Logo
Logo
×

জাতীয়

কোটাবিরোধী আন্দোলন

বিক্ষোভে উত্তাল শিক্ষাঙ্গন, আজ নতুন কর্মসূচি

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২৪, ১০:১৮ এএম

বিক্ষোভে উত্তাল শিক্ষাঙ্গন, আজ নতুন কর্মসূচি

শুক্রবার শাহবাগে সমাবেশে বক্তব্য দেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থী। ছবি : সংগৃহীত

সরকারি চাকরিতে কোটা বৈষম্য নিরসনের এক দফা দাবি ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশের ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রায় এক ঘণ্টা রাজধানীর শাহবাগ অবরুদ্ধ রেখে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন। আজ শনিবার সব ক্যাম্পাস ও জেলাপর্যায়ে প্রতিনিধি বৈঠক শেষে সন্ধ্যা ৬টায় নতুন কর্মসূচি দেবেন বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। শাহবাগ ছাড়াও রাজশাহীতে রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া দেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে এই দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন তারা। 

আজ সারা দেশে প্রতিনিধি বৈঠক, সন্ধ্যায় নতুন কর্মসূচি ঘোষণা

শাহবাগে এক ঘণ্টা অবস্থানকালে গতকাল সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিট নাগাদ নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে শাহবাগ ছাড়েন আন্দোলনকারীরা। নতুন কর্মসূচি ঘোষণাকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু বকর মজুমদার বলেন, আগামীকাল (আজ) শনিবার সারা দেশের সব ক্যাম্পাসে প্রতীকী বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এরপর সন্ধ্যা ৬টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। 

এ সময় তিনি আরও বলেন, গত বৃহস্পতিবার আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ হমলা করেছে। এরপর থেকে কোথাও আমাদের কারও ওপর হামলা হলে আমরা সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তুলব। একই সঙ্গে আমরা সাংবাদিক ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আমাদের আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে প্রশাসন সাংবাদিকদের ওপর হামলা করেছে। 

গতকাল রাজধানীর চিত্র 

পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিকাল ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে মিছিল বের করে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ঘুরে ৫টা ২০ মিনিটের দিকে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন তারা। এ সময় বিপুলসংখ্যক পুলিশ শাহবাগের মেট্রোরেল স্টেশনের নিচে ব্যারিকেড দিয়ে অবস্থান করলেও আন্দোলনকারীদের বাধা দেয়নি। অবশ্য গত দুই দিন থেকেই এই আন্দোলন নিয়ে হার্ডলাইনে ছিল সরকার। 

গতকাল শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, আদালতের আদেশ মেনে চলার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গের কোনো কার্যক্রম কেউ যদি করে, তবে সেটি বরদাশত করা হবে না। তিনি আরও বলেন, সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি নিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের ওপর এক মাসের স্থিতাবস্থা দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বিষয়টি আদালতের। আদালতের প্রতি সবার আস্থা রাখা ও শ্রদ্ধা-সম্মান থাকা উচিত। আদালতের আদেশ মেনে চলার জন্য বাধ্যবাধকতা রয়েছে। 

অন্যদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক সভায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও জানমাল রক্ষা করা এবং জনগণের সুবিধা-অসুবিধা দেখা সরকারের দায়িত্ব উল্লেখ করে বলেছেন, এসব যদি কেউ বাধাগ্রস্ত করে, সরকারকে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে হবে। কোটা আন্দোলন নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের আদেশ মেনে শিক্ষার্থীরা ঘরে ফিরে যাবেন বলে আশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, তারা জনগণের অসুবিধা হোক, জনগণ দুঃখ-কষ্ট ভোগ করুক, এমন কর্মসূচি দেবে না। আমার মনে হয়, তারা এসব পরিহার করে ঘরে ফিরে যাবে।

এদিকে গতকাল সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় মিছিলসহকারে শাহবাগের কর্মসূচিতে দেন ঢাকা কলেজের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরাও। এই দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়াও আশপাশের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও এসেছিলেন শাহবাগে। প্রায় এক ঘণ্টা শাহবাগ মোড় অবরুদ্ধ করে রাখায় সড়কে দেখা দেয় তীব্র যানজট। তবে অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি সেবার গাড়িগুলো চলাচলের পথ খোলা রাখেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় কোটা ও গত বৃহস্পতিবার ঢাকা, কুমিল্লা, চট্টগ্রামসহ সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচিতে আন্দোলরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে নানা স্লোগান ও গানে মুখরিত ছিল শাহবাগ। 

সারা দেশের নানা স্থানে বিক্ষোভ-অবরোধ

গত বৃহস্পতিবার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করতে গিয়ে পুলিশি হামলার শিকার হন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এই হামলায় দৈনিক প্রতিদিনের বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাভেদ রায়হানসহ তিন সাংবাদিক ও অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। এই পুলিশি হামলার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে গতকাল বিক্ষোভে উত্তাল ছিল বিশ্ববিদ্যালয়টি। বিকাল সাড়ে ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বাংলো হয়ে আনসার ক্যাম্প ঘুরে গোল চত্বরে এসে শেষ হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা জাতীয় সংগীত গেয়ে এবং পুলিশি হামলার শিকার আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে এক মিনিট নীরবতা পালন করে। নীরবতা পালন শেষে শিক্ষার্থীরা আনসার ক্যাম্প মোড়কে ‘ছাত্র আন্দোলন চত্বর’ ঘোষণা করেন। স্মৃতিস্বরূপ নামফলক ও দুটি গাছ লাগান শিক্ষার্থীরা। এই হামলায় জড়িতদের বিচার চান এবং সেদিনের ঘটনায় প্রক্টরিয়াল বডির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন তারা। 

এ ছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা গতকাল শুক্রবার রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। বিকাল ৪টা থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী মেডিকেল এবং রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থীরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে জড়ো হন। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে বিকাল ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় অভ্যন্তরের স্টেশন বাজারে রেলপথ অবরোধ করেন তারা। 

এ ছাড়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের এই দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। 

সাংবাদিকদের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন 

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) সাংবাদিকদের ওপর গত বৃহস্পতিবার পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে গতকাল মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাব। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্যের পাদদেশে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাবের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক প্রতিদিনের বাংলাদেশের ক্যাম্পাস প্রতিনিধি জাভেদ রায়হানের সঞ্চালনায় ও সভাপতি দৈনিক জনকণ্ঠের ক্যাম্পাস প্রতিনিধি ইকবাল হাসানের সভাপতিত্বে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন