Logo
Logo
×

জাতীয়

আদালতের রায় আসা পর্যন্ত আন্দোলনরতদের ধৈর্য ধরার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

Icon

প্রকাশ: ১৭ জুলাই ২০২৪, ০৯:৪৯ পিএম

আদালতের রায় আসা পর্যন্ত আন্দোলনরতদের ধৈর্য ধরার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

বুধবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিএমও

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের বিষয়ে ছাত্রসমাজ সর্বোচ্চ আদালত থেকে ন্যায়বিচারই পাবে, এমন বিশ্বাসের কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ পর্যন্ত ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

বুধবার (১৭ জুলাই) সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে এ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। বিভিন্ন টেলিভিশনে ভাষণটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আইনি প্রক্রিয়ায় সমাধানের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও রাস্তায় আন্দোলনে নেমে দুষ্কৃতকারীদের সংঘাতের সুযোগ করে দেবেন না। সর্বোচ্চ আদালতের রায় আসা পর্যন্ত ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করার জন্য আমি সবাইকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি। আমার বিশ্বাস, আমাদের ছাত্রসমাজ উচ্চ আদালত থেকে ন্যায়বিচারই পাবে, তাদের হতাশ হতে হবে না।’

সরকার হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপিল আদালতে শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। আদালতে শিক্ষার্থীদের কোনো বক্তব্য থাকলে তা শোনার সুযোগ আছে। আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের সুযোগ রয়েছে।

আন্দোলনরত কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে তিনি নিজে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন বলে জানান সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, সন্ত্রাসীরা যেকোনো সময়ে সংঘাতের পরিবেশ তৈরি করে তাদের ক্ষতিসাধন করতে পারে। তাই শিক্ষার্থীদের মা–বাবা, অভিভাবক ও শিক্ষকদের প্রতি আমার আবেদন থাকবে, তারা যেন তাদের সন্তানদের নিরাপত্তার বিষয়ে সজাগ থাকেন। একই সঙ্গে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিশেষভাবে নজর রাখার আহ্বান জানান তিনি।

২০১৮ সালে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথা বাতিল করা হয়েছিল জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, পরবর্তীকালে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে কোটা বহাল রাখার পক্ষে আবেদনে উচ্চ আদালত ২০১৮ সালে জারি করা সরকারের পরিপত্র বাতিল করে দেন। সরকারের পক্ষ থেকে পরিপত্র বহাল রাখার জন্য সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করা হয় এবং মহামান্য আদালত শুনানির দিন ধার্য করেন। এ সময় আবার ছাত্ররা কোটা সংস্কারের দাবি নিয়ে আন্দোলন শুরু করেন। এই আন্দোলনের শুরু থেকেই সরকার যথেষ্ট ধৈর্য ও সহনশীলতা প্রদর্শন করেছে। আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে পুলিশ সহযোগিতা করে। রাষ্ট্রপতির কাছে যখন আন্দোলনকারীরা স্মারকলিপি প্রদান করার ইচ্ছা প্রকাশ করে, সে ক্ষেত্রে তাদের সুযোগ করে দেওয়া হয় এবং নিরাপত্তারও ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

কোটা সংস্কার আন্দোলনে জড়িতদের সঙ্গে সন্ত্রাসীদের কোনো সম্পর্ক নেই বলে বিশ্বাস প্রধানমন্ত্রীর। তিনি বলেন, ‘বরং সন্ত্রাসীরা এদের মধ্যে ঢুকে সংঘাত ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। যারা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে, তাদের পরিবারের জন্য জীবনজীবিকা নির্বাহের ক্ষেত্রে যে সহযোগিতা দরকার, তা আমি করব।’

প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণের শুরুতে কারবালায় শহীদ হজরত ইমাম হোসাইন ও তার পরিবারের সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

এরপর প্রধানমন্ত্রী ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার হত্যার কথা স্মরণ করেন। এ ঘটনায়ও আরেক কারবালা সৃষ্টি হয়েছিল বলে উল্লেখ করেন তিনি। ১৯৭৫ সালে নিহত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ এবং ২ লাখ নির্যাতিতা মা-বোনের প্রতিও শ্রদ্ধা জানান তিনি।

অত্যন্ত বেদনা-ভারাক্রান্ত মন নিয়ে জাতির সামনে হাজির হওয়ার কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার সরকারের নানা অর্জন তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ১৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে সরকার সক্ষম হয়েছে। শিক্ষা-দীক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ব্যবহার এবং মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষার ব্যবস্থা করে জনগণকে উন্নত জীবন দেওয়ার যাত্রা করেছে তার সরকার।

অনেক সাফল্য ও অর্জন হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ সময় বাংলাদেশকে বিশ্বদরবারে একটা মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছি। তারপরও আমাদের আরও অনেক দূর যেতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ যখন একটু স্বস্তি-শান্তিতে ফেরে, তখন মাঝেমধ্যে এমন কোনো ঘটনা ঘটে, যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক।’

ভাষণের একেবারে শেষের দিকে আবারও কোটা সংস্কার আন্দোলনে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় যারা নিহত হয়েছেন, তাদের জন্য গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান তিনি।

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন