ৬ লাখ মানুষকে উপকূলীয় অঞ্চল থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর সান্তিয়াগোও রয়েছে। পূর্বাঞ্চলীয় হোলগুইন প্রদেশে ২ লাখের বেশি মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়া হয়েছে।
কিউবার উপপ্রধানমন্ত্রী এদুয়ার্দো মার্টিনেজ বলেন, এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক পরিস্থিতি। আমরা এমন কিছু আগে কখনও দেখিনি।



