Logo
Logo
×

মতামত

হার না মানা তরুণযোদ্ধা ফয়েজ, এখন বিশ্বমঞ্চে

Icon

রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি :

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৫, ০১:২৬ পিএম

হার না মানা তরুণযোদ্ধা ফয়েজ, এখন বিশ্বমঞ্চে

ছবি - সংগৃহীত

রাঙ্গামাটির এক জনশূন্য প্রান্তিক জনপথ থেকে উঠে আসা এক তরুণ, যার স্বপ্ন শুধুই নিজের জন্য নয়, পুরো একটি প্রজন্মের জন্য। আমি বলছি তরুণ নেতা ফয়েজ উদ্দিনের কথা। মাত্র ২৩ বছর বয়স। কিন্তু অভিজ্ঞতা, নেতৃত্ব ও মানবিক কর্মকাণ্ডে তিনি অনেকদূর এগিয়ে গেছেন। নিত্য নতুনত্ব তরুণদের পাশাপাশি বহু প্রতিষ্ঠিত মানুষদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অনুপ্রেরণা দিচ্ছেন এবং দিয়ে যাচ্ছেন।

এই তরুণ এখন বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে বিশ্বমঞ্চে অংশ নিচ্ছেন স্কিল টু সাকসিড (এসটুএস) গ্লোবাল ইয়ুথ সামমিট ২০২৫-এ, যা অনুষ্ঠিত হবে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায়। এই গ্লোবাল প্ল্যাটফর্মে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি তরুণরা অংশ নিচ্ছেন, যেখানে ফয়েজ কথা বলবেন বেকারত্ব, জলবায়ু পরিবর্তন, তরুণ উদ্যোক্তা তৈরি ও সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার কৌশল নিয়ে। প্যানেলিস্ট হিসেবেও থাকবেন এক্সপোর্ট লিডারশিপ অব চেঞ্জ-জাকার্তা, ইন্দোনেশিয়া।

শুরুর গল্পটা ভিন্ন রকম। পাহাড়ের কোলে এই নেতৃত্বের জন্ম। ফয়েজের জন্ম নোয়াখালী জেলায় হলেও তার শৈশব কেটেছে পাহাড়ি এলাকা রাঙ্গামাটির কাউখালীতে। সেখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মুগ্ধ করলেও কঠিন ছিল জীবনযাত্রা-বিদ্যুৎহীনতা, দূরত্ব, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার সীমাবদ্ধতা, পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ তাকে গড়ে তোলে এক মানবিক ও দৃঢ়চেতনা নেতৃত্বে।

২০১৭ সালে ফয়েজ বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির রাঙ্গামাটি যুব ইউনিটে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যুক্ত হন। প্রাথমিক কাজ ছিল প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, উদ্ধার, ত্রাণ কার্যক্রম, রক্তদান ও সচেতনতামূলক র‍্যালি। এখান থেকেই শুরু তার সামাজিক পরিবর্তনের এ অসীম পথচলা।

এরপর নেতৃত্বে উজ্জ্বল আলোকধারায় রঙিন হয়। তিনি সাধারণ ভলান্টিয়ার হিসেবে থাকতে পছন্দ করেন। কাজ করেছেন এবং করে যাচ্ছেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের কয়েকটা সুনামধন্য সংগঠনে। তন্মধ্যে লিও ক্লাব অব চট্টগ্রাম নিউ পোর্ট সিটির প্রেসিডেন্ট, লাল সবুজ সোসাইটির ন্যাশনাল ভলেন্টিয়ার কো-অর্ডিনেটর অ্যাসোসিয়েট, রেড ক্রিসেন্ট কাউখালী ইউনিটের সাবেক প্রেসিডেন্ট, আরএইচ স্টেপ কাউখালীর সাবেক সভাপতি, সেইভ দ্য চিলড্রেন ইউথ এডভাইজারি কাউন্সিলর সদস্য, ইউএনডিপি ইউথ ফোরাম কাউখালী ইউনিটের ভাইস প্রেসিডেন্ট, আই.আই.ডি. ইউথ ফর পলিসির পলিসি চ্যাম্পিয়ন ২০২২, ব্র্যাকের ‘আমরা নতুন’ নেটওয়ার্কের ‘প্রজেক্ট তরী’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা।

