অক্টোবরের মধ্যেই ২০০ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করবে বিএনপি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০২৫, ১১:১০ এএম
চলতি অক্টোবর মাসের মধ্যেই আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ২০০ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করবে বিএনপি। দলীয় সূত্র জানায়, এই সময়ের মধ্যেই কে কোন আসনে লড়বেন তা জানিয়ে দেওয়া হবে—অর্থাৎ সবুজ সংকেত (গ্রিন সিগনাল) প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।
তবে বিভ্রান্তি এড়াতে এবং মাঠ পর্যায়ে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থিতা ঘোষণা দেওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য। তাদের মত, প্রকাশ্য ঘোষণা না দিলে নির্বাচনী মাঠে বিএনপি প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর তুলনায় পিছিয়ে পড়বে।
গত সোমবার (২০ অক্টোবর) রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।
তারেক রহমানের তত্ত্বাবধানে জরিপ ও প্রার্থী বাছাই
সূত্র জানায়, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের তত্ত্বাবধানে ইতোমধ্যে পাঁচটি জরিপ সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়া বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের মতামতও নেওয়া হয়েছে। এতে প্রায় দেড় শতাধিক আসনে প্রার্থিতা নিয়ে বড় কোনো জটিলতা নেই বলে মনে করছে দলীয় হাইকমান্ড। তবে শতাধিক আসনকে ‘জটিল’ হিসেবে চিহ্নিত করে সেসব এলাকায় সাংগঠনিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে সম্ভাব্য প্রার্থীদের কেন্দ্রে ডেকে মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন তারেক রহমান। এরপর থেকেই একক প্রার্থীকে সবুজ সংকেত দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তবে বিষয়টি কঠোর গোপনীয়তার মধ্যে রাখা হয়েছে।
তবে একাধিক প্রার্থী থাকায় গোপন সংকেতের বিষয়টি এলাকায় বিভ্রান্তি তৈরি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ নিয়ে নেতাদের মধ্যে আলোচনা হয় এবং অনেকেই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়ার পরামর্শ দেন।
জামায়াতকে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখছে বিএনপি
সূত্র জানায়, ‘কার্যক্রম নিষিদ্ধ’ হওয়া আওয়ামী লীগ নির্বাচনে না থাকায় জামায়াতে ইসলামীকেই বিএনপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে জামায়াত ইতোমধ্যে বেশ কিছু আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে, অথচ বিএনপি এখনো প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করেনি।
এই কারণে তৃণমূল ও সাংগঠনিক পর্যায় থেকে দ্রুততম সময়ে প্রার্থিতা ঘোষণা করার জন্য দলের হাইকমান্ডকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আজ নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক
বৈঠকে আরও আলোচনা হয় নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল তৈরির বিষয়টি নিয়ে। বিএনপি নেতারা মনে করছেন, প্রণীত তালিকার বহু কর্মকর্তা জামায়াতপন্থি হওয়ায় তা নির্বাচনের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে।
তাই আজ (বুধবার) প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ জানাবে বিএনপির প্রতিনিধি দল। দলটি চায়—লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের দিয়ে ভোটকেন্দ্র ব্যবস্থাপনা গঠন করুক।
প্রশাসনে জামায়াতীকরণের অভিযোগে উদ্বেগ
এছাড়া বৈঠকে প্রশাসনে জামায়াতীকরণ ও পক্ষপাতমূলক বদলি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন নেতারা। তাদের দাবি, কিছু উপদেষ্টা ও কর্মকর্তার কর্মকাণ্ডে সরকারের নিরপেক্ষ ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলের তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। সেখানে তারা প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা ও একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানান।



