ইসরায়েলকে গাজায় অবিলম্বে বোমাবর্ষণ বন্ধ করতে বললেন ট্রাম্প
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:৫৮ এএম
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, গাজার নিয়ন্ত্রণকারী হামাস নিজেদের হাতে থাকা সকল ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিতে রাজি হওয়ায় ইসরায়েলকে অবিলম্বে গাজায় বোমাবর্ষণ বন্ধ করতে হবে। ট্রাম্প এই বার্তাটি নিজের সোশ্যাল নেটওয়ার্ক ট্রুথ সোশ্যাল-এ শুক্রবার পোস্ট করেছেন।
ট্রাম্পের বক্তব্য অনুযায়ী, হামাসের সর্বশেষ বিবৃতি দেখে তিনি বিশ্বাস করছেন যে গোষ্ঠীটি দীর্ঘমেয়াদি শান্তির জন্য প্রস্তুত। তিনি বলেছেন, এখনই ইসরায়েলকে গাজায় বোমাবর্ষণ বন্ধ করতে হবে — যাতে আমরা সব জিম্মিকে দ্রুত ও নিরাপদে বের করে আনতে পারি; এই মুহূর্তে সেটা অত্যন্ত বিপজ্জনক। ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন যে ইতোমধ্যেই যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের খুঁটিনাটি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে এবং তার লক্ষ্য কেবল গাজা নয়, পুরো মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করা।
গত সপ্তাহে ট্রাম্প ২০টি পয়েন্ট সম্বলিত একটি নবীন পরিকল্পনা (শান্তি প্রস্তাব) উপস্থাপন করেন। শুক্রবার হামাস সেই পরিকল্পনার প্রতি সমর্থন জানিয়ে নিজেদের হাতে থাকা জীবিত ও মৃত সব ইসরায়ি জিম্মিকে ছেড়ে দেওয়ার সম্মতি জানিয়েছে। একই সঙ্গে হামাস স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও গাজার প্রশাসনিক ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে আলোচনা শুরু করতেও আগ্রহ প্রকাশ করেছে। হামাসের হাইকমান্ড ঘটেই ওই প্রস্তাবে সম্মতি জানায় — যদিও বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে চুক্তির অন্যান্য শর্তগুলো নিয়ে তারা ‘একীভূত ফিলিস্তিনি জাতীয় কাঠামো’-র আলোকে আলোচনা করতে চায়; এতে স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি আঁচ করা হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্লেষণকারীরা ট্রাম্পের প্রস্তাবে হামাসের সম্মতিকে গাজা, ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের জন্য একটি বড় মাইলস্টোন হিসেবে দেখছেন। কারণ গত দুই বছর ধরে গাজার হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে চলা ভয়াবহ যুদ্ধের প্রথম মর্যাদার সমাপ্তির শুরুর দিকটি এই প্রস্তাবটিই হতে পারে। ইসরায়েল ইতোমধ্যে একই প্রস্তাবে সমর্থন জানিয়েছিল; এখন হামাসও সম্মত হওয়ায় বলা হচ্ছে—দুই বছর আগে প্রচণ্ড সংঘাত শুরু হওয়ার পর প্রথমবারের মতো দুই পক্ষ শান্তির সবচেয়ে কাছাকাছি এসেছে।
পটভূমি: ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের যোদ্ধারা ইসরায়েলের ভূখণ্ডে আকস্মিক হামলা চালিয়ে প্রায় ১,২০০ জনকে হত্যা এবং ২৫১ জনকে জিম্মি হিসেবে নিয়ে যায়। জিম্মিদের মুক্তি ও প্রতিশোধমূলক অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) গাজায় কার্যক্রম শুরু করে। দুই বছরের এই অভিযানে গাজায় নিহতের সংখ্যা প্রায় ৬৭ হাজার এবং আহত হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার — যার অধিকাংশ নারী, শিশু ও বেসামরিক ফিলিস্তিনি। গত দুই বছরে কয়েক দফায় হামাস নিজেদের কব্জায় থাকা অধিকাংশ জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে; এখনও লক্ষণীয় যে হামাসের কব্জায় দাঁড়িয়ে আছে ৩৫ জন জিম্মি, যাদের মধ্যে অন্তত ২০ জন বেঁচে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ট্রাম্প পূর্বে হামাসকে আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন — তিনি বলেছিলেন, রোববারের মধ্যে যদি হামাস তার প্রস্তাবের ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া না জানায়, তাহলে গোষ্ঠীটির ওপর কঠোর কর্মব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওই আল্টিমাটামের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই হামাস প্রস্তাবে সম্মত হওয়া সম্পর্কে ঘোষণা করে।
বর্তমানে পরিস্থিতি সংবেদনশীল: হামাসের সম্মতি ও ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় তৈরি হওয়া আলোচনা যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি প্রত্যাবর্তনকে সামনে রেখে এগোবে। ইসরায়েলের বোমাবর্ষণ অব্যাহত থাকলে জিম্মিদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন ঝুঁকিপূর্ণ হবে—এই যুক্তিতেই ট্রাম্প অবিলম্বে গাজায় হামলা বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছেন।
সূত্র : এএফপি



