ছবি-সংগৃহীত
বাসার সামনে কিছু সংখ্যক ছাত্র-জনতা অবস্থান নেয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে নিজের জীবনের নিরাপত্তা চেয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমান। দুপুরে সুপ্রিম কোর্টের এনেক্স ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে নিজের নিরাপত্তা চেয়েছেন ফজলুর রহমান।
এদিকে সোমবার মধ্যরাত থেকে বিপ্লবী ছাত্র জনতার ব্যানারে সেগুনবাগিচায় কনকর্ড টাওয়ারের সামনে অবস্থান নেয় কয়েকজন আন্দোলনকারী। তাদের অবস্থান ঘিরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে দেখা গিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে ফজলুর রহমান বলেন, গতকাল আমি দল থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পেয়েছি। আমি নোটিশের উত্তর দলকে দিব। আমার দল আমার ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত নিবে তা আমি মাথা পেতে নিব। আজকে সকালে আমার বাসার সামনে কয়েকজন ছেলে মেয়ে খুব বিশ্রিভাবে স্লোগান দিয়েছে। তাঁরা আমাকে হত্যা ও গ্রেপ্তারের জন্য বিভিন্ন ধরনের কথা বলছে। তাঁরা বাসায় ঢোকার চেষ্টা করছে, এ বাসায় আমি ভাড়ায় থাকি। আমি শঙ্কায় আছি বাসার মালিক আমাকে সামনে বাসা ভাড়া দিবে কিনা।
স্বাধীনতা বিরোধী কিছু ইউটিউবার বিদেশ থেকে বিশেষ করে ফ্রান্স থেকে দুজন ইউটিউবার আমাকে হত্যা করার জন্য অর্ডার দিয়েছে, তাঁরা বলছে আমার উপর মব প্রযোজ্য। এরা সবাই জামায়াতের লোক। আমি মৃত্যুকে ভয় পাই না। কিন্তু অপমৃত্যু আমার প্রাপ্য না। কারণ আমি এদেশের জন্য যুদ্ধ করেছি। গণমাধ্যমের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমার বেঁচে থাকার অধিকার আছে তা যেন নিশ্চিত হয় সে জন্য আপনারা দয়া করে দায়িত্ব পালন করুন।
তিনি আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে বলেন, যদি আমার কোন কথায় তোমাদের মনে হয় আমি দেশের বিরুদ্ধে কথা বলছি তাহলে আমার বিরুদ্ধে মামলা কর, গ্রেপ্তার কর। কিন্তু আমাকে হত্যার জন্য আমার বাসার সামনে মব চলতে পারে- কিনা আমি বাংলাদেশের মানুষের কাছে জানতে চাই।
এ পরিস্থিতিতে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করবেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপি নেতা ফজলুর রহমান বলেন, জিডি করব না, মাইরা ফেললেও জিডি-টিডি কিছুই করব না।
শোকজের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কোনো যোগসূত্র খুঁজে পাচ্ছেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে ফজলুর রহমান বলেন, শোকজের সঙ্গে লিঙ্ক খুঁজে পাচ্ছি, এটি এখনো বলব না। তবে তারা আগে থেকে অনেক মানুষের-আমি তো ফজলুর রহমান, সামান্য মানুষ;কত মহান মানুষের গালে তারা জুতা মারছে।
আমার কথা হলো জুতা মারে, কথা বলে, সেটা তো বলবেই। তাদের ব্যাপারে মানুষ বিচার করবে। কিন্তু আমার বাসার সামনে গিয়া আমাকে হত্যা করার জন্য বা আমার মৌলিক অধিকারকে থামিয়ে দেওয়ার জন্য; কথাটা জাতির সামনে জানিয়ে গেলাম। তারা আমাকে জুতা মারবে না মিছিল করবে,এটা করুক গিয়ে। প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে কিছু বলে থাকলে তারা গিয়া মামলা করুক আমার বিরুদ্ধে।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে ফজলুর রহমান বলেন, ‘আমার জীবনের নিরাপত্তার ব্যাপার বলে গেলাম। আমার এ দেশে বাঁচার অধিকার আছে। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। এখন আমার বাসার সামনে গিয়ে যেগুলো হচ্ছে, আপনাদের মাধ্যমে জাতিকে, দেশকে এবং নিরাপত্তা বাহিনীকে জানিয়ে গেলাম।’
এদিকে সরজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকে রাস্তার মাঝে ব্যানার বিছিয়ে বসে থাকেন ৮-১০ বিক্ষোভকারী। এ সময় তাঁরা ফজলুর রহমানকে গ্রেপ্তারের দাবিতে নানা স্লোগান দিতে থাকেন। আন্দোলনকারীরা অবস্থান নেয়ার কারণে দুদক কার্যালয়ের সামনে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুপুর সোয়া ১টার দিকে ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মাসুদ আলম তাদেরকে রাস্তা ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ জানালে তাঁরা রাস্তা ছেড়ে দিয়ে দুদকের সমানের জায়গায় অবস্থান নেয়। তাঁদের অবস্থান ঘিরে সতর্ক অবস্থানে থাকে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
বিএনপি চেয়ারপারসনের এই উপদেষ্টা ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট ছাত্র-জনতার তুমুল আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতন নিয়ে সম্প্রতি ভিন্ন বক্তব্য দেন। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের জন্য তিনি জামায়াতে ইসলামী ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলোকে দায়ী করে বিভিন্ন জায়গায় বক্তব্য দিচ্ছিলেন। সম্প্রতি তিনি টিভি আলোচনা অনুষ্ঠানে বলেন, ৫ আগস্টের আন্দোলন পরিচালনায় সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। এই সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে দেশের ‘রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করার জন্য ষড়যন্ত্র’ করে আসছে।
ডিএমপির রমনা জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার মাসুদ আলম বলেন, বিএনপি নেতা ফজলুর রহমানের বাসার সামনে ৮-১০ জন ব্যক্তি অবস্থান নিয়েছেন। তাঁরা ফজলুর রহমানকে গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছেন। প্রথমে তাঁরা রাস্তার মাঝে অবস্থান নেয়ে পরে আমরা অনুরোধ করায় তাঁরা সরে এসে দুদকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছে। পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।



