ছবি: সংগৃহীত
তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটিতে বাংলাদেশকে ২৩৬ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দিয়েছিল আফগানিস্তান। তবে ব্যাটারদের ব্যর্থতায় এই পুঁজিও তাড়া করে জিততে পারেনি টাইগাররা। বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন-আপকে একাই ধসিয়ে দেন গজানফর। ৬ উইকেট তুলে নিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করেন তিনি।
বুধবার (৬ নভেম্বর) শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ৪৯ দশমিক ৪ ওভারে ২৩৫ রানেই গুটিয়ে যায় আফগানিস্তান। জবাবে ১৪৩ রানের বেশি করতে পারেনি বাংলাদেশ। ফলে ৯২ রানের জয়ে ১-০ ব্যবধানে সিরিজে এগিয়ে গেল আফগানরা।
আফগানদের ছুঁড়ে দেওয়া ২৩৬ রান তাড়া করতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। ইনিংসের চতুর্থ ওভারেই প্যাভিলিয়নে ফেরেন তানজিদ হাসান তামিম। গজানফরের বলে দলীয় ১২ রানে ৫ বলে মাত্র ৩ রান করে আউট হয়ে যান এই ওপেনার।
এরপর ক্রিজে আসা শান্তকে সঙ্গে নিয়ে ব্যাট করতে থাকেন আরেক ওপেনার সৌম্য। তবে ইনিংস বড় করতে পারেননি। ওমরজাইয়ের খাটো লেংথে ডেলিভারিতে পুল করতে চেয়েছিলেন। তবে ব্যাট-বলে ঠিকমতো না হওয়ায় ৪৫ বলে ৩৩ রান করে ফাইন লেগে ধরা পড়েন সৌম্য।
এরপর তৃতীয় উইকেটে মিরাজের সঙ্গে জুটি গড়েন শান্ত। তাদের জুটিতেই দলীয় একশ পেরোয় বাংলাদেশ। সাবলীল ব্যাটিংয়ে ফিফটির দিকেই এগোচ্ছিলেন টাইগার দলপতি। তবে ধৈর্য হারিয়ে সাজঘরে ফেরেন টপ-অর্ডার এই ব্যাটার। ৬৮ বলে ৪৭ রান করে হাশমতউল্লাহর হাতে ক্যাচ দিয়ে শান্ত ফিরলে ভাঙে তাদের ৫৫ রানের জুটি।
শান্ত ফেরার পর মিরাজও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। গজানফরের বলে সুইপ করেছিলেন মিরাজ। স্কয়ার লেগে অনেকটা দৌড়ে এসে ডাইভে দুর্দান্ত ক্যাচ নেন ওমরজাই। ৫১ বলে ২৮ রান করে ফেরেন এই অলরাউন্ডার।
এরপর ব্যাটিংয়ে নেমে রশিদ খানের গুগলি বুঝতেই পারেননি মাহমুদউল্লাহ। ৫ বলে ২ রান করে বোল্ড হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন মিস্টার সাইলেন্টকিলার।
৭ বলে ব্যবধানে জোড়া উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে টাইগাররা। তবে এই চাপ সামলে উঠার আগেই মুশফিকের উইকেট হারায় সফরকারীরা। ব্যক্তিগত ১ রানে মুশিকে ফিরিয়ে রোনালদোর মতো উদ্যাপনে মাতেন গজানফর।
মুশির বিদায়েই হারের শঙ্কায় পড়ে লাল-সবুজেরা। এরপর রিশাদকে এলবিডব্লু করেন গজানফর। আর তাসকিনকে বোল্ড করে ফাইফার তুলে নেন গজানফর। মূলত তাকে বুঝতেই পারছিল না লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। ১৮ বল ব্যবধানে ৬ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় বাংলাদেশ। শেষমেশ ৩৪ দশমিক ৩ ওভারে ১৪৩ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস।
এর আগে, টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে সতর্ক শুরু করেছিল আফগানিস্তান। তবে দ্বিতীয় ওভারেই সাফল্য পায় বাংলাদেশ। তাসকিনের ফুলার লেংথ ডেলিভারিতে উইকেটের পেছনে মুশফিকের হাতে ক্যাচ দিয়ে মাত্র ৫ রানে ফেরেন রহমানুল্লাহ গুরবাজ।
এরপর অষ্টম ওভারে প্রথমবার আক্রমণে এসে দ্বিতীয় ডেলিভারিতেই উইকেট তুলে নেন মোস্তাফিজ। বাঁ-হাতি এই পেসারের স্টাম্পে পড়ে বেরিয়ে যাওয়া ডেলিভারিতে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন রহমত শাহ (২)।
পরের ওভারে জোড়া উইকেট তুলে নেন ফিজ। প্রথমেই অভিষিক্ত ওপেনার আতালকে সাজঘরে ফেরান ফিজ। এই ওপেনারকে ফেরানোর দুই বল পর ওমরজাইকে ফেরান কাটার মাস্টার। ফিজের লেংথ বলে দ্বিধা নিয়ে খেলতে গিয়ে রানের খাতা খোলার আগেই সাজঘরে ফেরেন এই ব্যাটার।
২০তম ওভারের শেষ বলে নিজের দ্বিতীয় উইকেটের দেখা পেয়ে যান তাসকিন। মিড-উইকেটে তানজিদের হাতে ক্যাচ দিয়ে ৩২ বলে ২২ রান করে ফেরেন গুলবদিন নাইব।
ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে মোহাম্মদ নবীকে সঙ্গে নিয়ে বিপর্যয় সামাল দেন হাশমতউল্লাহ। বিপর্যয় সামলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২২তম ফিফটিও তুলে নেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। অন্যপ্রান্তে নবীও ওয়ানডেতে নিজের ১৭তম ফিফটি তুলে নেন। তবে হাফ-সেঞ্চুরির পর ক্রিজে থিতু হতে পারেননি হাশমতউল্লাহ। ফিজের অফ স্টাম্পের বাইরের বল খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়ে ৯২ বলে ৫২ রানে ফেরেন এই ব্যাটার।
এরপর রশিদকে ফিরিয়ে শরীফুলও উইকেট নেওয়ার খাতায় নাম লেখান। শরীফুলের বলে মিড উইকেটে ফিজের হাতে ক্যাচ দিয়ে ১০ রানে ফেরেন রশিদ।
দলীয় ২০০-র পর সেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তে থাকা মোহাম্মদ নবীও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। তাসকিনকে পুল করতে গিয়ে স্কয়ার লেগে ক্যাচ দিয়ে ৩ ছক্কা ও ৪ চার সাজঘরে ফেরেন এই অলরাউন্ডার। পরের বলে গাজানফারকেও বোল্ড আউট করেন তাসকিন।
শেষদিকে নয়ে নামা স্পিন অলরাউন্ডার খারোতের ২ চার ও ১ ছক্কায় ২৭ রানের ক্যামিওতে ৪৯ দশমিক ৪ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২৩৫ রানের সংগ্রহ পায় আফগানরা।