শরিকদের জন্য ২৫ আসন ছাড়ের কথা ভাবছে বিএনপি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ১২:১৭ পিএম
ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় শরিক দলগুলোর জন্য প্রায় ২৫টি আসন ছাড় দেওয়ার বিষয়ে ভাবছে বিএনপি। দলটির নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, ইতোমধ্যে ১২ জন শরিককে ‘সবুজ সংকেত’ দেওয়া হলেও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এখনো হয়নি। পাশাপাশি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের সংগঠন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)–র সঙ্গে সমঝোতা হলে আরও ১৫টি আসন ছাড় দিতে পারে বিএনপি।
বিএনপি ও এনসিপির মধ্যে জোট বা আসন সমঝোতা নিয়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চলছে। বিএনপি বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষার কথা জানাচ্ছে জড়িত পক্ষগুলো। তবে জামায়াতের সঙ্গে জোটে যেতে অনাগ্রহী এনসিপি।
ঢাকা-১০ আসন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে ছেড়ে দেওয়ার বিষয় নিয়ে বিএনপির ভেতরে আলোচনা রয়েছে। এছাড়া ঢাকা-৯, ঢাকা-১১ এবং আরেক উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের জন্য ঢাকার একটি আসন ছাড় দেওয়ার কথাও শোনা যাচ্ছে।
এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন জানিয়েছেন, তারা ন্যায়বিচার ও সংস্কারের পক্ষে আপসহীন দলগুলোর সঙ্গে থাকতে চান। তিনি বলেন, এনসিপি নতুন শক্তি হিসেবে এককভাবেই রাজনৈতিক মাঠে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
সূত্র জানায়, যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের জমা দেওয়া প্রার্থী তালিকা থেকে বিজয়ের সম্ভাবনা, আন্দোলনে ভূমিকা, রাজনৈতিক অবস্থান ও ভবিষ্যৎ সরকার গঠনে গুরুত্ব—এসব বিবেচনায় বাছাই করছে বিএনপি।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু জানান, শরিকদের আসন এখনো চূড়ান্ত হয়নি। সব দলকে পর্যাপ্ত আসন দেওয়া সম্ভব না হলেও কিছু আসন ছাড় দেওয়া হবে। এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আরও পর্যালোচনা করছেন।
শরিকদের একাধিক নেতা বলছেন, বিএনপির ২৩৭ প্রার্থীর তালিকা ঘোষণার দুই সপ্তাহ পরও তাদের আসন চূড়ান্ত না হওয়ায় ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। এবার নিজ নিজ প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় সময়ক্ষেপণের ফলে তারা সমস্যায় পড়ছেন।
১২-দলীয় জোট: পিরোজপুর-১ (মোস্তফা জামাল হায়দার), লক্ষ্মীপুর-১ (শাহাদাত হোসেন সেলিম), কিশোরগঞ্জ-৫ (সৈয়দ এহসানুল হুদা)—এই তিন আসনে সবুজ সংকেত দিয়েছে বিএনপি।
গণতন্ত্র মঞ্চ: বগুড়া-১ (মাহমুদুর রহমান মান্না), ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ (জোনায়েদ সাকি)—এই দুই আসনে বিএনপি প্রার্থী দেয়নি। মোট পাঁচটি আসন ছাড়ের চিন্তা চলছে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি: সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকের জন্য ঢাকা-১২ আসন বিবেচনায় আছে।
জেএসডি: তানিয়া রবকে একটি সংরক্ষিত নারী আসন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি রয়েছে।
জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট: নড়াইল-২ (ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ), ঢাকা-১৩ (ববি হাজ্জাজ), ঢাকা-৭ ও রাজবাড়ী-২–এ সুব্রত চৌধুরী, এবং এনডিএম মহাসচিব মোমিনুল আমিন—এসব আসনে সমঝোতার আলোচনা চলছে।
এলডিপি: চট্টগ্রাম-১৪ (ওমর ফারুক) ও কুমিল্লা-৭ (ড. রেদোয়ান আহমেদ)—দুটি আসনে সবুজ সংকেত।
বিজেপি: ঢাকা-১৭–এ আন্দালিব রহমান পার্থসহ দুইটি আসনে ছাড়ের আলোচনা।
গণঅধিকার পরিষদ: পটুয়াখালী-৩ (নুরুল হক নুর) ও ঝিনাইদহ-২ (রাশেদ খান)—দুটি আসন নিশ্চিত।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম: ১২ জনের তালিকা জমা দিলেও পাঁচটি আসনে ছাড় দেওয়ার কথা ভাবছে বিএনপি। সিলেট-৫, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২, নীলফামারী-১, সুনামগঞ্জ-২ ও কিশোরগঞ্জ-১ আসনে তাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। দলটি বলছে, সন্তোষজনক আসন পেলেই তারা জোটে যোগ দেবে।
শরিকদের দাবি, বিলম্ব বাড়লে তাদের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব সৃষ্টি হয়ে ভবিষ্যৎ রাজনীতি ঝুঁকিতে পড়তে পারে।



