প্রবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রবাসীদের সর্ববৃহৎ সংগঠন বাংলাদেশ প্রবাসী নেটওয়ার্ক (বিপিএন)-এর যাত্রা শুরু
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:২৫ পিএম
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় দেড় কোটি প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মরত আছেন। বাংলাদেশের অর্থনীতি, সংস্কৃতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়নে প্রবাসীদের অবদান অনস্বীকার্য।
প্রবাসীদের প্রাপ্য মর্যাদা, ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রবাসীদের সর্ববৃহৎ সংগঠন হিসেবে ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেছে “বাংলাদেশ প্রবাসী নেটওয়ার্ক (বিপিএন)”।
এ উপলক্ষ্যে প্রবাসীদের সমস্যা এবং অধিকার শীর্ষক আলোচনা এবং সংগঠনের পরিচিতি তুলে ধরতে শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) বিকাল ৩ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা আকরাম খাঁ হলে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও প্রবাসী গবেষক মেজর (অবঃ) ড. নাসির উদ্দিন, দুবাইতে কারাবন্দি ৫৭ বাংলাদেশিকে মুক্ত করতে দায়িত্ব পাওয়া সরকারি আইনজীবী ব্যারিস্টার ওলোরা আফরিন, বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাসী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে ‘টিআইপি হিরো’ অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত আল আমিন নয়নসহ প্রবাসী ও অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।
মেজর (অবঃ) ড. নাসির উদ্দিন তার বক্তব্যে বলেন, ‘প্রবাসীরা দেশে সম্পদ ভোগ করেন না। এমনকি দেশের ১৬ কোটি মানুষের মধ্য থেকে অন্তত ৫-৬ কোটি মানুষের দায়িত্ব প্রবাসীদের কাঁধে। এভাবে প্রবাসীরা রাষ্ট্র ও সরকারের দায়িত্ব কমিয়ে দেয়। এর বিপরীতে পারিবারিক, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে মর্যাদা পাওয়াটা একজন প্রবাসীর প্রাপ্য। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো- অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।’
ব্যারিস্টার ওলোরা আফরিন বলেন, ‘বিদেশে চাকরির জন্য শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধির বিকল্প নেই। এজন্য সকল কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কারিকুলাম এমনভাবে নির্ধারণ করতে হবে যেন তা বিদেশে চাকরির জন্য দক্ষ শ্রমিক তৈরিতে সহায়ক হয়। পুঁথিগত বিদ্যার পাশাপাশি ব্যবহারিক শিক্ষার উপরে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় তাদের শিক্ষানবিশ হিসেবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কমপক্ষে ছয় মাস কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে।’
অনুষ্ঠানে প্রবাসে গিয়ে বিভিন্নভাবে প্রতারিত অন্তত ১০ জন ভুক্তভোগী নিজেদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। সদ্য ওমান ফেরত লাকি আক্তার বলেন, ‘২ মাস আগে কোলের শিশুর সঙ্গে আমাকে ওমানে ফেলে স্বামী পালিয়ে যায়। খাওয়ার মত পয়সা ছিলোনা। দেশে ফেরারও কোনো উপায় ছিলোনা। এই সময়ে প্রবাসী নেটওয়ার্কের ভাইয়েরা আমারে সাহায্য করে।’
সংবাদ সম্মেলনে প্রবাসীদের কল্যাণে ১৩ দফা দাবীগুলো হলো-
দক্ষ কর্মী বিদেশ পাঠানো নিশ্চিত করা এবং সকল কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কারিকুলাম বিদেশে চাকরির জন্য দক্ষ শ্রমিক তৈরীর উপযোগী করে নির্ধারণ করতে হবে।
বিদেশ যাওয়ার খরচ কমিয়ে এক লাখ টাকার মধ্যে আনতে হবে।
দালালি ও মধ্যসত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করা।
প্রবাসীরা দেশে ফেরার পর তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা।
প্রবাসীদের জন্য পেনশন সুবিধা চালু করতে হবে। এবং বিদ্যমান বিমা সুবিধার আওতায় অসুস্থতার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
দেশের প্রতিটি সরকারি হাসপাতাল ও অফিসে প্রবাসীদের জন্য আলাদা বুথ চালু করতে হবে। যাতে খুব সহজে ও অল্প সময়ে সেবা গ্রহণ করতে পারেন।
বিদেশে প্রবাসী কর্মীদের আইনি সহায়তা প্রদান করতে হবে, বিশেষত চুক্তি লঙ্ঘন, বৈষম্য বা অন্য যেকোনো সমস্যা মোকাবেলায় প্রতিটি দূতাবাসে লিগ্যাল উইং শক্তিশালী করতে হবে।
বাংলাদেশি দূতাবাস ও কনস্যুলেটে জনবল বৃদ্ধি করতে হবে। দূতাবাসে প্রবাসীদের হয়রানী বন্ধ করতে হবে এবং দ্রুত সময়ে প্রবাসীদের সেবা নিশ্চিত করতে হবে।
প্রবাসী পরিবার ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এবং তাদের সন্তানদের জন্য সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আলাদা আসন সংরক্ষণ করতে হবে।
প্রবাসীদের জন্য সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। বিশেষ করে যারা প্রবাসীদের নাম দিয়ে ব্যাংকের অনুমোদন নিয়েছে।
একুশে পদকের ন্যায় প্রতি বছর প্রবাসী পদক চালু করতে হবে।
গণভবন জাদুঘরে প্রবাসীদের জন্য আলাদা কর্নার রাখতে হবে। জুলাই আন্দোলনে প্রবাসে গ্রেফতার ও সামাজিক মাধ্যমে ভূমিকা রাখা প্রবাসীদের নাম ও ছবি সংরক্ষন করতে হবে।
ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সেবার আওতা বৃদ্ধি করতে হবে। যেমন- প্রতিবন্ধী ভাতা এক হাজার টাকা থেকে ৫ হাজার করতে হবে। চিকিৎসা সহায়তা দেড় লাখ টাকা থেকে ৩ লাখ টাকা করতে হবে।
উপস্থাপিত দাবিগুলোর বিষয়ে বাংলাদেশ প্রবাসী নেটওয়ার্কের আহ্বায়ক বায়েজিদ আল হাসান বলেন, ‘এই দাবিগুলো শতভাগ যৌক্তিক। যা বাস্তবায়ন হলে একদিকে প্রবাসীদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে একইসাথে দেশের প্রতি তাদের নিবেদন এবং অবদান আরও শক্তিশালী হবে।’