Logo
Logo
×

রাজনীতি

বিএনপির ৩ সংগঠনের ভারতীয় হাইকমিশনে স্মারকলিপি প্রদান

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৪২ পিএম

বিএনপির ৩ সংগঠনের ভারতীয় হাইকমিশনে স্মারকলিপি প্রদান

ছবি : সংগৃহীত

বিএনপির তিন অঙ্গ-সংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মার কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে। ৬ সদস্যের প্রতিনিধি দল রবিবার (৮ ডিসেম্বর) ভারতীয় হাইকমিশনে এ স্মারকলিপি দিয়ে আসে।

বিএনপির ৩টি অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দলে ছিলেন- জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোনায়েম মুন্না, সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির।

প্রসঙ্গত যে সম্প্রতি ভারত গায়ে পড়ে ঝগড়া বাঁধানোর চেষ্টা করছে। দেশটির মূলধারার গণমাধ্যমে পর্যন্ত অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে। এসব অপতথ্য ছড়িয়ে এক ধরনের উসকানি দেয়া হচ্ছে। দেশটির কর্মকাণ্ডের ব্যপারে বাংলাদেশের সুশীল সমাজ থেকে রাজনৈতিক দলগুলো প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। 

জানা গেছে, বিষয়বস্তু হিসেবে সাম্প্রতিক অবন্ধুসুলভ ঘটনাবলি নিয়ে গভীর উদ্বেগ লিখে স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, আমরা, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদল, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের পক্ষ থেকে এই মর্মে গভীর উদ্বেগ ও বিস্ময় প্রকাশ করছি, বিশ্ব কাঁপানো ছাত্র-জনতার অভাবনীয় তুমুল আন্দোলনে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা আপনার দেশে পালিয়ে যাওয়ার পর আপনারা তাকে আশ্রয় দিয়েছেন। অতঃপর আপনার দেশের অতি উগ্রবাদী নেতারা এবং বিশেষ করে কতিপয় সংবাদ মাধ্যম ও মিডিয়া বাংলাদেশের এই গণশত্রু শেখ হাসিনা ওয়াজেদকে পুনরায় পুনর্বাসন এবং বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ অস্থিতিশীল করবার নিমিত্তে একের পর এক অজ্ঞ-অর্বাচীনের ন্যায় কাজ করে যাচ্ছে। যাতে স্পষ্টত প্রতিয়মান হয়, আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র ভারতের বন্ধুত্ব ছিল শেখ হাসিনার সঙ্গে, বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে নয়।

আরো বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা এখন বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বিরুদ্ধ হুমকি হয়ে উঠেছে। একদিকে তিনি বাংলাদেশের ভিন্ন দলমতের মানুষদের ঘরবাড়ি সম্পত্তি জ্বালিয়ে দেয়ার হুকুম দিচ্ছেন। অপরদিকে যারা তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে তাদের হত্যা করার হুমকি দিচ্ছেন। ভারতের নিরাপদে আশ্রয়ে থেকে বাংলাদেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার এই অপচেষ্টা বাংলাদেশের মানুষ ইতিবাচকভাবে নিচ্ছে না।

আপনি সম্যক অবগত আছেন, গত ২ ডিসেম্বর ২০২৪-এ আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে ন্যক্কারজনক হামলা চালানো হয়েছে। নৈতিক পদস্খলনের কারণে ইসকন থেকে বহিষ্কৃত সাবেক ইসকন নেতা শ্রী চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে উগ্র হিন্দুত্ববাদী হাজার হাজার মানুষ যখন রাষ্ট্রীয় মদদ ও প্রশ্রয়ে বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলা করছিল, তখন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে আপনার দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

