আগস্টের পর হিন্দুদের তুলনায় ভারতে বেশি গেছেন মুসলিমরা
যুগের চিন্তা ২৪ ডেস্ক
প্রকাশ: ০১ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:৫২ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করতে গিয়ে ধরা পড়া বাংলাদেশি নাগরিকদের মধ্যে মুসলিমদের সংখ্যা বেশি। আগের দুই বছরের তুলনায় ২০২৪ সালে অবৈধ অনুপ্রবেশের সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে।
তবে পুরো বছরের তুলনায় আগস্টের পর থেকে সেই সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়েনি। ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের দক্ষিণ বঙ্গ সীমান্ত অঞ্চলের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি বাংলা।
বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যেসব হিন্দু বাংলাদেশি নাগরিক অবৈধ উপায়ে ভারতে আসতে গিয়ে ধরা পড়েছেন, তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপরে ‘অত্যাচার’ ও ‘সহিংসতা’র কারণে দেশ ছেড়ে এসেছেন, এমনটা জানিয়েছেন ‘সামান্য কিছু মানুষ’। ভারত আর বাংলাদেশের পুরো সীমান্ত অঞ্চলে একই চিত্র বিরাজ করছে বলে জানিয়েছেন বিএসএফের একাধিক কর্মকর্তা।
বিএসএফের দক্ষিণবঙ্গ সীমান্ত অঞ্চলের সূত্রে জানা গেছে, এ বছরের আগস্ট মাস থেকে ডিসেম্বরের ২৪ তারিখ পর্যন্ত ৭১৬ জন বাংলাদেশি নাগরিক অবৈধভাবে সীমান্ত পেরোতে গিয়ে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীদের হাতে ধরা পড়েছেন। তাদের মধ্যে ৩০১ জন হিন্দু এবং ৪১৫ জন মুসলমান।
তবে, কর্মকর্তারা এটাও বলছেন যে পুরো বছরের পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে দেখা যাবে আগস্ট থেকে ডিসেম্বরের সময়কালে অনুপ্রবেশের সংখ্যায় উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন ঘটেনি।
হিন্দু এবং সব ধরনের অনুপ্রবেশকারীদের সংখ্যা সামান্যই বেড়েছে বলে জানাচ্ছে বিএসএফের সূত্রগুলো। পুরো ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত, অর্থাৎ বিএসএফের পূর্ব কমান্ডের অধীনস্থ অঞ্চলের ছবিটাও একই বলে জানা যাচ্ছে।
বিগত দুই বছরের আগস্ট থেকে ডিসেম্বর সময়কালে ধরা পড়া অনুপ্রবেশকারীদের পরিসংখ্যান থেকে জানা যাচ্ছে, ২০২৩ সালে ২০৩ জন হিন্দু এবং ৪৪৯ জন মুসলমান ধরা পড়েছিলেন দক্ষিণবঙ্গ সীমান্ত অঞ্চলে।
আবার তার আগের বছর, ২০২২ সালে আগস্ট থেকে ডিসেম্বরে ১১৪ জন হিন্দু এবং ২৯৮ জন মুসলিম অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করতে গিয়ে ধরা পড়েছিলেন।
ভারতে গত কয়েক মাস ধরে প্রচারণা চলছে যে বাংলাদেশের হিন্দুরা ‘নির্যাতন’-এর শিকার হয়ে ভারতে চলে আসতে চাইছেন। সেই প্রেক্ষাপটে অনুপ্রবেশকারীদের এরকম পরিসংখ্যান পাওয়া যাচ্ছে, যার ফলে ওই প্রচারটাই কিছুটা নস্যাৎ হয়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির গবেষক স্নিগ্ধেন্দু ভট্টাচার্য।
তিনি বলেন, দুই দেশের রাজনীতিবিদদের একাংশ তো ঢালাওভাবে বলে চলেছিলেন সেই আগস্ট মাস থেকে যে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর ব্যাপক অত্যাচার হচ্ছে। তাই দলে দলে হিন্দুরা ভারতে চলে আসছে বা আসার কথা ভাবছে।
তিনি আরো বলেন, এই প্রচারটা বিশেষত চলছে পশ্চিমবঙ্গ, আসামসহ বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা রাজ্যগুলোতে। পশ্চিমবঙ্গে ২০২৬-এর নির্বাচনকে মাথায় রেখে এই প্রচারের তীব্রতা বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু এখন বিএসএফের যে পরিসংখ্যান পাওয়া যাচ্ছে, তাতে তো সামান্য সংখ্যক হিন্দুকেই সীমান্তে ধরা পড়তে দেখা যাচ্ছে। আর মুসলমানরাও অবৈধভাবে সীমান্ত পেরতে গিয়ে যে সংখ্যায় ধরা পড়েছেন, সেটাকেও তো 'দলে দলে চলে আসছে' বলা যায় না।
তিনি বলেন, এটাও ঠিক যে অনেকে হয়ত ধরা না পড়েই অবৈধভাবে সীমান্ত পেরোতে সক্ষম হয়েছেন। সেই সংখ্যা কত আমরা জানি না, যদি আরো বেশি হয়, বিএসএফ তার দায় এড়াতে পারে না। কিন্তু ব্যাপক হিন্দু পলায়নের হিন্দুত্ববাদী আখ্যানটা তো নস্যাৎ করে দিচ্ছে এই সংখ্যা।