Logo
Logo
×

প্রবাস

৯ বারের এভারেস্টজয়ীর প্রথম সমুদ্র দর্শন

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক :

প্রকাশ: ১৯ জুলাই ২০২৫, ০২:০৯ পিএম

৯ বারের এভারেস্টজয়ীর প্রথম সমুদ্র দর্শন

কারওয়ানবাজারে দেখা তাশি গ্যালজেন শেরপার সঙ্গে। সঙ্গে তাঁর বড় ভাই তাশি লামা আর বাংলাদেশের এভারেস্টজয়ী পর্বতারোহী ইকরামুল হাসান শাকিল। ঢাকার নেপাল দূতাবাসের একটা অনুষ্ঠান শেষে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে কারওয়ান বাজারে এসেছেন। কাদা-জলের ঢাকায় হিমালয়ের শীতল আবহাওয়ার অধিবাসী তাশির কেমন লাগছে?

জিজ্ঞাসা করতেই বললেন, ‘শুরুতে গরম, বৃষ্টি, বাতাস সবকিছুই আলাদা মনে হচ্ছিল। কিন্তু এখন সেসব কিছুই মনে হচ্ছে না, আবহাওয়ার চেয়ে আমাকে বেশি ছুঁয়ে গেছে মানুষের আতিথেয়তা আর আন্তরিকতা।’

আর?

ইতিউতি করে বলেন, ‘আলুভর্তা!’

আলুভর্তা!

অনেক কিছুই খেয়েছি, তবে আলুভর্তা সবচেয়ে পছন্দ হয়েছে’।

ছোট ভাই গ্যালজেনের মুখে আলুভর্তার কথা শুনে পাশে বসা তাশি লামা মিটিমিটি হাসেন। আর শাকিল বলেন, ‘গতকাল (১৪ জুলাই) ওদের গাজীপুরে আমাদের গ্রামে নিয়ে গিয়েছিলাম। গ্রামে ঘুরেফিরে অনেক উপভোগ করেছে।’

বছর তিনেক আগে ‘গ্রেট হিমালয়া ট্রেইল’ অভিযানে গিয়েছিলেন শাকিল। নেপালে সেই অভিযানে গিয়েই তাশি গ্যালজেন শেরপাকে গাইড হিসেবে পেয়েছিলেন। মানাসলু সার্কিট আর রুবি উপত্যকার দুর্গম পথে ১৫ দিন একসঙ্গে হেঁটেছেন দুজনে। সেই থেকে বন্ধুত্ব। এবার কক্সবাজার থেকে হেঁটে গিয়ে এভারেস্টশৃঙ্গে ওঠার অভিযানেও শাকিলের শেরপা ছিলেন গ্যালজেন। ১৯ মে দুজনে চূড়ায় পৌঁছান।

দুজনের সেই অভিযানের ছবি নিয়ে নেপাল দূতাবাসের সহযোগিতায় জাতীয় জাদুঘরে তিন দিনের একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিলেন শাকিল। এতে যোগ দিতেই ১০ জুলাই ঢাকায় আসেন তাশিরা দুই ভাই।

বাংলাদেশ সফরে বেশ কিছু ‘প্রথম’–এর অভিজ্ঞতা নেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন গ্যালজেন। এবারই প্রথম উড়োজাহাজে চড়ে বিদেশ ভ্রমণ করলেন। রাতে যাবেন কক্সবাজার। সেখানে গিয়ে প্রথমবার দেখবেন সমুদ্র। সমুদ্রদর্শনের কথা ভেবে দুই ভাই বেশ উত্তেজিত। তাশি গ্যালজেন বলেন, ‘আমরা পাহাড়ের মানুষ। সারা জীবন হিমালয়েই কেটেছে। প্রথমবারের মতো সমুদ্র দেখার সুযোগ হচ্ছে।’

রাতে কক্সবাজারের বাস। গাজীপুরে যাওয়ার আগে পুরান ঢাকার এক বাসায় ব্যাগ রেখে গেছেন, তার আগে সেই ব্যাগ আনতে হবে, বিকেলে আবার জিগাতলায় দাঁতের চিকিৎসা নেবেন তাশি গ্যালজেন। সব মিলিয়ে হাতে সময় বড্ড কম, তাই খোশগল্পে ইস্তফা দিয়ে ঝটপট প্রশ্নে জানতে চাই তাঁর শেরপা জীবনের কথা, রেকর্ড গড়া অভিযানের গল্প

