ফাইল ছবি
বাংলাদেশিদের জন্য সাময়িকভাবে ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। প্রায় ৫০ জন বাংলাদেশি কর্মী দেশটিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে মিছিল করার পর ভিসা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় দেশটি। তবে এটি সুনির্দিষ্টভাবে কর্মীদের জন্য নাকি সব বাংলাদেশি নাগরিকের জন্য, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য দিতে পারেননি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, সংযুক্ত আরব আমিরাতে মিছিল নিষিদ্ধ থাকলেও বাংলাদেশি কর্মীরা কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ করেছে। তাদের গ্রেপ্তার করেছে আমিরাতের পুলিশ। এমন বিশৃঙ্খল আচরণে ক্ষুব্ধ আমিরাত সরকার ভিসা বন্ধ করেছে।
তিনি আরও জানান, এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ সরকারের কাছে কিছুই জানায়নি আমিরাত। প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান ঢাকায় আমিরাতের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কথা বলেছেন। রাষ্ট্রদূত বিষয়টি সম্পর্কে কিছু জানাতে পারেননি।
জানা গেছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলির পরিপ্রেক্ষিতে গত শুক্রবার আরব আমিরাতের বিভিন্ন সড়কে বিক্ষোভ করেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। ওই বিক্ষোভের দায়ে সোমবার ৫৭ বাংলাদেশিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছে দেশটির সরকার। এর একদিন পরই বাংলাদেশিদের জন্য সাময়িকভাবে ভিসা বন্ধের ঘোষণা দিল আমিরাত। আরব আমিরাতে বিক্ষোভের দায়ে কারাদণ্ড পাওয়া ৫৭ বাংলাদেশীর মধ্যে তিনজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এছাড়া ৫৩ বাংলাদেশীর ১০ বছর করে এবং একজনের ১১ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও নির্ভরযোগ্য কয়েকটি সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে বাংলাদেশি প্রবাসীদের বিক্ষোভের পর সেখানকার কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করতে পারেন; এখান থেকে নতুন করে কর্মী গেলে সেখানে পরিস্থিতি অশান্ত হতে পারে। এ অবস্থায় সাময়িকভাবে ভিসা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে দেশটি।
আরব আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডব্লিউএএমের প্রতিবেদনে জানানো হয়, বাংলাদেশের কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে গত ১৯ জুলাই ইউএইর বিভিন্ন সড়কে নেমে আন্দোলন করে দেশটিতে কর্মরত বাংলাদেশিরা। এ সময় তারা বিক্ষোভের পাশাপাশি দাঙ্গা-হাঙ্গামায় জড়ায় বলেও অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ড দেয়া এসব বাংলাদেশির সাজার মেয়াদ শেষ হলে তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে। ইউএইতে বিদেশি শ্রমিকের উৎস দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান এখন তৃতীয়। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের আগে রয়েছে শুধু ভারত ও পাকিস্তান। আর মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশি শ্রমিকদের গন্তব্য হিসেবে ইউএইর অবস্থান দ্বিতীয়।
উপসাগরীয় অঞ্চলের জ্বালানি তেলসমৃদ্ধ দেশটিতে বিক্ষোভ, শাসক দলের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ, সমালোচনা বা কোনো বক্তৃতা দেয়ার ক্ষেত্রে আইনি বিধিনিষেধ রয়েছে। এছাড়া সামাজিক অস্থিতিশীলতা তৈরি এবং এসব কাজে উৎসাহ দেয়া এমনকি ব্যক্তিগতভাবে অথবা প্রকাশ্যে মানহানি বা অপমানজনক বক্তব্য দেয়ার ক্ষেত্রেও বড় ধরনের শাস্তির বিধান রয়েছে।
বাংলাদেশি ভিসা বন্ধ সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)।