চন্দ্রগ্রহণ নিয়ে প্রচলিত কিছু কল্পকাহিনি
অনলাইন ডেস্ক :
প্রকাশ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:৩৭ পিএম
বিভিন্ন দেশে চন্দ্রগ্রহণ নিয়ে অনেক মিথ বা কল্পকাহিনি প্রচলিত আছে। এসব কল্পকাহিনির কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই। বিশ্বের বিভিন্ন প্রাচীন সংস্কৃতিতে, বিশেষ করে চীনে চন্দ্রগ্রহণকে একটি ক্ষুধার্ত ড্রাগন বা স্বর্গের কুকুর চাঁদকে গিলে ফেলছে—এমন বিশ্বাস প্রচলিত আছে। আগে চীনের মানুষ মনে করত, এই ড্রাগন চাঁদকে সম্পূর্ণ খেয়ে ফেললে মহাবিশ্বে বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। তাই চন্দ্রগ্রহণ শুরু হলে তারা ড্রাগনকে ভয় দেখাতে জোরে শব্দ করত। এ জন্য স্থানীয় লোকজন ঢোল পেটাত, বাজি ফাটিয়ে চিৎকার করত। তাদের বিশ্বাস ছিল, এতে ড্রাগন ভয় পেয়ে চাঁদকে ছেড়ে দেবে।
নরওয়ের প্রাচীন উপকথায়ও এমন দুটি নেকড়ের কথা বলা হয়েছে, যারা সূর্য ও চাঁদকে তাড়া করে। একটি নেকড়ে যখন চাঁদকে ধরে ফেলে তখন চন্দ্রগ্রহণ হয়।
প্রাচীন অনেক সংস্কৃতিতে রক্তিম চন্দ্র বা ব্লাড মুন অমঙ্গলজনক বলে বিশ্বাস করা হতো। প্রাচীন ইনকা সভ্যতায় মানুষ বিশ্বাস করত, একটি জাগুয়ার চাঁদকে আক্রমণ করে রক্ত ঝরাচ্ছে। তারা মনে করত, জাগুয়ার পৃথিবীতে নেমে এসে মানুষকেও আক্রমণ করতে পারে। তাই তারা হিংস্র প্রাণীদের ভয় দেখাতে কুকুরকে পেটাত। মেসোপটেমিয়ার মানুষেরা মনে করত, চন্দ্রগ্রহণ মানেই কোনো রাজার ওপর আসন্ন বিপদ। তারা তাদের রাজাকে রক্ষার জন্য সাধারণ মানুষকে রাজার পোশাক পরিয়ে দিত যেন বিপদ সেই সাধারণ মানুষের ওপর দিয়ে চলে যায়।
দক্ষিণ আমেরিকার কিছু আদিবাসী চন্দ্রগ্রহণকে চাঁদের অসুস্থতা হিসেবে দেখত। তারা মনে করত, চাঁদ অসুস্থ বা দুর্বল হয়ে পড়লে এটি ধীরে ধীরে ম্লান হতে থাকে। চাঁদকে সুস্থ করতে ও শক্তি ফিরিয়ে আনতে তারা বিভিন্ন ধর্মীয় রীতিনীতি পালন করত।
অনেক সংস্কৃতিতে গর্ভবতী নারীদের জন্য চন্দ্রগ্রহণের সময় কিছু কঠোর নিয়ম মেনে চলার বিধান ছিল। মেক্সিকো ও লাতিন আমেরিকার কিছু অংশে প্রচলিত বিশ্বাস ছিল যে চন্দ্রগ্রহণের সময় গর্ভবতী নারীরা কোনো ধারালো বস্তু ব্যবহার করলে, লাল কাপড় পরলে অনাগত সন্তানের ওপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে। মেক্সিকোর অ্যাজটেক সভ্যতায় এমন বিশ্বাসও ছিল, গর্ভবতী নারীরা কোনো ধারালো বস্তু ধরলে তাদের সন্তানের ঠোঁট কাটা হতে পারে। তাদের এই বিশ্বাস চন্দ্রগ্রহণের লাল রঙের সঙ্গে জড়িত ছিল।
আধুনিক বিজ্ঞান অনুযায়ী, চন্দ্রগ্রহণ একটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ঘটনা। এটি তখন ঘটে যখন পৃথিবী সূর্য ও চাঁদের মাঝখানে চলে আসে এবং সূর্যের আলোকে চাঁদে পৌঁছাতে বাধা দেয়। এতে পৃথিবীর ছায়া চাঁদের ওপর পড়ে। আলোর প্রতিসরণের কারণে চাঁদ তখন হালকা লাল বা তামাটে রং ধারণ করে, যা ব্লাড মুন নামে পরিচিত। এ ঘটনা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য কোনো ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে না।
সূত্র: এনডিটিভি, স্পেস ও ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক



