Logo
Logo
×

বিশেষ সংবাদ

২০২৪ সালে দীর্ঘায়িত ইন্টারনেট শাটডাউন, আইসিটি খাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে

Icon

প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:২৩ পিএম

২০২৪ সালে দীর্ঘায়িত ইন্টারনেট শাটডাউন, আইসিটি খাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে

ফাইল ছবি

২০২৪ সালের শেষ প্রান্তে এসে বাংলাদেশের সবচেয়ে উদ্বেগজনক ঘটনা হিসেবে রয়ে গেছে জুলাই মাসের গণ-অভ্যুত্থানের সময় দীর্ঘায়িত ইন্টারনেট শাটডাউন। এটি শুধুমাত্র যোগাযোগ বিঘ্নিত করেনি, বরং দেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) এবং ই-কমার্স খাতে আনুমানিক ২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি করেছে।

এই ইন্টারনেট শাটডাউন কার্যকর করা হয়েছিল প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনের সময়। প্রাথমিকভাবে ইন্টারনেট সংযোগ ১৮ জুলাই বিচ্ছিন্ন হয় এবং ধাপে ধাপে চলতে থাকে, যা মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড উভয় পরিষেবায় প্রভাব ফেলে।

ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ২৪ জুলাই এবং মোবাইল ইন্টারনেট ২৮ জুলাই পুনরায় চালু হলেও ফেসবুক, ইউটিউব ও টিকটকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ৩১ জুলাই পর্যন্ত অপ্রাপ্য ছিল।

এই সময়ে বাংলাদেশের উদীয়মান আইসিটি খাতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়ে। বাংলাদেশ ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন (ই-ক্যাব) অনুসারে, শাটডাউনের প্রথম ১০ দিনেই ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। শাটডাউনের শেষে ই-কমার্স খাতে মোট আনুমানিক ক্ষতি ২ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছায়।

এর প্রভাব ই-কমার্সের বাইরে ব্যাংক, বীমা কোম্পানি, অফিস এবং বিমানবন্দরে ইন্টারনেট নির্ভর কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করে। ডিজিটাল মার্কেটিং, কন্টেন্ট ক্রিয়েশন এবং অনলাইন লেনদেনে নির্ভরশীল ব্যবসাগুলো মারাত্মক বিঘ্নের সম্মুখীন হয়। স্টার্টআপ এবং ছোট আকারের ডিজিটাল উদ্যোক্তারা বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, অনেকেই পুনরুদ্ধার করতে বছরের পর বছর লাগবে বলে জানান।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত কথিত সরকারবিরোধী প্রচারণা দমনের লক্ষ্য ছিল। তবে এই পদক্ষেপগুলো মুক্ত মতপ্রকাশের পথে বাধা এবং ডিজিটাল অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি করে।

সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এই শাটডাউনকে সমর্থন করে বলেন যে, প্রতিবাদকারীদের দ্বারা তথ্য সংযোগ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে তদন্তে এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি এবং তার বক্তব্যগুলো সমালোচনা থেকে মুক্ত থাকার প্রচেষ্টা হিসেবে খারিজ করা হয়েছে।

এই দীর্ঘায়িত বিচ্ছিন্নতা বাংলাদেশের আইসিটি খাতে এক নজিরবিহীন ধাক্কা হিসেবে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে, যা উদীয়মান ডিজিটাল অর্থনীতি হিসেবে দেশের সুনাম ক্ষুন্ন করেছে। বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, এমন পদক্ষেপ বিদেশি বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করে এবং খাতের সার্বিক প্রবৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই ঘটনায় একটি তদন্ত শুরু করেছে, যেখানে আইসিটি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম নেতৃত্ব দিচ্ছেন। প্রাথমিক অনুসন্ধানগুলোতে দেখা গেছে যে, সেই সময়ের প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি আদেশে শাটডাউন কার্যকর করা হয়েছিল।

যদিও ইন্টারনেটকে দীর্ঘকাল ধরে আধুনিক সংযোগ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির স্তম্ভ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে, ২০২৪ সালের শাটডাউন রাজনৈতিক সংকটের মুখে বাংলাদেশের ডিজিটাল অবকাঠামোর ভঙ্গুরতা উন্মোচিত করেছে। আইসিটি খাতের জন্য দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতা অর্জনে বিশ্বাস পুনর্গঠন ও অবিচ্ছিন্ন সেবা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সূত্র : ইউএনবি

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন