ফেব্রুয়ারির নির্বাচন নিয়ে আস্থা ও আশঙ্কার দ্বন্দ্বে বিএনপি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৫৮ এএম
২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে সরকারের ওপর এখনো আস্থা রাখছে বিএনপি। দলের শীর্ষ নেতাদের বিশ্বাস, সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নির্ধারিত সময়েই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে সাম্প্রতিক কিছু রাজনৈতিক ঘটনা, কিছু দলের তৎপরতা এবং সরকারের দায়িত্বশীলদের হঠাৎ সক্রিয়তা বিএনপির মধ্যে শঙ্কা ও সন্দেহ তৈরি করেছে।
বিএনপি অভিযোগ করছে, নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্র চলছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, কিছু রাজনৈতিক দল চেষ্টা করছে নির্বাচন যেন পিছিয়ে যায়, সঠিক সময়ে না হয়।
দলের শীর্ষ সূত্রগুলো বলছে, সরকার ঘোষিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন করতে চায়—এ ব্যাপারে বিএনপির আস্থা আছে। কিন্তু কয়েকটি দল নির্বাচন পেছানোর নানা কৌশল নিচ্ছে বলে মনে করছে তারা। এসব কারণে এমন এক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, যেখানে সরকারও বাধ্য হবে নির্বাচন স্থগিত করতে—এ আশঙ্কাই বিএনপির মূল উদ্বেগ।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, সরকারের ওপর এখনো আমাদের আস্থা আছে, বিশ্বাসও আছে। তবে কিছু মহল এমন কিছু বিষয় সামনে আনছে, যেগুলোর এখন সামনে আসার কথা নয়। এতে স্বাভাবিকভাবেই একটা ধোঁয়াশা তৈরি হচ্ছে।
অন্যদিকে সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা বারবারই জোর দিয়ে বলছেন, নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন হবে। শুক্রবার মাগুরায় এক অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের বিষয়ে সব দল ঐকমত্যে আছে। জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে সুন্দর নির্বাচন হবে এবার।
তবে সরকারের এই পুনরাবৃত্ত আশ্বাস নিয়েও সন্দেহ কাটছে না বিএনপির মনে। তাদের অভিযোগ, প্রশাসনে এখনো একটি বিশেষ দলের প্রভাব রয়ে গেছে, সরকারের মধ্যে সন্দেহভাজন উপদেষ্টাও আছেন। নির্বাচন কমিশন নিয়েও দলের কিছু সুপারিশ বাস্তবায়িত হয়নি। শুধু মাঠপর্যায়ে প্রস্তুতির কাজ চলছে, কিন্তু নীতিগত পদক্ষেপে গতি নেই।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, সরকারের দিক থেকে বারবার আশ্বাস আসছে—হঠাৎ এত তাড়াহুড়া কেন? মনে হচ্ছে, নির্বাচন বিলম্বের চেষ্টা করছে কেউ কেউ, সরকারের ভেতর থেকেও ইন্ধন থাকতে পারে।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বিএনপি দ্রুত জাতীয় নির্বাচন চেয়ে আসছে। একপর্যায়ে তারা ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ভোট আয়োজনের দাবি তোলে। পরে সরকারের পক্ষ থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচনের আশ্বাস দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত গত জুনে লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠকের পর ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিকে নির্বাচনকাল হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, প্রধান উপদেষ্টা নিজেই বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন হবে। আমরাও আশা করি, নির্ধারিত সময়েই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সরকারের ওপর আমাদের আস্থা আছে।



