বরুসিয়া ডর্টমুন্ড থেকে ১৩ কোটি ৫৫ লাখ পাউন্ডে ২০১৭ সালে বার্সেলোনায় যোগ দেন উসমান দেম্বেলে। নেইমারের পর তখন তিনি বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দামি খেলোয়াড়। বার্সেলোনা সভাপতি হোয়ান লাপোর্তা চার বছর পর ২০২১ সালে দেম্বেলেকে নিয়ে বলেছিলেন, ‘সে কিলিয়ান এমবাপ্পের চেয়েও ভালো।’
সে বছরই বার্সার কোচ হওয়ার পর জাভি হার্নান্দেজ দেম্বেলের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছিলেন, ‘ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারলে সে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় হতে পারে।’ কিন্তু দুই মাস পর ঘটল উল্টোটা। আর্থিক সমস্যায় জর্জরিত বার্সার পক্ষ থেকে দেম্বেলেকে বলা হলো, হয় কম বেতনে নতুন চুক্তি করো কিংবা চলে যাও। জাভিও তাঁকে স্কোয়াডের বাইরে রাখতে শুরু করলেন। বার্সায় দেম্বেলের ছয় বছরকে বুঝতে এটুকু তথ্যই যথেষ্ট। অমিত প্রতিভাবান হলেও চোট, অধারাবাহিকতা ও ক্লাবের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় খুব বেশি ম্যাচ খেলতে না পারা—এই ছিল দেম্বেলের বার্সা ক্যারিয়ার। বার্সার হয়ে ১৮৫ ম্যাচ খেলে করেছিলেন ৪০ গোল।
২০২৩ সালের আগস্টে এই দেম্বেলেকেই ৪ কোটি ৩৫ লাখ পাউন্ডে কেনে পিএসজি। এরপর মাত্র দুই মৌসুমেই বার্সার গোল সংখ্যাকে ছাপিয়ে গেছেন ফরাসি উইঙ্গার। পিএসজির হয়ে এ পর্যন্ত দুই মৌসুমে ৯৪ ম্যাচে করেছেন ৪১ গোল। কাল রাতে ক্লাব বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে পিএসজির ৪-০ গোলের বড় জয়ে দেম্বেলে শুধু গোলই করেননি, একটি গোলও করিয়েছেন। এমন ম্যাচের পর পিএসজি কোচ লুইস এনরিকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন দেম্বেলেকে।
ঊরুতে চোট পাওয়ায় ক্লাব বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে বেঞ্চে কেটেছে দেম্বেলের। শেষ ষোলো ও কোয়ার্টার ফাইনালে বেঞ্চ থেকে নেমেছেন, আর সেমিফাইনালে ছিলেন একাদশে। তাঁর পারফরম্যান্সের প্রশংসা করে এনরিকে বলেছেন, ‘এই প্রথম আমরা দেম্বেলেকে একাদশে পেলাম। আমার মতে সে মৌসুমের সেরা খেলোয়াড়। সবকিছু জয় তার পাওনা, কারণ সে ক্লাবকে সর্বস্ব উজাড় করে দিয়েছে।’
এ মৌসুমে এখন পর্যন্ত অংশ নেওয়া সব প্রতিযোগিতারই শিরোপা জিতেছে পিএসজি—ফ্রেঞ্চ কাপ, লিগ আঁ ও চ্যাম্পিয়নস লিগ। দেম্বেলে পিএসজির ও সাফল্যের ‘নিউক্লিয়াস’—লিগ আঁতে যৌথভাবে করেছেন সর্বোচ্চ ২১ গোল, যদিও মার্শেইয়ের ম্যাসন গ্রিনউডের (৩৪) চেয়ে তিনি কম ম্যাচ (২৯) খেলেছেন। আর সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৫২ ম্যাচে ৩৫ গোল ও ১৬টি গোল করানো দেম্বেলে এ মৌসুমে পিএসজির সর্বোচ্চ গোলদাতাও।
দেম্বেলে এবার ব্যালন ডি’অর জয়ের যোগ্য—এ কথা চলতি মৌসুমে আগেও বলেছেন এনরিকে। কাল রাতে রিয়ালকে বিদায় করার পর বললেন আবারও, ‘ব্যালন ডি’অর অনেকেই জিততে পারেন। সে জন্য অনন্য কিছু দক্ষতার প্রয়োজন। পাসিং, ড্রিবলিং ও দলকে সাফল্য পেতে সাহায্য করা। একজন খেলোয়াড় এসব শর্তই পূরণ করেছেন, আর তিনি হলেন উসমান দেম্বেলে। অন্যদের থেকে সে আলাদা।’
ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালে রোববার চেলসির মুখোমুখি হবে পিএসজি। এনরিকের এ ম্যাচেও দেম্বেলেকে দারুণ ফর্মে চান, ‘সে এমন খেলোয়াড় যার খেলা সবাই দেখতে চায়... আশা করি ফাইনালেও তাকে পাব।’
পিএসজিতে দেম্বেলে এবার কেমন ফর্মে আছেন, সেটা তাঁর ক্লাব ক্যারিয়ারে তাকালেই বোঝা যায়। রেঁনে, ডর্টমুন্ড, বার্সা ও পিএসজি— এখন পর্যন্ত দেম্বেলের চার ক্লাব। এর মধ্যে রেঁনের হয়ে ২৯ ম্যাচে করেছেন ১২ গোল, ডর্টমুন্ডের হয়ে ৫০ ম্যাচে ১০ গোল আর বার্সার গোলসংখ্যা তো আগেই বলা হয়েছে। মজার বিষয়, পিএসজির হয়ে তাঁর ৪১ গোলের ৩৫টি–ই এ মৌসুমে!
এবার ব্যালন ডি’অর জয়ের দৌড়ে দেম্বেলের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনা তারকা লামিনে ইয়ামাল। ক্লাব ও জাতীয় দলের হয়ে এ মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৬২ ম্যাচে ২১ গোল করার পাশাপাশি ২৫ গোল করিয়েছেন ইয়ামাল। বার্সা জিতেছে লিগ, কোপা দেল রে ও স্প্যানিশ সুপার কাপ। স্পেনের হয়ে রানার্স আপ হয়েছেন নেশনস লিগে।
ক্লাব বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে প্রথমার্ধে রিয়াল যেখানে মাত্র একটি গোলের সুযোগ তৈরি করেছে, দেম্বেলে সেখানেই তিনটি সুযোগ তৈরি করেন। এ ম্যাচের আগেও ব্যালন ডি’অর নিয়ে কথা বলেছেন দেম্বেলে, ‘ব্যালন ডি’অর নিয়ে ভাবছি। মৌসুমটা যেমন কাটলে তাতে আমি (ব্যালন ডি’অর) খুব বেশি দূরে নেই।’
তবে পিএসজি শিবির থেকে সবার মনের কথাটা বলেছেন সম্ভবত ক্লাবটির প্রেসিডেন্ট নাসের আল খেলাইফি। রিয়ালের মুখোমুখি হওয়ার কয়েকদিন আগে ডিএজেডএনকে খেলাইফি বলেন, ‘উসমানের জন্য দারুণ মৌসুম। সে না জিতলে ব্যালন ডি’অরে সমস্যা আছে। কারণ সে সবকিছুই করেছে।’
২২ সেপ্টেম্বর প্যারিসে দেওয়া হবে ব্যালন ডি’অর পুরস্কার।