হিমালয়ের খুম্বু অঞ্চলের ছোট গ্রামটার নাম ফোর্তসে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩ হাজার ৮৪০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত গ্রামটা নানা কারণেই বিখ্যাত। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি এভারেস্টজয়ীর গ্রামের তকমাও আছে ফোর্তসের গায়ে। ৪৫০ জন মানুষের পার্বত্য গ্রামটাতে ৯০ জনই এভারেস্টজয়ী। এখানেই আছে খুম্বু ক্লাইম্বিং সেন্টার। যেখানে শেরপাসহ নেপালের বিভিন্ন প্রান্তের পর্বতারোহীরা গিয়ে প্রশিক্ষণ নেন। এই গ্রামেই তাশি গ্যালজেন শেরপার জন্ম

বরফ, অতি উচ্চতা আর এভারেস্টের আবহের মধ্যেই বড় হয়েছেন তাশি গ্যালজেন। তাঁর বাবা আং শিরিং ছিলেন পোর্টার। এভারেস্ট বেজক্যাম্পে ভারী বোঝা বহন করতেন। পরে শেরপা হিসেবেও কাজ করেন। বড় ভাই তাশি লামাও একসময় শেরপা পেশায় নাম লেখান।

তাশি গ্যালজেনের শেরপা ক্যারিয়ার বেশি দিনের নয়। ২৮ বছরের এই তরুণ ছোটবেলায় স্থানীয় একটি স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। তারপর খুমজুং এডমন্ড হিলারি সেকেন্ডারি স্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে ২০১৫ সালে স্নাতকে ভর্তি হন কাঠমান্ডুর একটি কলেজে। ২০১৭ সালে তাঁর বাবা দুর্ঘটনায় আহত হলে গ্রামে ফিরে ট্রেকিং গাইড হিসেবে কাজ শুরু করেন।

২০১৯ সালে প্রথম এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন গ্যালজেন। তারপর প্রায় প্রতিবছরই হয় নেপালের দিক দিয়ে, নয়তো তিব্বতের দিক দিয়ে এভারেস্ট চূড়ায় গেছেন গ্যালজেন। তবে প্রথমবারের অভিজ্ঞতা ভুলতে পারেন না, ‘আজও মনে আছে সেই অনুভূতি। চূড়ায় দাঁড়িয়ে মনে হলো মেঘের ওপরে দাঁড়িয়ে আছি! সেদিনের পর থেকে আমার জীবন বদলে গেছে।’

সত্যিই তাশি গ্যালজেনের জীবন বদলে গেছে। না হলে ২০ দিনে চারবার এভারেস্ট শৃঙ্গে ওঠার মতো এমন বাজি কেউ রাখে! সেটাও পূরণ করেছেন ১৫ দিনে। তাঁর এই ইতিহাস গড়া যাত্রা শুরু হয়েছিল গত ৯ মে। এভারেস্ট মৌসুমের শুরুতে শেরপারা গিয়ে দড়ি ঠিকঠাক করে আসে। সেই দড়ি স্থাপনকারী দলের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে প্রথম শীর্ষারোহণ করেন। এরপর ১৪ মে দ্বিতীয়বার, ১৯ মে তৃতীয়বার আর ২৩ মে চতুর্থবার। তাজি গ্যালজেন বলেন, ‘এই অভিযান শুধুই রেকর্ড গড়ার জন্য ছিল না, নিজের শারীরিক ও মানসিক দৃঢ়তা যাচাইয়ের ব্যক্তিগত চ্যালেঞ্জও ছিল। বিশ্বাস ছিল পারব এবং পেরেছি।’

এভারেস্টের বাইরে চো ইউ, মানাসলু, আমা দাবলামসহ বেশ কিছু কঠিন শৃঙ্গ জয় করেছেন এই হিমালয়পুত্র। এরপরের লক্ষ্য নাকি আরও কঠিন। কী সেই লক্ষ্য, এখনই তা ফাঁস করতে চাইলেন না তাশি গ্যালজেন শেরপা। আমরাও চাপাচাপি করলাম না। বিদায় নিলেন প্রথম সমুদ্রদর্শনের উত্তেজনা নিয়ে।



Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher

Major(Rtd)Humayan Kabir Ripon

Managing Editor

Email: [email protected]

অনুসরণ করুন