Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

বিশ্বকাপ প্রস্তুতির মাঝেই জেন–জি আন্দোলনে উত্তাল মরক্কো

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ০১:০৯ পিএম

বিশ্বকাপ প্রস্তুতির মাঝেই জেন–জি আন্দোলনে উত্তাল মরক্কো

২০৩০ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজনের প্রস্তুতিতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফুটবল স্টেডিয়াম নির্মাণ করছে মরক্কো। ১ লাখ ১৫ হাজার আসনের এই স্টেডিয়াম এবং সংশ্লিষ্ট অবকাঠামো প্রকল্পের খরচ আনুমানিক ৫ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু এই মহাপরিকল্পনাই এখন দেশজুড়ে তীব্র বিক্ষোভের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গত ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে দেশজুড়ে শুরু হওয়া বিক্ষোভে হাজারো তরুণ স্লোগান তুলেছেন—বিশ্বকাপ নয়, স্বাস্থ্যসেবা অগ্রাধিকার হোক এবং আমরা চাই হাসপাতাল, স্টেডিয়াম নয়। তাদের অভিযোগ, সরকার জনগণের মৌলিক চাহিদা উপেক্ষা করে বিলাসবহুল প্রকল্পে বিপুল অর্থ ব্যয় করছে।

২৫ বছর বয়সী কমিউনিকেশন ম্যানেজার হাজর বেলহাসান বলেন,আমি প্রতিবাদ করছি, কারণ আমি চাই আমার দেশ ভালো হোক। আমি মরক্কো ছাড়তে চাই না, কিন্তু আমার দেশ যেন আমাকে অবজ্ঞা না করে।

এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছে জেন–জেড ২১২ নামের একটি তরুণ গোষ্ঠী, যারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—ডিসকর্ড, টিকটক ও ইনস্টাগ্রাম—ব্যবহার করে আন্দোলন সমন্বয় করছে। তাদের অনুপ্রেরণা এসেছে নেপালের সাম্প্রতিক জেন–জি আন্দোলন থেকে।

তরুণদের নেতৃত্বাধীন এই আন্দোলনের দাবি–

  • সবার জন্য বিনা মূল্যে ও মানসম্মত শিক্ষা
  • সহজলভ্য সরকারি স্বাস্থ্যসেবা
  • যথাযথ ও সাশ্রয়ী বাসস্থান
  • উন্নত গণপরিবহন
  • নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমানো ও ভর্তুকি
  • বেতন ও পেনশন বৃদ্ধি
  • যুবকদের কর্মসংস্থান
  • ফরাসির পরিবর্তে ইংরেজিকে দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে গ্রহণ

সেপ্টেম্বরে আগাদিরের এক হাসপাতালে প্রসূতি বিভাগে আট নারীর মৃত্যু বিক্ষোভে আগুন জ্বালায়। প্রতিবেদনগুলো বলছে, পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও সরঞ্জাম থাকলে এই মৃত্যু এড়ানো যেত।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী প্রতি ১০ হাজার জনে অন্তত ২৩ জন ডাক্তার থাকা উচিত; কিন্তু মরক্কোতে ২০২৩ সালে সেই হার ছিল মাত্র ৭.৮ জন।

বিক্ষোভ দমনে পুলিশ ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রাশিদ এল খালফির তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ৪০৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, আহত হয়েছেন ২৬০ পুলিশ ও ২০ বিক্ষোভকারী। সহিংসতায় ৪০টি পুলিশ ভ্যান ও ২০টি ব্যক্তিগত গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

হাকিম নামে ২৩ বছর বয়সী এক বিক্ষোভকারী বলেন, আমি শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদে গিয়েছিলাম, কিন্তু পুলিশ আক্রমণ করে। আমার বাবা সম্প্রতি স্ট্রোক করেছেন—যদি কিছু সঞ্চয় না থাকত, তাঁকে বাঁচানো যেত না। আমরা শুধু সম্মানজনক জীবন চাই।

প্রধানমন্ত্রী আজিজ আখানউচ সংলাপের আহ্বান জানালেও বিক্ষোভকারীরা তা বিশ্বাস করছেন না। তারা ঘোষণা দিয়েছেন, বাস্তব পরিবর্তন না আসা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। শুক্রবার থেকে তারা এমনকি সরকার বিলুপ্ত করার আহ্বানও জানিয়েছেন বাদশাহর প্রতি।

১ অক্টোবর লক্লিয়া শহরে পুলিশ স্টেশন ঘেরাওয়ের সময় গুলি চালিয়ে তিন বিক্ষোভকারীকে হত্যা করার ঘটনায় ক্ষোভ আরও বেড়েছে।

তবু আন্দোলনকারীরা শান্তিপূর্ণ অবস্থান বজায় রাখতে চায়। তারা লুটপাট ও সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছে এবং শহর পরিষ্কারে স্বেচ্ছাসেবক ক্লিন–আপ টিম গঠন করেছে।

বিক্ষোভকারীদের মতে, বিশ্বকাপ আয়োজন মরক্কোর গর্বের বিষয় হতে পারে, তবে এর আগে দেশের ভিত্তি মজবুত করতে হবে। হাজর বেলহাসান বলেন, অবশ্যই আমরা বিশ্বকাপ নিয়ে গর্বিত। আমরা ফুটবল ভালোবাসি—এটা আমাদের রক্তে। কিন্তু শিক্ষা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থা ঠিক না থাকলে এই আয়োজনের মানে কী?

২০৩০ সালের বিশ্বকাপের দিকে এগিয়ে চলা মরক্কো এখন এক নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি—যেখানে ফুটবল নয়, জনগণের দাবি প্রথম সারিতে উঠে এসেছে।

Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher

Major(Rtd)Humayan Kabir Ripon

Managing Editor

Email: [email protected]

অনুসরণ করুন