প্রাপ্ত বিবরণগুলো চূড়ান্তভাবে প্রমাণ করে, পূর্বপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের প্রধান ফটক ভেঙে বিক্ষোভকারীদের প্রাঙ্গণে আক্রমণ করার সম্মতি দেয়া হয়েছিল। এই প্রক্রিয়ায়, স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের উপস্থিতিতে, তারা জাতীয় পতাকার খুঁটি ভাঙচুর করে, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননা করে এবং সহকারী হাইকমিশনের অভ্যন্তরে সম্পত্তিরও ক্ষতি করে। দুঃখজনকভাবে, প্রাঙ্গণ রক্ষার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের শুরু থেকেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় না থাকতে দেখা গেছে। এটি কূটনৈতিক নিয়ম এবং আন্তর্জাতিক আইনের একটি গুরুতর লঙ্ঘন। একই সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের ভিয়েনা কনভেনশন, ১৯৬১ এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এমন ন্যক্কারজনক বিস্ময়কর ঘটনাসমূহের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলেও আপনার সরকারের নীরবতায় বাংলাদেশের মানুষ হতাশ। আমরা পরস্পরের স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্বের প্রতি গভীরভাবে শ্রদ্ধাশীল। আমাদের দুই দেশের সম্পর্কের ভিত্তি হবে সমতা, পরস্পরের প্রতি আস্থা, বিশ্বাস এবং সম্মান প্রদর্শনের ওপর।

স্বার্বভৌম কোনো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের সামিল। ভারতের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ বাংলাদেশের জনগণের প্রতি অবজ্ঞা স্বরূপ বলে আমরা চাই ভারত সরকার ভারতীয় মিডিয়া আউটলেটগুলোকে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে এবং বস্তুনিষ্ঠ সংবাদের মাধ্যমে ভারতীয় সংবিধানের ৫৫ অনুচ্ছেদে বর্ণিত আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার আদর্শ প্রচার করতে পরামর্শ দিবে।

আমরা আশা করি, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার, অপতথ্য বন্ধ করতে ভারতীয় সরকার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য দেশগুলোর মধ্যে একটি স্থিতিশীল, পারস্পরিক শ্রদ্ধাপূর্ণ অংশীদারত্ব অপরিহার্য। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল জাতিসংঘের সনদের নীতির ওপর ভিত্তি করে সব সদস্যের সার্বভৌম সমতার ভিত্তিতে আমাদের দুই দেশের মধ্যে শক্তিশালী ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

আমাদের পক্ষ থেকে এই স্মারকলিপির মাধ্যমে আপনাকে অবগত করছি এবং অনুরোধ জানাচ্ছি, জাতীয়তাবাদী যুবদল, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের অবস্থান ও মতামত ভারতীয় সরকারের নিকট পৌঁছে দেয়ার যথাযথ ব্যবস্থা  নেবেন। 

স্মারকলিপি দেয়ার পর যে কথা বলেন নেতারা জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের উদ্যোগে ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ভারতীয় দূতাবাসে স্মারকলি দেয়ার পর গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন, বিএনপির তিন অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতারা। এ সময় জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না বলেন, আমরা ভারতীয় হাইকমিশনে স্মারকলিপি দিয়েছি। আমরা কোনো প্রকার অশান্তিতে বিশ্বাসী না। আমাদের শান্তিতে আস্থা-বিশ্বাস। 

তিনি বলেন, বাংলাদেশের মুসলমানরা শান্তি প্রিয়। তারা খুবই ধৈর্যশীল। আমাদের কোনো প্রভু নেই। আমাদের বন্ধু আছে। আমরা আগ্রাসীতে বিশ্বাসী নই। যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন বলেন, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যে কোনো ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা রুখে দিব।

ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর শান্তি রক্ষা মিশন বিষয়ে জ্ঞান না থাকলেও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছেন। যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি ও বরখেলাপ বলে আমরা মনে করি। বাংলাদেশের জনগণের কথা যুবদলের ছাত্রদল স্বেচ্ছাসেবক দলের কথা আমাদের শান্তিপূর্ণ অবস্থানের কথা আমরা জানিয়ে দিয়েছি। বাংলাদেশের মানুষের প্রতিবাদ দিয়ে আমরা এই পদযাত্রা ও স্মারকলিপি শেষ করেছি।

এর আগে বেলা সাড়ে ১১টায় নয়া পল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে ভারতীয় হাইকমিশনে অভিমুখে পদযাত্রা শুরু করে বিএনপির তিন অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদল, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল এবং জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই পদযাত্রা কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। পরে পদযাত্রাটি রামপুরা ব্রিজের কাছে পৌঁছালে পুলিশ সেখানে ব্যারিকেড দেয়। ব্যারিকেড পেয়ে বিএনপির তিন সংগঠনের ছয় শীর্ষ নেতা ভারতীয় হাইকমিশনে গিয়ে স্মারকলিপি দেন।

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন