রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সকাল ৯টা থেকে ১৭টি কেন্দ্রে শুরু হয়েছে এই ভোটগ্রহণ। যা চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে ওএমআর ব্যালট পদ্ধতিতে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পুরো ক্যাম্পাসে নির্বাচনী আমেজ বিরাজ করছে। সকাল থেকেই হলের শিক্ষার্থীরা তাদের নির্দিষ্ট ভোটকেন্দ্রে এসে জড়ো হচ্ছেন। ভোটগ্রহণের সময় হওয়ার আগেই তারা লাইনে দাঁড়িয়ে যান। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও রয়েছে কঠোর অবস্থানে। প্রতিটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে শিক্ষক, কর্মচারী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিএনসিসি, প্রক্টরিয়াল টিম দায়িত্ব পালন করছে।
দীর্ঘ ৩৫ বছর পর সংশয় ও আলোচনার অবসান ঘটিয়ে রাবি ক্যাম্পাসে এখন উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে হল দখল, গেস্টরুম সংস্কৃতি ও আধিপত্যের রাজনীতি স্থবির হয়ে পড়েছে। ফলে শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, এবারকার নির্বাচন হবে শান্তিপূর্ণ, নির্ভয় ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা আশা করছেন, এই নির্বাচনের মাধ্যমে ছাত্ররাজনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে এবং শিক্ষার্থীদের অধিকার ও কল্যাণমূলক রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত হবে।
রাকসুর ইতিহাসে এবারই সর্বাধিক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, মোট ৪৩টি পদে ৯১৮ জন প্রার্থী লড়ছেন। এর মধ্যে রাকসুর ২৩ পদে ৩০৫ জন (নারী ২৬), সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের ৫ পদে ৫৮ জন এবং ১৭টি হলে ১৫টি করে মোট ২৫৫ পদে ৫৫৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
মোট ভোটার ২৮ হাজার ৯০১ জন, এর মধ্যে ছাত্রী ১১ হাজার ৩০৫ জন এবং ছাত্র ১৭ হাজার ৫৯৬ জন। ভোটগ্রহণ হবে ক্যাম্পাসের ৯টি ভবনে স্থাপিত ১৭টি কেন্দ্রের ৯৯০টি বুথে।
রাবি ইতিহাসে এবারই প্রথম আবাসিক হলের বাইরে ভোটগ্রহণ হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত অ্যাকাডেমিক ভবনগুলোতে ভোট দেবেন। এর মধ্যে সৈয়দ ইসমাঈল হোসেন সিরাজী ভবন, মমতাজ উদ্দিন কলা ভবন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অ্যাকাডেমিক ভবন, জাবির ইবনে হাইয়ান বিজ্ঞান ভবন, জামাল নজরুল বিজ্ঞান ভবনসহ মোট ৯টি ভবনে ভোটগ্রহণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী, ভোটারদের সঙ্গে শিক্ষার্থী পরিচয়পত্র রাখতে হবে। অন্য কেন্দ্রের ভোটার কোনো অবস্থাতেই প্রবেশ করতে পারবেন না। ভোট প্রদানের আগে আঙুলে অমোচনীয় কালি দেওয়া হবে।
ভোটারদের শান্তিপূর্ণভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিতে হবে এবং কোনো প্রচার, বিশৃঙ্খলা বা ভীতি প্রদর্শন করা যাবে না। ভোটকেন্দ্রে মোবাইল, ক্যামেরা বা ইলেকট্রনিক ডিভাইস আনা নিষিদ্ধ।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার তিন বছর পর, ১৯৫৬–৫৭ মেয়াদে প্রথম ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তখন এর নাম ছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্টুডেন্টস ইউনিয়ন। ১৯৬২ সালে এর নামকরণ হয় রাকসু (Rajshahi University Central Students’ Union)।
এ পর্যন্ত রাকসুর ১৪টি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সর্বশেষ নির্বাচন হয় ১৯৯০ সালে, যেখানে ভিপি নির্বাচিত হন বর্তমান বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী। পাকিস্তান আমল থেকে মুক্তিযুদ্ধ ও পরবর্তী স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন—সব ক্ষেত্রেই রাকসু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
৩৫ বছর পর আজকের নির্বাচন তাই শুধু ভোট নয়, বরং রাবি ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক ছাত্ররাজনীতির পুনর্জাগরণের এক ঐতিহাসিক দিন।



