ছবি - শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ নির্ধারণী দ্বিতীয় ম্যাচ জয়ের পর বাংলাদেশ দল
ছুটির দিন হওয়ায় রাংগিরির গ্যালারি ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। টিকিট না পেয়ে সুড়ঙ্গপথে কেউ কেউ স্টেডিয়ামে ঢোকেন। উদ্দেশ্য দ্বিতীয় টি২০ ম্যাচে শ্রীলঙ্কার জয় দেখা। সারাক্ষণ উৎসবের ‘মুডে’ স্টেডিয়াম মাতিয়ে রাখা দর্শকদের শেষে ফিরতে হলো ম্লানমুখে। ম্যাচের শেষ না দেখেই বেরিয়ে যান বেশিরভাগ দর্শক। কারণ বাংলাদেশ দলের মারাত্মক বোলিং মোকাবিলা করতে নেমে শ্রীলঙ্কা ৮৩ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে ফেললে সবাই বুঝে যান জয়ী হতে চলেছে কে।
ক্যান্ডির পাল্লেকেলেতে হার দিয়ে সিরিজ শুরু করে ডাম্বুলায় বিজয় নিশান উড়াল বাংলাদেশ। সিরিজ বাঁচানোর এ ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছে ৮৩ রানে, যা টেস্টখেলুড়ে দলের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বাধিক রানের জয়। সিরিজে ১-১ সমতা নিয়ে আজ কলম্বো যাচ্ছে বাংলাদেশ। প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে ১৬ জুলাই হবে সিরিজের নিষ্পত্তি।
ডাম্বুলায় জয়ের ভিত তৈরি হয়েছিল ব্যাটিংয়ে। লিটন কুমার দাস ও শামীম হোসেন পাটোয়ারীর ইমপ্যাক্ট ইনিংসে ভর করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৭৭ রান করে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কাকে হারানোর নায়ক অধিনায়ক লিটন। তিনি ভালো খেলায় স্বস্তি ফিরেছে ড্রেসিংরুমে। স্কুপ শটে ফাইন লেগ দিয়ে বল সীমানার ওপারে আছড়ে ফেলা, স্লগ সুইপে ডিপ মিডউইকেট খুঁজে নেওয়া, এক্সট্রা কাভার দিয়ে ৪ মারা লিটন কুমার দাসের ব্যাটিং দেখে কারও মনে হওয়ার কথা নয়, এক ম্যাচ আগেও অফ ফর্মে ছিলেন তিনি। গতকাল কেউ তাঁর ব্যাটিং প্রথম দেখে থাকলে বিশ্বাস করবেন না ১৩ ইনিংস পর হাফ সেঞ্চুরি পেলেন লিটন। যে হাত যুগল ছবির মতো শট খেলে, যে ব্যাট শিল্পীর; তাঁকে ছন্দহীন মানায় না! ওখানেই ট্র্যাজেডি লিটনের। ক্রিকেটের কোনো সংস্করণেই ধারাবাহিক নন তিনি। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে একটু বেশিই অধারাবাহিক। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে রাংগিরি স্টেডিয়ামে তাঁর ৭৬ রানের ঝলমলে ইনিংসটি দেখে থাকলে ক্রিকেট অনুরাগীদের মনে হতে পারে, লিটন কেন নিয়মিত এভাবে খেলেন না? তাঁর মতো ব্যাটারের কাছ থেকে এ রকম গোছানো ইনিংস পেলে অধারাবাহিকতা থাকতে হবে না বাংলাদেশকে।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ নির্ধারণী দ্বিতীয় ম্যাচের শুরুটা শেষের মতো ছিল না। ৫ রানে পারভেজ হেসেন ইমনকে ইনসুইং ডেলিভারিতে বোল্ড করেন তুষারা। দলের ৭ রানে তানজিদ হাসান তামিম ক্যাচ তুলে আউট। লিটন দাস ও তাওহীদ হৃদয় ওখান থেকে নতুন করে শুরু করেন। তৃতীয় ওভার থেকে জুটি বাঁধার অর্থ অনেকটা ওপেনিংয়ে নতুন শুরু করা। সেট হয়ে ৫৫ বলে ৬৯ বলের জুটি দু’জনের। ২টি চার ও ১টি ছয়ের মারে ২১ বলে ৩১ রান করেন হৃদয়। ইনিংসে সবচেয়ে কার্যকর জুটি লিটন ও শামীম হোসেন পাটোয়ারীর। ৩৯ বলে ৭৭ রান যোগ করেন তারা। এই জুটিতে লিটন ১৮ বলে ৩৭ ও পাটোয়ারী ২১ বলে ৩৭ রান করেন। লিটন হাফ সেঞ্চুরি করেন ৩৯ বলে। থিকসেনাকে ৬ মেরে দ্বাদশ টি২০ অর্ধশতকে পৌঁছান। শামীম রানআউট না হলে দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি পেতেন তিনিও। প্রথম থেকে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করা শামীম ১৭৭.৭৭ স্ট্রাইকরেটে ৪৮ রান করেন ২৭ বলে। লিটন সব সময় বলেন টি২০ ম্যাচে ১২০ বা ১২৫ স্ট্রাইক রেটে অকার্যকর। তিনি দেড়শ স্ট্রাইকরেটে খেলার পক্ষে। গতকাল সমতায় ফেরার ম্যাচে ১৫২ স্ট্রাইকরেটে খেলেছেন ৩০ বছর বয়সী এ ব্যাটার। মূলত দুটি ইমপ্যাক্ট ইনিংসের কারণেই নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৭৭ রান করতে পেরেছে বাংলাদেশ।
১৭৭ রান তাড়া করতে নামা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম থেকেই সমন্বিত বোলিং করেন শরিফুল ইসলামরা। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, মুস্তাফিজুর রহমান, রিশাদ হোসেন জ্বলে উঠেছিলেন আপন শক্তিতে। একের পর এক উইকেট নিয়ে ৯৪ রানে অলআউট করে দেন স্বাগতিকদের। শ্রীলঙ্কার পাথুম নিশাঙ্কা ও দাশুন শানাকা ছাড়া কেউই দুই অঙ্কে যেতে পারেননি। বোলিংয়ের সঙ্গে নিশ্ছিদ্র ফিল্ডিং করায় ভালোভাবে জেতা সম্ভব হয়েছে। একটিও ক্যাচ পড়েনি, ফিল্ডারদের মাঝ দিয়ে বল যেতে পারেনি বাউন্ডারিতে। যেটা ছয় ম্যাচ পর জয়ের ফুল ফোটাতে সহজ করেছে।



