গ্রিসে নৌপথে অনুপ্রবেশের চেষ্টায় পেট্রোল পান করে দুই বাংলাদেশির মৃত্যু, আহত বহু
প্রবাস ডেস্ক
প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:০০ এএম
গ্রিসে নৌপথে অবৈধভাবে প্রবেশের চেষ্টা করতে গিয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন প্রায় ৪০ জন বাংলাদেশি। তীব্র শীত, ক্ষুধা ও পানিশূন্যতার মাঝে মানবপাচারকারীদের প্রতারণায় পানি ভেবে পেট্রোল পান করায় তারা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। এতে দুই বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে।
নিহতরা হলেন সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার আব্দুস মিয়ার ছেলে শাকিব আহমেদ শুভ এবং একই জেলার জিতু উল্লাহর ছেলে সায়েম আহমেদ।
গ্রিসে বাংলাদেশের দূতাবাস জানায়, গত ২৬ নভেম্বর লিবিয়া থেকে একটি ছোট প্লাস্টিক নৌকায় গ্রিসের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন তারা। মাঝ সাগরে নৌকাটির তলা ফেটে পানি ঢুকতে থাকে। কয়েক দিন খাবার–পানির অভাবে তীব্র ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় কাতর অবস্থায় তারা বোতলে থাকা পেট্রোলকে পানি মনে করে পান করেন। এতে অনেকে অচেতন হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে গ্রিস কোস্টগার্ড ও স্থানীয় পুলিশ তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।
এথেন্সের এক্সার্খিয়া এলাকার একটি হাসপাতাল ঘটনা জানালে দূতাবাসের প্রথম সচিব রাবেয়া বেগম তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে গিয়ে আহত বাংলাদেশিদের অবস্থার খোঁজ নেন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, পেট্রোল পান করার কারণে তাদের অনেকের পাকস্থলী ও শ্বাসযন্ত্র গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শীতজনিত হাইপোথার্মিয়া, শারীরিক দুর্বলতা ও পানিশূন্যতা চিকিৎসা আরও জটিল করে তুলেছে। পেট্রোল পান করায় দুই জনের মৃত্যু ছাড়াও অন্তত চার জনের অবস্থা সংকটাপন্ন ছিল। একজনের কিডনিতেও পেট্রোলের প্রভাব পড়ায় তার ডায়ালাইসিস চলছে। বাকি যাত্রীদের অবস্থা স্থিতিশীল হলে দুদিন পর রিলিজ দিয়ে মালাকাসা ক্যাম্পে নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
আহতরা জানান, দালালচক্র নৌযাত্রার সময় পর্যাপ্ত খাবার বা পানি দেয়নি। অমানবিক পরিবেশে যাত্রা করতে গিয়ে তারা জীবনঝুঁকিতে পড়েন।
দূতাবাসের প্রথম সচিব রাবেয়া বেগম বলেন, সমুদ্রপথে অবৈধভাবে গ্রিসে যাওয়ার চেষ্টা যেন কেউ না করেন, সে বিষয়ে কঠোর সতর্কতা দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালে থাকা বাংলাদেশিদের প্রয়োজনীয় সব সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, অবৈধ অনুপ্রবেশ জীবনকে বিপন্ন করে; গ্রিসে বৈধভাবে যাওয়ার পথই একমাত্র নিরাপদ উপায়।
নিহত দুই যুবকের মরদেহ দেশে পাঠানোর আইনি প্রক্রিয়া চলছে বলে দূতাবাস জানিয়েছে। ঘটনাটি গ্রিসে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যেও গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে। মানবিক সহায়তা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দূতাবাস, গ্রিক পুলিশ ও হাসপাতাল প্রশাসন সমন্বিতভাবে কাজ করছে।