সমাজ বদলাতে তিনি বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প সম্পন্ন করেছেন নিজ নেতৃত্বে। প্রজেক্ট তৈরিতে কাজ করেছেন নারীর ক্ষমতায়ন, দুর্যোগ প্রস্তুতি ও অনলাইন শিক্ষা নিয়ে। তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা নিয়ে মানসিক স্বাস্থ্য ক্যাম্পেইন, কিশোরীদের পিরিয়ড সচেতনতা নিয়ে বিভিন্ন স্কুলে সম্পন্ন করেছেন সচেতনতা ক্যাম্পেইন, বন্যার ভয়াবহ ভয়ালে উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতায় সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন, যুব নীতি প্রস্তাবে নীতিনির্ধারণে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছিলেন।

ফয়েজ উদ্দিনকে ঘিরে পরিবার ও শিক্ষকের অনুপ্রেরণা তাকে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দিয়েছে। তার বড় ভাই ইঞ্জিনিয়ার শাহাদাত হোসাইন বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই ফয়েজ শুধু নিজের কথা ভাবেনি। ও সবসময় বলত আমি কাজ করব পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য। আজ ওর সাফল্যে আমরা গর্বিত’।তার শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক হোসেন তালুকদার বলেন, ‘ক্লাসে যেমন মেধাবী, তেমনি ক্যাম্পাসের বাইরে একেবারে সচেতন নেতা। সে আমাদের এলাকার অনেক তরুণকে স্বেচ্ছাসেবী পথে এনেছে, যা সত্যিই আমার গর্বের বিষয়।’

বিশ্বমঞ্চে তিনি তুলে ধরবেন, ‘বাংলাদেশের তরুণদের বেকারত্ব সমস্যা ও সমাধানের উপায়, জলবায়ু পরিবর্তনের বাস্তব অভিজ্ঞতা ও অভিযোজনের কৌশল, কীভাবে কম রিসার্স থেকেও একজন তরুণ উদ্যোক্তা হয়ে উঠতে পারে।’

এই তরুণ নেতার ভবিষ্যৎ স্বপ্ন, দেশের প্রতিটি কিনারা হতে নেতৃত্ব আসুক, যেন সমাজ বদলে দেয়। একটি সমন্বিত তরুণ প্ল্যাটফর্ম যেখানে, যুবদের মানসিক ও সামাজিক উন্নয়নের প্রশিক্ষণ থাকবে, তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য অনলাইন ইনকিউবেশন সাপোর্ট থাকবে, পরিবেশ রক্ষায় স্বেচ্ছাসেবী শক্তিকে শক্তিশালী করা হবে, প্রান্তিক অঞ্চলেও নেতৃত্ব গঠনের সুযোগ তৈরি হবে।

ফয়েজ উদ্দিন বাংলাদেশের সেই তরুণদের একজন, যাদের ঘাম, বিশ্বাস আর নিরলস প্রচেষ্টায় গড়ে উঠছে মানবিক সমাজের মজবুত ভিত। তার এই বিশ্বযাত্রা দেশের প্রান্তিক ও উৎসাহী তরুণ সমাজের পক্ষে একটি অবিস্মরণীয় বিজয় ও সাফল্য। প্রান্তিকতা বাধা নয়, বরং এটি নেতৃত্বের বীজ,যা দেখিয়েছেন এই তরুণ নেতা, ফয়েজ উদ্দিন।

Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher

Major(Rtd)Humayan Kabir Ripon

Managing Editor

Email: [email protected]

অনুসরণ করুন