শরিকদের চাপ ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে ঝুলে আছে বিএনপির ২৮ আসন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:৪০ পিএম
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করার শেষ পর্যায়ে এসে অভ্যন্তরীণ হিসাব–নিকাশ ও শরিকদের চাপের মুখে আটকে গেছে বিএনপির আরও ২৮টি আসন। দলটি ইতোমধ্যে দুই দফায় ২৭২টি আসনের প্রার্থী ঘোষণা করেছে; তবে যেসব আসনে শরিকদের দাবিদাওয়া আছে কিংবা বিএনপির ভেতরে একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশীর লড়াই তীব্র, সেসব আসনে এখনো সিদ্ধান্ত জানায়নি হাইকমান্ড।
বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ঝুলে থাকা ২৮ আসনের বেশির ভাগ শরিক দলের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে, আর ৮ থেকে ১০টি আসনে বিএনপির একাধিক শক্তিশালী প্রার্থী থাকায় আপাতত নাম ঘোষণা করা হয়নি। আগামী সাত দিনের মধ্যেই শরিকদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা চূড়ান্ত করবে দলটি।
বিভিন্ন শরিক দলের অভিযোগ, আলোচনা ছাড়াই বিএনপি একতরফা প্রার্থী ঘোষণা করায় জোটবদ্ধ নির্বাচনের স্বচ্ছতা কমেছে। নিজ নিজ প্রতীকে ভোট করার বাধ্যবাধকতার কারণে প্রচারেও তারা পিছিয়ে পড়ছেন। এতে মানসিক দূরত্ব বাড়ছে এবং ভবিষ্যৎ রাজনীতি অনিশ্চয়তায় পড়তে পারে বলে মনে করছেন শরিকদের অনেকে।
পিরোজপুর-১, লক্ষ্মীপুর-১, বগুড়া-২, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬, ঢাকা-১৩, ঢাকা-১৭, চট্টগ্রাম-১৪, কুমিল্লা-৭, পটুয়াখালী-৩ ও ঝিনাইদহ-২ আসনসহ অন্তত ১০টি আসনে শরিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের ‘সবুজ সংকেত’ দিয়েছে বিএনপি। বেশ কয়েকজনকে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি নিতেও বলা হয়েছে। তবে ইসলামী ব্যাংকের ঋণখেলাপি ইস্যু প্রকাশ পাওয়ায় বগুড়া-২ আসনে মাহমুদুর রহমান মান্নার পরিস্থিতি জটিল হতে পারে।
জেএসডির সভাপতি আ স ম রব এবার নির্বাচন করতে চাইছেন না; তার স্ত্রী তানিয়া রব লক্ষ্মীপুর-৪ আসনটি চাইছেন। কিন্তু বিএনপি এ আসনে নিজেদের প্রার্থী চূড়ান্ত করায় জেএসডি নতুন জোটের দিকে ঝুঁকছে।
সিলেট-৫, নীলফামারী-১, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২, নারায়ণগঞ্জ-৪, সুনামগঞ্জ-২, নরসিংদী-৩ ও ময়মনসিংহ-১০ আসনেও মনোনয়ন চাইছে শরিকদের একাধিক নেতা। এসব আসনে এখনো কাউকে মনোনয়ন দেয়নি বিএনপি।
দীর্ঘদিনের পাঁচ রাজনৈতিক মিত্রের হেভিওয়েট প্রার্থী এবার বাদ পড়েছেন। কেউ কেউ বলছেন, বিএনপি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে। লেবার পার্টি তো সরাসরি দীর্ঘ দুই দশকের সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়েছে।
ঢাকা-২০, লালমনিরহাট-২, নীলফামারী-৩, ঝিনাইদহ-১ ও ঝিনাইদহ-৪ আসনে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল গভীর। কোথাও দুই ভাই প্রতিদ্বন্দ্বী, কোথাও সংঘর্ষে নিহতও হয়েছে। ফলে এসব আসন ঝুলে আছে।
পাবনা-১ আসনটি ২০১৮ সালে গণফোরামের আবু সাইয়িদকে ছাড়লেও এবার তার পাশাপাশি বিএনপির আরও তিনজন প্রার্থী মাঠে সক্রিয়। সংঘাত এড়াতে এখানেও এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
বাগেরহাটে তিনটি নাকি চারটি আসন থাকবে, সে বিষয়ে হাইকোর্টের রুলের আপিল শুনানি রোববার। চারটি আসন ধরে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা ছোট করেছে বিএনপি; এর মধ্যে বাগেরহাট-১ আসনটি শরিকদের জন্য ছাড়ার বিষয়েও অভ্যন্তরীণ আলোচনা চলছে।
বিএনপির হাইকমান্ডের হিসাব–নিকাশ এখনও শেষ হয়নি। নির্বাচন সামনে ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে শরিক ও দলের ভেতরের সমীকরণ এক ধরনের স্নায়ুচাপে ফেলেছে বিএনপিকে। সাত দিনের মধ্যে সমঝোতা না হলে এই অস্থিরতা আরও বাড়তে পারে বলে পর্যবেক্ষকদের মত।



