দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার পূর্বাভাসের পরিপ্রেক্ষিতে শোকের মাস আগস্ট উপলক্ষে আজ শনিবার রাজধানী ঢাকায় আওয়ামী লীগের উদ্যোগে শোক মিছিল স্থগিত করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
আজ বেলা ৩টায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সংলগ্ন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণ থেকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবন পর্যন্ত এই শোক মিছিল হওয়ার কথা ছিল। শোক মিছিল ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল বলেও জানিয়েছেন মহানগরের নেতারা।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সন্ধ্যার পর গণভবনে দলের নেতাদের নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আওয়ামী লীগের কর্মসূচির নিয়ে আলোচনা হয়। এই বৈঠকের পরে আওয়ামী লীগের দপ্তরের পক্ষ থেকে কর্মসূচি স্থগিতের কথা জানানো হয়। সূত্র আরও জানায়, রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত চলা এই বৈঠকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়া রাতে হঠাৎ করেই বিবৃতি পাঠান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের বলেন, আজ (শুক্রবার) দেশের বিভিন্ন স্থানে জামায়াত-শিবিরের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিতভাবে যে সন্ত্রাস ও সহিংসতা করেছে তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। জামায়াত-শিবিরের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা হবিগঞ্জে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর অতর্কিত হামলা, জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ এবং জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য আবু জাহিরের বাসভবনে হামলা করেছে। তারা খুলনায় পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলা করে পুলিশের একজন সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে।
তিনি আরও বলেন, জামায়াত-শিবিরের প্রশিক্ষিত ক্যাডাররা অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ চালিয়েছে। তাদের চিহ্নিত করে দ্রুত বিচারের আওতায় আনার জন্য আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানাই। একই সঙ্গে দেশবিরোধী এই অপশক্তির তৎপরতা রোধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার অনুরোধ জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা কর্মসূচি ঘিরে বাদ জুমা রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সতর্ক অবস্থানে ছিলেন আওয়ামী লীগ-যুবলীগ ও ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন থানা-ওয়ার্ডের নেতারা। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন অলিগলি-সড়কে সতর্ক অবস্থান নিতে দেখা গেছে দলটির নেতাকর্মীদের।
রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকার গাউছিয়া মার্কেটের সামনে লাঠিসোটা নিয়ে অবস্থান নিয়েছিলেন ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। শুক্রবার বিকালে নিউমার্কেট এলাকার গাউছিয়ার সামনে এমন চিত্র দেখা যায়। একই দিন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাইন উদ্দিন রানা ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এইচএম রেজাউল করিম রেজার নির্দেশে রাজধানীর প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন নেতাকর্মীরা। এদিন সায়েন্সল্যাব মোড়ে অবস্থান নিয়ে কয়েকশ শিক্ষার্থী বিক্ষোভ করেন। উভয়পক্ষের মাঝখানে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও বিজিবিকে মোতায়েন থাকতে দেখা গেছে।
এদিকে শুক্রবার জুমার নামাজের পর স্ব স্ব ওয়ার্ডে সতর্ক অবস্থান নিতে দেখা গেছে ঢাকা-১৩ আসনের আওয়ামী লীগ ও দলের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের। মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড আল্লাহ করিম মসজিদ, টাউন হল ছাত্রলীগের কার্যালয়, শিয়া মসজিদ ছাত্রলীগের কার্যালয়, শ্যামলী সিনেমা হল, কলেজ গেট মুক্তিযুদ্ধ টাওয়ার, আসাদ গেট গণভবন-সংলগ্ন প্রধান সড়কের সামনে আওয়ামী লীগ ও দলের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন।
এ ছাড়া রাজধানীর উত্তরায় মোড়ে মোড়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অবস্থান নিতে দেখা গেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণমিছিল কর্মসূচি প্রতিরোধে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও সমর্থকরা উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের জমজম টাওয়ারের সামনে অবস্থান নেন। এই অবস্থায় বিকালে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেন। এ সময় পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
এদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ আগস্টের সব শহীদ এবং সাম্প্রতিক সহিংসতায় নিহতদের স্মরণে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে শুক্রবার বাদ আসর সারা দেশে সব মসজিদে দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। সংসদ সদস্যরা নিজ নিজ আসনের মসজিদে দোয়া ও মোনাজাতে অংশ নেন।