জোটভুক্ত প্রার্থীর প্রতীক নিয়ে পাল্টা অবস্থানে বিএনপি-জামায়াত
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১২:১০ পিএম
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলো জোট গঠন করলেও প্রার্থীদের নিজ নিজ দলের প্রতীকে ভোট করতে হবে—এমন বিধান যুক্ত করে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ২০ ধারায় সংশোধনী আনছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন পাওয়ার পর সংশোধিত আরপিও এখন সরকারের হাতে।
বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদনের পরই এ বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে বিএনপি। দলটির দাবি, আগের মতো জোটের প্রার্থীরা যেন ইচ্ছা করলে অন্য দলের প্রতীকে ভোট করতে পারে। বিপরীতে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চায় প্রতিটি দল তাদের নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচন করুক। এই বিপরীতমুখী অবস্থানের মধ্যে এখন সবার দৃষ্টি ইসির পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে।
ইসি কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি শুধু বলেন, আমরা তো আমাদের কাজ করে দিয়েছি।
ইসির কর্মকর্তারা জানান, জোটের প্রতীকের বিষয়টি এখন আর কমিশনের হাতে নেই; উপদেষ্টা পরিষদ অনুমোদন দেওয়ায় বিষয়টি এখন সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়।
এর আগে রোববার আগারগাঁওয়ে ইসি ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপির প্রতিনিধি দল আরপিওর ২০ ধারার সংশোধন পরিবর্তনের দাবি জানায়। একই দাবিতে চিঠি দেয় ববি হাজ্জাজের নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম)।
অন্যদিকে, মঙ্গলবার ইসির সঙ্গে বৈঠকে জামায়াতে ইসলামী জানায়, জোটের প্রার্থীরা নিজ নিজ প্রতীকে ভোট করুক—এমন বিধান বহাল রাখা উচিত। তারা তাদের ১৮ দফা প্রস্তাবে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে, কোনো দল অন্য দলের প্রতীক ব্যবহার করতে পারবে না।
এছাড়া বুধবার ইসির সঙ্গে বৈঠকে গণঅধিকার পরিষদের (জিওপি) নুরুল হক নুরও বলেন, জোটভুক্ত হলেও নিজ দলের প্রতীকে ভোটের বিধানে তাদের কোনো আপত্তি নেই। পাশাপাশি তারা কালোটাকা ও পেশিশক্তিমুক্ত নির্বাচন, ভোটকেন্দ্রে সিসিটিভি স্থাপন, সাংবাদিকদের অবাধ প্রবেশ ও ভয়ভীতিমুক্ত ভোটের পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানায়।
সংশোধিত আরপিওতে আরও যেসব গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে।
আদালত কর্তৃক ফেরারি বা পলাতক আসামি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। একক প্রার্থী থাকলে ‘না ভোট’-এর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে; ‘না ভোট’ বেশি হলে পুনরায় ভোট হবে। সাংবাদিকরা ভোট গণনার সময় উপস্থিত থাকতে পারবেন, তবে গণনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত থাকতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সেনা, নৌ, ও বিমানবাহিনীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রবাসী বাংলাদেশি ও নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের জন্য পোস্টাল ভোটের সুযোগ রাখা হয়েছে, যা এবার আইটি-সাপোর্টেড হবে। প্রার্থীর জামানত ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে। প্রার্থীর হলফনামায় দেশের পাশাপাশি বিদেশের সম্পত্তি ও আয়ের উৎসের বিবরণ দিতে হবে। ৫০ হাজার টাকার বেশি অনুদান দিতে চাইলে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দিতে হবে এবং দাতাকে ট্যাক্স রিটার্ন জমা দিতে হবে। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) সংক্রান্ত বিধান বাতিল করা হয়েছে। প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের আবার কেন্দ্রের ভোট বন্ধ করার পূর্ণ ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তবে ইসির কয়েকজন কর্মকর্তা মনে করেন, একদিনের জন্য প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের এত ক্ষমতা দেওয়া হলেও বাস্তবে তা কার্যকর করা কঠিন। তারা বলেন, অনেকে দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করতে গিয়ে স্থানীয়ভাবে সমস্যায় পড়েছেন। তাই নির্বাচনের পরেও কিছুদিন আইনি সহায়তা নিশ্চিত করা গেলে তারা আরও নির্ভয়ে কাজ করতে পারবেন।
চূড়ান্তভাবে সংশোধিত আরপিও এখন সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়—এখন সবার দৃষ্টি সেই দিকেই।



