Logo
Logo
×

রাজনীতি

গত ছয় মাসে এনসিপির কেন্দ্রীয় ১০ নেতাকে শোকজ

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক :

প্রকাশ: ১০ আগস্ট ২০২৫, ১২:১১ পিএম

গত ছয় মাসে এনসিপির কেন্দ্রীয় ১০ নেতাকে শোকজ

শৃঙ্খলাভঙ্গ, নৈতিক স্খলন, বিতর্কে জড়ানোসহ বিভিন্ন ঘটনায় ১০ জন কেন্দ্রীয় নেতাকে গত ছয় মাসে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এই ১০ নেতার মধ্যে পাঁচজনই দলটির অন্যতম নীতিনির্ধারণী ফোরাম রাজনৈতিক পর্ষদের সদস্য।

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আত্মপ্রকাশ করার দুই মাসের কম সময়ের মধ্যে এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব গাজী সালাউদ্দিন তানভীরের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগে ‘তদবির ও হস্তক্ষেপ’ এবং এনসিটিবির বই ছাপার কাজে ‘কমিশনবাণিজ্যে’ জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে গত ২১ এপ্রিল তানভীরকে দল থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়। পাশাপাশি তাকে কেন স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না, তা জানাতে বলা হয়। এর পর থেকে তিনি দলে আর সক্রিয় হননি।

সর্বশেষ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বার্ষিকীতে (৫ আগস্ট) কক্সবাজার সফরের ঘটনায় এনসিপির শীর্ষ পর্যায়ের পাঁচজন নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিস (শোকজ) দেওয়া হয়। এই পাঁচ নেতার মধ্যে চারজনই দলের রাজনৈতিক পর্ষদের সদস্য। তারা হলেন মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম ও দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। কক্সবাজারের ঘটনায় দলের যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহকেও শোকজ করা হয়। তারা সবাই কারণ দর্শানো নোটিসের জবাব দিয়েছেন। এরপর এনসিপির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আর কিছু জানানো হয়নি।

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ও হাসনাত আবদুল্লাহ তাদের লিখিত জবাব ৭ আগস্ট বিকেলে ফেসবুকেও তুলে ধরেছেন। লিখিত জবাবে কারণ দর্শানোর নোটিসকে বাস্তবভিত্তিক বলে মনে করেন না নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। এ ছাড়া তিনি লিখিত জবাবে সাগরপাড়ে বসে গণঅভ্যুত্থান, গণপরিষদ ও নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধানের রূপরেখাসহ বিভিন্ন বিষয়ে গভীরভাবে ভাবতে কক্সবাজারে যাওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন

অন্যদিকে লিখিত জবাবেবিধিবহির্ভূত’ শোকজ দেওয়া এবং অতি উৎসাহী হয়ে তা গণমাধ্যমে প্রকাশ করা কতটুকু রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় হয়েছে সে প্রশ্ন তুলেছেন হাসনাত। এ ছাড়া তিনি লিখেছেন, জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠের অনুষ্ঠানে (৫ আগস্ট জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে) ঐক্যের পরিবর্তে বিভাজন, শহীদ ও আহতদের পরিবর্তে মুষ্টিমেয় গোষ্ঠীর কথা বা মতামত প্রাধান্য পাওয়ায় সেখানে উপস্থিত থাকার প্রয়োজন বোধ করেননি তিনি। যে কারণে তিনি ৫ আগস্ট ঢাকার বাইরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, যাতে পরবর্তী করণীয় নিয়ে চিন্তা করার অবকাশ পান।

গত মে মাসে সমন্বয়ক পরিচয়ে ‘মব’ (দলবদ্ধ বিশৃঙ্খলা) সৃষ্টির ঘটনায় পুলিশ তিন ব্যক্তিকে আটক করলে ধানমন্ডি থানা থেকে তাদের ছাড়িয়ে আনেন এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ। এ ঘটনায় সমালোচনার মুখে হান্নানকে (তিনিও এনসিপির রাজনৈতিক পর্ষদের সদস্য) কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়। তিনি লিখিত জবাব দেওয়ার পর গত ২৯ মে এনসিপি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, হান্নান ভুল স্বীকার করেছেন। ভবিষ্যতে এই ধরনের ভুলের পুনরাবৃত্তি হবে না বলে দৃঢ় অঙ্গীকার করেছেন। হান্নানের ওপর আরোপিত কারণ দর্শানো নোটিস প্রত্যাহার করে নিয়েছে এনসিপি।

