বাংলাদেশকে হেসেখেলে হারিয়ে সিরিজ জিতল আফগানিস্তান
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২০ এএম
ছবি: সংগৃহীত
দলীয় বিপর্যয়ে ৯৮ রানের বীরত্বপূর্ণ এক ইনিংস খেলেছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তবে আফগান ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজের সেঞ্চুরিতে পূর্ণতা পায়নি রিয়াদের অবিশ্বাস্য এই ইনিংস। গুরবাজের সেঞ্চুরিতে সহজেই ম্যাচ নিজেদের করে নিয়েছে আফগানরা। এতে সিরিজও জিতেছে স্বাগতিকরা।
সোমবার (১১ নভেম্বর) শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ২৪৪ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস। জবাবে ১০ বল ও ৫ উইকেট হাতে রেখেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় আফগানিস্তান। এই জয়ে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতলো আফগানরা।
বাংলাদেশের দেওয়া মাঝারি লক্ষ্য তাড়ায় নেমে দলকে ভালো শুরু এনে দেন দুই ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও সেদিকউল্লাহ আতাল। উদ্বোধনী জুটিতে ৪১ রান সংগ্রহ করেন তারা। তবে নাহিদ রানার একের পর এক গতিময় ডেলিভারিতে হাঁসফাঁস করতে থাকেন দুই আফগান ওপেনার। আগুনে বোলিংয়ের ফল-ও দ্রুতই পেয়ে যান রানা। আতালকে নিজের গতিতে পরাস্ত করেন এই পেসার। নাহিদের বলে বোল্ড হয়ে ১৮ বলে ১৪ রান করে ফেরেন এই ওপেনার।
তিনে নেমে রহমত শাহও সুবিধা করতে পারেননি। মোস্তাফিজের খাটো লেংথের ডেলিভারিতে পুল করতে চেয়েছিলেন। তবে ব্যাটের ঠিক জায়গায় হয়নি। ডাইভ দিয়ে ফিরতি ক্যাচ নেন ফিজ। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে ২২ বলে ৮ রান এসেছে।
এরপর শাহিদিকেও নিজের শিকার বানান কাটার-মাস্টার। স্লিপে সৌম্যর দুর্দান্ত ক্যাচে ২১ বল খেলে ৬ রানের বেশি করতে পারেননি আফগান অধিনায়ক।
সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মিছিলে একপ্রান্ত আগলে রেখে রানের চাকা সচল রাখেন ওপেনার গুরবাজ। ৬০ বলে ফিফটির পর ৫ চার ও ৭ ছক্কায় ১১৭ বলে তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগারও ছুঁয়ে ফেলেন। তবে সেঞ্চুরির পর আর টিকতে পারেননি। ইনিংসের ৩৯তম ওভারে মিরাজের চতুর্থ ডেলিভারিতে স্কয়ার লেগে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন গুরবাজ। এতে ১২০ বলে ১০১ রানে থামে তার ইনিংস। এতে পঞ্চম উইকেটে ১১১ বলে ওমরজাই–গুরবাজের ১০০ রানের জুটিও ভাঙে।
এরপর গুলবদিন নাইবও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ৪১তম ওভারের নাহিদের দ্বিতীয় বলে আকাশে তুলেছিলেন। পরে বলের নিচে দাঁড়িয়ে ক্যাচ নেন জাকের আলী। ৫ বলে ১ রানে ফেরেন নাইব। শেষদিকে ওমরজাই ও মোহাম্মদ নবির ব্যাটে ভর করে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় আফগানরা। এই জয়ে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতলো স্বাগতিকরা।
এর আগে, টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে সৌম্য সরকার আক্রমণাত্মক খেললেও দেখেশুনেই স্কোরশিট সচল রেখেছিলেন তামিম। সাবলীল ব্যাটিংয়ে দলীয় ৫০ পার করেন এই দুই ওপেনার। তবে দলীয় ৫৩ রানে জোড়া উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ওমরজাইয়ের বলে বোল্ড হয়ে ২৩ বলে ২৪ রান করে প্যাভিলিয়নে ফেরেন সৌম্য। আরেক ওপেনার তামিমও সাজঘরের পথ ধরেন। নবির বলে শাহীদীর হাতে ক্যাচ দিয়ে ২৯ বলে ১৯ রান করে ফেরেন তিনি।
তিনে নেমে জাকিরও দেখেশুনেই খেলছিলেন। তবে মিরাজের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে বেশিক্ষণ ক্রিজে থাকতে পারেননি টপ-অর্ডার এই ব্যাটার। রান-আউট হয়ে ব্যক্তিগত ৪ রানে ফেরেন জাকির।
চারে নেমে হৃদয়ও আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি। রশিদ খানের বলে স্লিপে গুলবাদিন নাইবের হাতে ধরা পড়েন তিনি। ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ১৪ বলে ৭ রান।
পঞ্চম উইকেটে মিরাজকে সঙ্গে নিয়ে ধাক্কা সামলে নেন রিয়াদ। বিপর্যয় সামলে ৬৩ বলে নিজের ২৯তম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন মাহমুদউল্লাহ।
মিরাজও ফিফটির দেখা পেয়ে যান। নবির করা ৪১তম ওভারের পঞ্চম ডেলিভারিতে এক রান নিয়ে ওয়ানডেতে নিজের চতুর্থ ফিফটি ছুঁয়ে ফেলেন মিরাজ। তবে এরপর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি অধিনায়ক হিসেবে অভিষেকে ফিফটি পাওয়া এই অলরাউন্ডার।
এরপর জাকের আলিও সুবিধা করতে পারেননি। ওমরজাইয়ের করা ৪৮তম ওভারের দ্বিতীয় ডেলিভারিতে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে মাত্র ১ রানে ফেরেন উইকেটকিপার এই ব্যাটার।
সতীর্থদের বিদায়ে একপ্রান্ত রেখেছিলেন রিয়াদ। তবে ক্যারিয়ারের পঞ্চম শতকের বেশ কাছে গিয়েও আক্ষেপে পুরেন মাহমুদউল্লাহ। ইনিংসের শেষ বলে ৯৮ রানে ফেরেন অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার। শেষমেশ ৮ উইকেট হারিয়ে ২৪৪ রানের সংগ্রহ পেয়েছিল বাংলাদেশ।