দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী নয়, সরকারের মেয়াদ ৪ বছর : নাগরিক কমিটির প্রস্তাব
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:১৫ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
জাতীয় নাগরিক কমিটি তাদের প্রস্তাবনায় উল্লেখ করেছে, দেশে কোনো ব্যক্তি দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না এবং সরকারের মেয়াদ হবে চার বছর। নির্বাহী বিভাগ প্রধানমন্ত্রী দ্বারা পরিচালিত হলেও সাংবিধানিক পদে নিয়োগ ও অপসারণের ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে থাকবে না।
প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি নিজ দলের প্রধান ও সংসদ নেতা হতে পারবেন না। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর রাষ্ট্রের আর কোনো পদে থাকতে পারবেন না। এছাড়া, প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় তার সমস্ত সম্পদ ও সম্পত্তি স্টেট ব্যাংকের অধীনে চলে যাবে, এবং কোনো ব্যবসায়িক উদ্যোগে তার অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ হবে।
প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে সাংবিধানিক পদে নিয়োগ বিষয়ে পরামর্শ দিতে পারবেন, তবে এটি রাষ্ট্রপতির জন্য বাধ্যতামূলক হবে না। সাংবিধানিক পদে নিয়োগ ও অপসারণের বিষয়টি আইন দ্বারা নির্ধারিত হবে, এবং প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় কাউকে অপসারণ করা যাবে না।
প্রস্তাবনায় ৭০ অনুচ্ছেদের কঠোরতা কমানোর কথা বলা হয়েছে। সংসদ সদস্যরা দল বদল করলে, অন্য রাজনৈতিক দলে যোগ দিলে, দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে পদত্যাগ করলে বা অব্যাহতি দেওয়া হলে তার সংসদ সদস্য পদ শুন্য হবে। আস্থা ভোটে দলের বিপক্ষে ভোট দেওয়া যাবে না, তবে অন্য বিষয়ে স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারবেন। সরকারের মেয়াদ হবে চার বছর।
প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করার ক্ষমতা সংসদীয় দলের থাকবে। প্রধানমন্ত্রী হবেন সম ব্যক্তিদের মধ্যে প্রথম, অর্থাৎ ক্ষমতা বিচারে নয়। মন্ত্রিসভার সদস্যদের প্রধানমন্ত্রী চয়ন করবেন এবং সংসদের অনুমোদন নিতে হবে। মন্ত্রীদের দপ্তর বণ্টন ও রদবদল করতে পারবেন, তবে অপসারণ করতে হলে সংসদের অনুমোদন লাগবে। সংসদীয় কমিটির ক্ষমতা বাড়াতে হবে এবং মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করতে পারবে।
প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দিতে পারবেন, তবে তা পালন রাষ্ট্রপতির জন্য বাধ্যতামূলক হবে না। সিদ্ধান্ত নেবে আইনসভা। জরুরি আইন/আদেশ সর্বোচ্চ আদালতে পাঠাতে হবে এবং আদালত এর সাংবিধানিকতা নির্ধারণ করবেন।
প্রধানমন্ত্রী প্রতিরক্ষা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের প্রধান হবেন। কোনো বাহিনী সরাসরি তার অধীনে থাকবে না। প্রতিরক্ষা বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রধান থাকতে পারবেন না। বাহিনীর চেইন অব কমান্ড আইন ও বিধি দ্বারা সঙ্গত থাকবে এবং হস্তক্ষেপ করা যাবে না। তবে সঠিকতার বিষয়ে জবাবদিহি থাকবে।
প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, কোনো আদালত প্রধানমন্ত্রীকে অপসারণ করতে পারবে না। কেবল সংসদ কর্তৃক আস্থাভোটেই তাকে অপসারণ করা যাবে। সাংবিধানিক পদে নিয়োগে একক কর্তৃত্ব যেন প্রধানমন্ত্রীর না থাকে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন করতে পারবেন। প্রধানমন্ত্রী নিম্নকক্ষের প্রধান থাকবেন এবং জনগণের কল্যাণে কাজ করবেন। নির্বাহী বিভাগ পরিচালনা করবেন, তবে নিয়োগের ক্ষমতা থাকবে না। নিয়োগ দেবে উচ্চকক্ষ এবং প্রধানমন্ত্রীর কোনো অনুমতি লাগবে না।