মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত
জাতীয় নির্বাচনের জন্য অযোগ্য আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৩৪ এএম
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের সম্ভাবনা এখনো অনিশ্চিত। তবে শেষ মুহূর্তে সুযোগ মিললেও দলটির বেশির ভাগ নেতা-কর্মী প্রার্থী হতে পারবেন না—মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত হওয়ায় তারা অযোগ্য হয়ে পড়েছেন।
সম্প্রতি সংশোধিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন (আইসিটি) ও গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশের (আরপিও) বিধান অনুযায়ী, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় কারও বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র দাখিল হলে তিনি জাতীয় বা স্থানীয় নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না।
গত এক বছরে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে অন্তত ৪৫০টি অভিযোগ দায়ের হয়েছে আইসিটিতে। এসব মামলায় আসামির তালিকায় রয়েছেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের শতাধিক নেতা, সাবেক সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তা, এমনকি প্রভাবশালী আমলারাও। এর মধ্যে ৩০টি মামলায় আনুষ্ঠানিক চার্জশিট দাখিল হয়েছে; মোট আসামি ২০৯ জনের মধ্যে ৮৪ জন ইতোমধ্যে কারাগারে, বাকিরা পলাতক।
দলের ৮১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটির বেশিরভাগ নেতা এখন হয় কারাগারে, না হয় আত্মগোপনে আছেন। আইসিটির বাইরে জুলাই মাসের গণ-অভ্যুত্থানকালে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে আরও ৮৩৭টি মামলা রেকর্ড হয়েছে, যার মধ্যে ৪৫টি চলছে আইসিটিতে এবং বাকি মামলাগুলোর বিচার হবে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে। তবে এসব মামলা নির্বাচনে বাধা নয়—বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে আইসিটি ও আরপিওর সংশোধনী।
গত বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আরপিওর সংশোধনী অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে বলা হয়েছে, মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত বা পলাতক কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। একইভাবে ৮ অক্টোবরের সংশোধিত আইসিটি আইনেও বলা হয়েছে, আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের সঙ্গে সঙ্গে অভিযুক্ত ব্যক্তি প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা হারাবেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, শেখ হাসিনাসহ বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রায় সব মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, উপদেষ্টা, এমপি, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতাদের নামও মামলার তালিকায় আছে। ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় নেতারাও অভিযুক্ত হয়েছেন।
গ্রেপ্তার থাকা নেতাদের মধ্যে রয়েছেন—আমির হোসেন আমু, কাজী জাফর উল্যাহ, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, আব্দুর রাজ্জাক, কর্নেল ফারুক খান, শাজাহান খান, কামরুল ইসলাম, দীপু মনি, আহমদ হোসেন, বি এম মোজ্জাম্মেল হক, আব্দুস সোবহান গোলাপ, আনিসুল হক, সালমান এফ রহমান, শামসুল হক টুকু, টিপু মুনশি, সাধন চন্দ্র মজুমদার, ফিরোজ, জুনাইদ আহমেদ পলক, আরিফ খান জয়, হাজি সেলিম, তার ছেলে সোলায়মান সেলিম, তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, আসাদুজ্জামান নূর, নূরুল ইসলাম সুজন, মাহবুব আলী, শাহে আলম, ফরহাদ হোসেন, তানভীর ইমাম, সেলিম আলতাফ জর্জ, সাদেক খান ও শায়ে আলম মুরাদ।
এদিকে পলাতক রয়েছেন শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি সাবেক স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, শেখ হেলাল, শেখ সালাহ উদ্দিন, তন্ময়সহ একাধিক সাবেক মন্ত্রী ও এমপি।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, জাহাঙ্গীর কবির নানক, ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, মাশরাফী বিন মুর্তজা, বিপ্লব বড়ুয়া, ওয়াসিকা আয়শা খান, সুজিত রায় নন্দীসহ বহু কেন্দ্রীয় নেতা পলাতক বা তদন্তাধীন মামলার আসামি।
আইসিটিতে বিচারকাজ শেষে রায় ঘোষণার অপেক্ষায় আছেন শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল। এছাড়া চলমান বিচার রয়েছে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, মাহবুব-উল আলম হানিফ, কুষ্টিয়ার আওয়ামী লীগ নেতাসহ একাধিক আসামির বিরুদ্ধে।
ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে, আগামী নভেম্বরের মধ্যে আরও ১২ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। এর মধ্যে রয়েছেন ওবায়দুল কাদের, আনিসুল হক, শাজাহান খান, সালমান এফ রহমান, জুনাইদ আহমেদ পলক, রাশেদ খান মেনন, মোহাম্মদ আলী আরাফাত, শেখ ফজলে শামস্ পরশ, মাইনুল হোসেন খান নিখিল, সাদ্দাম হোসেন, শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান ও এপিএস মনির হোসেন।
আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন হলে তারাও নির্বাচনে অংশগ্রহণে অযোগ্য হবেন।



