দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ঢাকায় আসছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৩২ পিএম
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব আমনা বালুচ
দীর্ঘ ১৫ বছর পর পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে বসতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। এ উপলক্ষে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব আমনা বালুচ বুধবার (১৬ এপ্রিল) ঢাকায় পৌঁছাবেন। তার নেতৃত্বে ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য ‘ফরেন অফিস কনসালটেশনস’ (এফওসি) বৈঠকে আলোচনা হবে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সার্বিক বিষয় নিয়ে।
বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ১৭ এপ্রিল এই উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন। সফরের অংশ হিসেবে আমনা বালুচ বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এফওসি বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সব দিক নিয়ে আলোচনা হবে। আলোচনায় গুরুত্ব পাবে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, আকাশপথে সংযোগ, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, কৃষি, শিক্ষা, মৎস্য, সংস্কৃতি এবং ক্রীড়াক্ষেত্র। এছাড়াও সার্ক, ওআইসি ও ডি-৮-এর মতো বহুপাক্ষিক প্ল্যাটফর্মে পারস্পরিক সহযোগিতা নিয়েও আলোচনা হবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি হবে বাংলাদেশ-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ইতিহাসে ৬ষ্ঠ পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক। সর্বশেষ এ ধরনের বৈঠক হয়েছিল ২০১০ সালে, ইসলামাবাদে। অর্থনৈতিক কমিশনের শেষ বৈঠক হয়েছিল ২০০৫ সালে। এবার সেই স্থবিরতা কাটিয়ে ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক আলোচনা এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে অগ্রগতি হতে পারে।
ঢাকার কূটনৈতিক মহল মনে করছে, পাকিস্তান এবার সম্পর্কের উন্নয়নে একটি যৌথ কমিশন পুনরায় চালু করার প্রস্তাব দিতে পারে। অন্যদিকে, বাংলাদেশ পক্ষ থেকে সাংস্কৃতিক বিনিময় প্রসারে একটি বিশেষ কর্মসূচির প্রস্তাব তোলা হতে পারে।
তবে ঢাকার দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত স্পষ্ট—সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ইচ্ছা থাকলেও ১৯৭১ সালের গণহত্যা ও অন্যান্য অমীমাংসিত বিষয় উপেক্ষা করে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। বাংলাদেশ চায়, পাকিস্তান আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাইবে, যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ প্রদান করবে, আটকে থাকা পাকিস্তানিদের ফিরিয়ে নেবে, এবং যুদ্ধের সময় বাংলাদেশের প্রাপ্য সম্পদের হিস্যা বুঝিয়ে দেবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, “আমরা চাই এ সকল বিষয় মীমাংসিত হোক। আলোচনার টেবিলে বারবার এই বিষয়গুলো উঠে আসে। পাকিস্তান যদি সত্যিকার অর্থে সম্পর্ক উন্নয়নে আগ্রহী হয়, তাহলে তাদের এগিয়ে আসতে হবে। ৫৪ বছর পেরিয়ে গেছে, এখনও সমস্যাগুলো রয়েই গেছে। আলোচনা থেকেই বোঝা যাবে তারা আসলে কী চায়।”
তিনি আরও বলেন, “ক্ষমা চাওয়ার প্রসঙ্গে তাদের মধ্যে দ্বিধা আছে, সেটা স্পষ্ট। কিন্তু চুপচাপ বসে থাকলে তো সমাধান আসবে না। এগিয়ে আসলে হয়ত একটি স্থায়ী সমাধান সম্ভব।”
এই সফর ও বৈঠক বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পুনরুজ্জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে—যদিও তার ভিত্তি হবে ইতিহাসের নিরিখে বিবেচনার ওপর।