এনসিপির রাজনৈতিক পর্ষদের সদস্যরাও নানা বিতর্কে জড়াচ্ছেন, কারণ দর্শানোর নোটিসও দিতে হচ্ছে এ বিষয়ে দলের শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, এনসিপিতে আসা অনেকেই আগে অ্যাকটিভিজমে যুক্ত ছিলেন। এর অংশ হিসেবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অতিরিক্ত সক্রিয়তাসহ কিছু কিছু বিষয় এখনো তাদের মধ্যে রয়ে গেছে। অ্যাকটিভিস্টের চরিত্র থেকে রাজনৈতিক চরিত্রে যেতে তাদের কিছুটা সময় লাগবে।’

একই বিষয়ে এনসিপির মধ্যম পর্যায়ের আট নেতার সঙ্গে কথা বলা হয়েছে তাদের মূল্যায়ন হচ্ছে, শৃঙ্খলার বিষয়ে দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের আরও কঠোর হওয়া উচিত। শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে যদি শৃঙ্খলার ঘাটতি থাকে, তা হলে দলের সব পর্যায়ে এর প্রভাব পড়ে।

এখন পর্যন্ত বিভিন্ন ঘটনায় ১০ নেতাকে ‘শোকজ’ করা হয়েছে বলে জানান এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহউদ্দিন সিফাত। তিনি বলেন, সবগুলো শোকজেরই জবাব পাওয়া গেছে। যে ঘটনায় সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলে দলের কাছে মনে হয়েছে, সেসব ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

আরও যত ‘শোকজ’

নৈতিক স্খলনের অভিযোগে গত ১৭ জুন দলের যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষারকে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছিল এনসিপি। অভিযোগের বিষয়ে লিখিত ব্যাখ্যা চাওয়ার পাশাপাশি বিষয়টি নিষ্পত্তি হওয়ার আগপর্যন্ত তাকে এনসিপির সব সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়। তুষার লিখিত ব্যাখ্যা দিলেও এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত দল থেকে চূড়ান্তভাবে কিছু জানানো হয়নি।

আমাদের চেয়ে বড় মাফিয়া নেই’—গত ৯ জুন চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় এনসিপি আয়োজিত ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে এমন বক্তব্য দেন দলের কার্যনির্বাহী সদস্য ও বেসরকারি কারা পরিদর্শক জোবাইরুল আলম। এমন বক্তব্যের জন্য তাকেও কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়। তার ক্ষেত্রে কী সিদ্ধান্ত হলো, সেটিও আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি এনসিপি।

এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব জয়নাল আবেদীনের (শিশির) বিরুদ্ধে দৈনিক জনকণ্ঠ কার্যালয়ে বিশৃঙ্খলায় জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছিল গত মে মাসে। তখন তার কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে দল থেকে চিঠি দেওয়া হয়। তাকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছিল। তবে তার জবাব এনসিপি কীভাবে নিয়েছে, সে বিষয়ে দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আর কিছু জানানো হয়নি।

দলের এক নেতাকে মারধরের ঘটনায় এনসিপির রাজশাহী জেলার যুগ্ম সমন্বয়কারী নাহিদুল ইসলামকে গত ২৭ জুন সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়। তাকে কেন স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে না, সে বিষয়ে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়। এ ছাড়া মাদারীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব মাসুম বিল্লাহকে কুপিয়ে জখমের ঘটনায় গত ২৫ জুন এনসিপির মাদারীপুর জেলা ও সদর উপজেলা সমন্বয় কমিটি স্থগিত করা হয়। পাশাপাশি মাদারীপুর জেলা কমিটির দুই নেতাকে সব পদ থেকে বহিষ্কারও করেছে এনসিপি।

শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগগুলো তদন্ত করে থাকে এনসিপির শৃঙ্খলা কমিটি। এই কমিটির প্রধান ও এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল-আমিন বলেন, শৃঙ্খলাভঙ্গের যেসব অভিযোগ এসেছে, সবগুলো ঘটনাতেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কারণ দর্শানো নোটিসের জবাব সন্তোষজনক ছিল। যেসব ঘটনায় জবাব সন্তোষজনক ছিল না বা অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে, সেসব ক্ষেত্রে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা (যেমন সাময়িক বহিষ্কার, কমিটি বাতিল, তিরস্কার, সতর্কতা) নেওয়া হয়েছে। কোনো কোনো ঘটনায় এখনো তদন্ত চলছে।


Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher

Major(Rtd)Humayan Kabir Ripon

Managing Editor

Email: [email protected]

অনুসরণ করুন